Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: অন্তর্জলির যাত্রাপথ

২) গঙ্গাযাত্রা করানোর আগে সেই লিখিত আবেদনে অসুস্থ মানুষটির নাম, বয়স, কোন ঘাটে বা কোন জায়গায় গঙ্গাযাত্রা করানো হবে, ইত্যাদি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। 

গঙ্গাযাত্রা: ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ ছবির একটি দৃশ্য

গঙ্গাযাত্রা: ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ ছবির একটি দৃশ্য

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

‘অন্তর্জলি যাত্রা ও লুডো বোর্ড যেখানে একাকার’ (কলকাতা, ১৫-৯) শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির সঙ্গে কিছু সংযোজন। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই অন্তর্জলি প্রথাটি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হতে থাকে। আরও একটি অমানবিক প্রথার মৃত্যুঘণ্টা বাজে। সেই অবলুপ্তির ইতিহাসটি এখানে তুলে ধরব।
১৮৬৫ সালের কোনও এক সময়, ঢাকায় এক জন বয়স্ক মানুষকে গঙ্গাযাত্রা করানো হয়। তিনি ঠিক মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন না। তাই অনেকগুলি দিন তাঁকে কাটাতে হল গঙ্গার তীরে। রাতের ঠান্ডা, দিনের গরম আর শেয়াল কুকুরের ক্ষুধার্ত লোভী চোখের সামনে। অবশেষে মৃত্যু তাঁকে এই সজ্ঞান নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিল। কিন্তু ঘটনাটি জনমানসে তুলল প্রবল আলোড়ন। সেই সময়ের স্থানীয় পত্রিকা ‘ঢাকা প্রকাশ’ এই বর্বর প্রথা নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অন্য দিকে মিশনারিরাও বলতে থাকে যে এই প্রথা আসলে এক ধরনের খুন, তারা নাম দেয়: "ghat murder"। তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার ঘটনাটি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে। ‘সতী প্রথা’ ও ‘কন্যা বিসর্জনের’ মতো প্রথা বন্ধ করার মতো এ ক্ষেত্রেও তৎপরতা দেখা দেয় সরকারি মহলে।
লেফটেনান্ট গভর্নরের নির্দেশ অনুসারে, স্যর অ্যাশলে ইডেন বিশিষ্ট বাঙালি ভদ্রলোক সত্যচরণ ঘোষাল, বাবু প্রসন্ন কুমার ঠাকুর এবং দিগম্বর মিত্রদের কাছে এই বিষয়ে তাঁদের মতামত জানতে চান। ঘটনাটি নিয়ে শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। পক্ষে ও বিপক্ষে। এক পক্ষ দাবি করে যে সরকার তৎক্ষণাৎ প্রথাটিকে বেআইনি ঘোষণা করে বন্ধ করুক। আর অন্য পক্ষ— এই প্রথার ভয়ঙ্করতম অধ্যায়গুলিকে ‘বিচ্যুতি’ আখ্যা দিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে অন্তিম নির্ণয়ের জন্য প্রাদেশিক সরকার থেকে ভারত সরকারের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে দিগম্বর মিত্রের চিঠিটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে, এই চিঠি হচ্ছে প্রথাটির সব চেয়ে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ। কোনও পক্ষ না নিয়ে প্রাচীন সংস্কারকে আঘাত না করে প্রগতির পথ দেখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে দিগম্বর মিত্রের এই মত।
সেখানে দিগম্বর মিত্র লেখেন: "As regards antarjali it is no doubt a very offensive ceremony. As a religious observance it is not enjoined by the Hindoo shastras as absolutely indispensible, nor is any penalty attached to its neglect." কিন্তু আইন করে প্রথাটি বন্ধ করার বিপক্ষে মত দিয়ে বলেন: "I do not deny that the practice is a very repulsive one, and I would hail the suppression of it as a blessing to the country. But I do not think that the time has come when it could be put down by Government interference without giving serious offence to the religious feeling of the great bulk of the Hindu community of Bengal. Such interference, while it would prove intolerant and highly vexatious, would do little in favor of humanity and civilization. The evil is one of those which should be removed by education and enlightenment, and not by the hand of law. It has already begun to die out, and if left to itself will soon disappear, while legislation on the subject is sure to give it an adventitious importance, and evoke the most serious discontent."
ভারত সরকারের তরফ থেকে প্রাদেশিক সরকারকে একটি নোট পাঠানো হয় ১৪ নভেম্বর ১৮৬৬। সেখানে বলা হয়, সনাতনপন্থী হিন্দুদের মতামত অগ্রাহ্য করে সরাসরি অন্তর্জলি প্রথাটিকে সরাসরি রদ করা সম্ভব হবে না ("inexpedient")। তবে প্রথাটির অপব্যবহার রুখতে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে।
তাই মধ্যপন্থা হিসাবে কয়েকটি আইনের কথা বলা হয়। সেগুলি ছিল: ১) কোনও বয়স্ক মানুষকে অন্তর্জলির জন্য গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়ার আগে লিখিত ভাবে নিকটবর্তী থানায় জানাতে হবে। থানায় না জানিয়ে কোনও অসুস্থ মানুষকে গঙ্গাযাত্রা করানোর জন্য দোষী লোকেদের দুই বছরের জেল ও জরিমানা করা হবে। ২) গঙ্গাযাত্রা করানোর আগে সেই লিখিত আবেদনে অসুস্থ মানুষটির নাম, বয়স, কোন ঘাটে বা কোন জায়গায় গঙ্গাযাত্রা করানো হবে, ইত্যাদি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
৩) তার সঙ্গে অসুখের বিবরণ ও সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কতটা সেই তথ্যের ও সেই তথ্যের উপর ডাক্তার বা কবিরাজের শংসাপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
এত সব করার পর, দেখা যায়, দিগম্বর মিত্র যা ভেবেছিলেন, তা-ই হল। ধীরে ধীরে প্রথাটি নিজের স্বাভাবিক গতিতেই বন্ধ হয়ে যায়।
অমিতাভ পুরকায়স্থ
কলকাতা-১২৯

অবিজ্ঞান


‘নারকেল ভেঙে বিজ্ঞান কেন্দ্রের শিলান্যাস!’ শীর্ষক সংবাদ (১৪-৯) পাঠে বিস্মিত হলেও আশ্চর্য হইনি। এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করার জন্য বড় ব্যাকুল। অবিশ্বাস ও প্রশ্ন সাধারণ্যে চরিত্রদোষ বলে নিন্দিত হয়। তাই বস্তুবাদী বিজ্ঞান ও ভাববাদী দর্শন হাত ধরাধরি করে চলতে অসুবিধা হয় না। নারকেল ফাটিয়ে মহাকাশযানের শুভারম্ভ হয়, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের আঙুলে রত্নশোভিত আংটি জ্বলজ্বল করে, তাত্ত্বিক মার্ক্সবাদীকে শনি-শীতলা থানে পুজো চড়াতে দেখা যায়।
২০১৩ সালে তিরুপতি মন্দিরে দেবমূর্তির সামনে পিএসএলভিসি ২৫ রকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ সামনে রেখে মঙ্গল অভিযানের সাফল্য কামনায় পূজাপাঠ করেছিলেন ইসরোর চেয়ারম্যান। চিকিৎসকদের সন্মেলনে গণেশের হস্তীমুখ প্লাস্টিক সার্জারির নিদর্শন বলে ঘোষণা করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি অভ্যাগতদের (তাঁদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী ছিলেন) সামনে বৈদিক উড়ানতত্ত্ব পেশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ দীননাথ বাত্রা। ময়ূরীর চোখের জলে গর্ভসঞ্চারের তত্ত্ব সামনে এসেছে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সময়ে।
পুরাণকে ইতিহাস বলে চালিয়ে দেওয়ার সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। মুক্তমনা প্রতিবাদী মানুষদের ওপর সন্ত্রাস কায়েম হচ্ছে। অর্থাৎ এক কথায়, ধর্মের স্বঘোষিত ধ্বজাধারীদের হাতে সবাইকে এক ছাঁচে ঢেলে ফেলার চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞান কংগ্রেস বা বিজ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান আর তার বাইরে থাকে কী করে!
ভিড় ঠাসা বেসরকারি বাসে পা দেওয়া মাত্র কন্ডাক্টর বলে ওঠেন, ‘‘পিছন দিকে এগিয়ে যান।’’ এক হাতে স্মার্টফোন ও বুকপকেটে আধার কার্ড রেখে আমরা হয়তো পিছন দিকেই এগিয়ে চলেছি।
সরিৎশেখর দাস
নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

গণপিটুনি


‘গণপিটুনি রুখতে সব রাজ্য কী করছে, জানতে চায় কোর্ট’
(২১-৮) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। দেশে যে পরিমাণ গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে, তা রোধ করার জন্য ফৌজদারি অাইন সংশোধন যে জরুরি, তা সত্যি। তবে ফৌজদারি আইনে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র যা প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে ভয় হয়, আইন নিষ্ফলা যাবে, পুলিশের পেট আরও মোটা হবে। (দীর্ঘ কাল পরে দেখা যায় হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট রায় দিচ্ছে যে আসামির বিরুদ্ধে দোষের প্রমাণ নেই। অর্থাৎ অন্যায় ভাবে সেই ব্যক্তিকে আটকে রেখে তাঁর প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে)।
সব দিক বিচার করে মনে হয়, গণপিটুনি বন্ধের উপায় হল, যে অঞ্চলে সেই ঘটনা ঘটছে, সেই অঞ্চলের অধিবাসীদের উপর ইংরেজ আমলের কুখ্যাত ‘পিটুনি কর’ বা punitive tax ধার্য করা। জনচেতনা বাড়াতে এ এক অব্যর্থ টোটকা। রাজনৈতিক কর্মীরাও পিটুনি কর দিতে বাধ্য হচ্ছে দেখে, তাঁদের চালকরাও নিশ্চয় নড়েচড়ে বসবেন!
রণধীরকুমার দে
কলকাতা-৩৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Antarjali Yatra Ritual Hinduism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE