Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

এক দিকে কম টাকায় বেশি কাজ করতে বাধ্য করা হয়, অন্য দিকে শ্রমিক হিসাবে মর্যাদা দূরে থাক, মানুষ হিসাবে ন্যূনতম সম্মানটুকুও জোটে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০০:২৩
Share: Save:

কিসের জুজু?

‘পরিচারিকাদের ইউনিয়নে জুজু দেখছেন গৃহস্থ’ (২৩-৬) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখা। মনে পড়ছে মৃণাল সেনের ‘খারিজ’ চলচ্চিত্রটি, যেখানে নাবালক পরিচারকের শ্বাসকষ্টের সমস্যার কথা জানা সত্ত্বেও মালিক তাকে শুতে দিয়েছিলেন উনুন-জ্বলা রান্নাঘরে এবং ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছিল। অথচ পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন পরিচারককে তিনি নিজের সন্তানের মতো দেখতেন।

আমাদের রাজ্যে সংসারের কাজের জন্য মহিলারাই সাধারণত নিয়োজিত হন। এঁরা অভাবের তাড়নায় স্বামী, সন্তান, বাড়ি ছেড়ে প্রতি দিন বাড়ি বাড়ি কাজে যান এবং গৃহকর্তাদের আপাত সহানুভূতির অন্তরালে আসলে এঁদের অবস্থান কিন্তু দাসত্বেরই। যখন উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাড়িতে অর্থনৈতিক কাঠামোয় সমাজের সব চেয়ে নিচু তলার বাসিন্দারা কাজ করতে আসেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের জন্য থাকে খারাপ ব্যবস্থা। এক দিকে কম টাকায় বেশি কাজ করতে বাধ্য করা হয়, অন্য দিকে শ্রমিক হিসাবে মর্যাদা দূরে থাক, মানুষ হিসাবে ন্যূনতম সম্মানটুকুও জোটে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

অধিকাংশ বাড়িতে এখনও কাজের লোক বলে বাথরুম ব্যবহার করতে দেয় না, খেতে দেয় না জলটুকু পর্যন্ত। কোনও লিখিত চুক্তির ব্যবস্থা নেই বলে বেশির ভাগ দিনই মৌখিক চুক্তি লঙ্ঘন করেই চাপিয়ে দেওয়া হয় বাড়তি কাজ, থাকে না মাসে কোনও সুনির্দিষ্ট ছুটির ব্যবস্থাও। পরিবারের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে দিনে পাঁচ-ছ’টা বাড়িতে কাজ করেন ওঁরা, প্রত্যেক বাড়িতে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা করে টানা কাজ, মাঝখানে ন্যূনতম বিশ্রামের অবকাশ মেলে না। তার সঙ্গে সময়ে না খাওয়ার কারণে আরও পাঁচটা সমস্যা নিত্যসঙ্গী।

আমি, আপনি সকলেই ছোটবেলা থেকে ঘরে কর্মসংস্থানের জন্যে আসা শ্রমিকটিকে দাস ভাবতে শিখি। আমরা বয়োজ্যেষ্ঠদের ‘আপনি’ সম্বোধন করতে শিখি, অথচ বাড়ির কাজের মাসিকে ‘তুমি’ বা ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতেই অভ্যস্ত। বিষয়টি মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের; বয়স কোনও বিষয় নয়, না শ্রমিকের ক্ষেত্রে, না মালিকের ক্ষেত্রে। তাই আজ যদি আইন এবং সামাজিক প্রতিবাদ এবং প্রতিকূল ব্যবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পরিচারিকারা একত্রিত হয়ে পথে নামেন, গৃহস্থের জুজু দেখার কোনও কারণ থাকা উচিত নয়। গৃহকর্তা যেমন অর্থের বিনিময়ে পরিচারিকার কাছ থেকে কাজ বুঝে নেবেন, তেমনি পরিচারিকারও অধিকার থাকবে উপযুক্ত পারিশ্রমিক বুঝে নেওয়ার, আইনানুগ ভাবে কাজের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ এবং নিয়মানুযায়ী ছুটি পাওয়ার। দেশে যখন শ্রম আইন আছে তখন গৃহপরিচারিকাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হওয়াটা জরুরি এবং তার জন্য তাঁরা পথে নামবেন এটাই তো স্বাভাবিক।

অমরনাথ কর্মকার, কলকাতা-১৫০

যা চলছে

‘ফেরার চেষ্টা বৃথা তাই’ শীর্ষক নিবন্ধটির (২৯-৬) বিশ্লেষণ যথার্থ। ভর্তির মরসুমে কলেজগুলিতে শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ইউনিয়নের তোলাবাজি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে মহীরুহের আকার ধারণ করেছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর ধারাবাহিক হুঁশিয়ারি এই পরিস্থিতির রাশ টানতে ব্যর্থ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিচয় গোপন থাকবে এই প্রতিশ্রুতি-সহ টেলিফোন নম্বর দিয়ে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে, কোথাও সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন হচ্ছে, সিপিকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে হচ্ছে, শাসক দলের ছাত্রনেতাকে বিবস্ত্র হয়ে নিগৃহীত হতে হচ্ছে। বাস্তবিকই বিষ মাথায় উঠে যাওয়ায় চিকিৎসা করা দুরূহ হয়ে উঠছে।

বন্যা হলে যেমন ত্রাণ নয়ছয়ের অছিলায় এক শ্রেণির বাস্তুঘুঘু সরকারিবাবুর মন নেচে ওঠে, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরও তেমনি কলেজ ইউনিয়নের দাদারা গা-ঝাড়া দিয়ে আসরে নামে। যে ভাবে শাসক দলের বাহুবলীর অলক্ষ্যে এলাকায় একটি ইটও গাঁথা সম্ভব হয় না (স্মরণে থাকতে পারে, প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একদা অভিযোগ এসেছিল), রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকায় মনোনয়ন দাখিল করা যায় না, ভোটের লাইন থেকে বৈধ ভোটার বাড়ি ফেরত চলে আসেন, তেমনই কলেজে ভর্তির সময় যোগ্য প্রার্থীও আজ বাধ্যতামূলক নজরানা দেওয়ার পথে হাঁটতে বাধ্য।

তোলাবাজির টাকার একটি অংশ ইউনিয়নের দাদার হাত ঘুরে স্নেহধন্য ‘বড়দা’-র হাতে নিশ্চিত ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। পুলিশের সাধ্য কী এই নেটওয়ার্কে হাত দেওয়া! কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন পদ্ধতি চালু করলেও এ প্রবণতা পুরোপুরি রোধ করা যাবে বলে মনে হয় না। কায়েমি স্বার্থ ঠিক অন্য রকম ফিকির বার করে নেবে। তার চেয়ে বরং উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ‘ভর্তি-সাথি’ প্রকল্পের মাধ্যমে এককালীন অনুদান দেওয়া হোক!

রাজশেখর দাস, কলকাতা-১২২

মরূদ্যানে গরল

বাম আমলে যখন লাল সন্ত্রাসের রাজনৈতিক হানাহানি চারিদিক দাপিয়ে বেড়াত, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলতেন, পশ্চিমবঙ্গ হল মরুভূমির বুকে এক শান্তির মরূদ্যান। এখন সেই মরূদ্যানে ফলছে কেবল উন্নয়ন আর উন্নয়ন।

‘ভূগোলে ৬৫০০০, ইংরেজি ১৬০০০’ (৩০-৬), তিন দফায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য ‘সিন্ডিকেট ট্যাক্স’-এর টাকা না মেটাতে পারলে ভর্তির যোগ্যতামান থাকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীরা কলেজের গেটও পেরোতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, কোনও রকমের দাদাগিরি বা সিন্ডিকেটরাজ তিনি সহ্য করবেন না। কিন্তু কে মানছে তাঁর কথা? বরং বাবু যত বলেন পারিষদ দল তার শত গুণ বলতে যেমন তৈরি, শাসক দলের নেতা-কর্মীরাও বোধ হয় চাইছেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শত গুণ বজায় থাক এই ‘সিন্ডিকেটরাজ’। তা না হলে কলেজে কলেজে প্রকাশ্যে দাদাগিরির টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে না।

কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী টাকা নিয়ে ভর্তি করার অভিযোগ পাননি বা জানেন না বলে মতপ্রকাশ করেছেন। অথচ সংবাদপত্র ও বিভিন্ন চ্যানেলে এই নিয়ে খবর প্রচারিত হচ্ছে। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা টাকা না দিলে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সেখা নে তাঁরা কী করে অধ্যক্ষকে অভিযোগ জানাবেন? এই সংবাদ প্রচার কি ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সরাসরি অভিযোগ জানানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়? আর পরিণতির কথা ভেবে শিক্ষামন্ত্রীকে সরাসরি অভিযোগ জানাবার মতো দুঃসাহস ক’জনের আছে? পুলিশ পাঠিয়ে প্রথম দিন থেকে কি ভর্তির সুস্থ ব্যবস্থা করা যেত না? পুলিশ পাঠাতে কেন তিন দিন সময় লাগল?

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

ভালই তো

শোনা যাচ্ছে এখন অনেক ছাত্রছাত্রী ৯৬-৯৭% নম্বর পেয়েও পছন্দসই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। নম্বরের ভিত্তিতে সুযোগ মিলছে না, প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে কি হবে না টালবাহানা চলছে, তা হলে কলেজের ‘দাদা’দের পদ্ধতিটাই তো ভাল। টাকা দাও, শিক্ষা নাও। কিন্তু শিক্ষার সুযোগহীন গরিবরা কী করবে? কেন, রাজনৈতিক ‘দাদা’ হওয়ার চেষ্টা!

সায়ন কর, কলকাতা-৭৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘চিত্রাঙ্গদার মঞ্চে আত্মকথা শোনাবেন ওঁরা’ (কলকাতা, ৭-৭) শীর্ষক খবরের সঙ্গে ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হওয়ার আগে অনুশীলনে ব্যস্ত রূপান্তরকামীরা। কিন্তু ওই ছবিতে উপস্থিত সকলে রূপান্তরকামী নন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Labour housemaid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE