Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Waste Disposal

সম্পাদক সমীপেষু: শাস্তির নিয়ম হোক

পুরসভা নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের দোহাই দিয়েছে। বেঙ্গালুরুতে কিন্তু কারও শুভবুদ্ধির অপেক্ষায় থাকেনি পুরসভা। সব মানুষ সচেতন হবে, এমন ভাবা অবাস্তব।

Image of the waste

যে কোনও বড় শহর প্রতি দিন এক বিপুল পরিমাণ আবর্জনার জন্ম দিয়ে থাকে। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:১৯
Share: Save:

যে কোনও বড় শহর প্রতি দিন এক বিপুল পরিমাণ আবর্জনার জন্ম দিয়ে থাকে। দৈনন্দিন আবর্জনার সঠিক ভাবে বিলিব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া পরিবেশবিদদের এক বড় সমস্যা। সাধারণ ভাবে আমাদের ভুক্তাবশেষ ও তরকারির খোসা ইত্যাদি পচনশীল বর্জ্যকে সহজেই একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে তার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু আজকের জীবনযাত্রায় এর সঙ্গে মিশে থাকে কিছু অজৈব বর্জ্য, যা হয়তো হাজার বছরেও জৈব পরিবেশের অঙ্গ হয় না। সুতরাং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম স্তর হল আবর্জনাকে পচনশীল ও অপচনশীল— এই দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা। দুঃখের বিষয়, এই প্রাথমিক স্তরেই পশ্চিমবঙ্গবাসী অসফল হয়ে জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে। এখন চলছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা।

পচনশীল এবং অ-পচনশীল— এই দুই ভাগে আবর্জনা ভাগ করে রাখার জন্য নীল ও সবুজ বালতি আমরা বিধাননগরবাসীরা পেয়েছি এক বছরেরও বেশি আগে। প্রথম দিকে দুই ভাগে ভাগ করে রাখতাম। পরে দেখলাম, সংগ্রাহক সব এক সঙ্গে মিশিয়ে নিচ্ছেন। এর বিপরীতে ২০১৪-১৫ সালে আমার বেঙ্গালুরুর অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছি। সেখানে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সংগ্রাহক শুধুমাত্র পচনশীল বর্জ্যই নিতেন, তাতে একটিও প্লাস্টিক ব্যাগ থাকলে বর্জ্য নিতে তিনি অস্বীকার করতেন। বলতেন, মেশিন নেবে না। সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে তিনি প্লাস্টিক ও অন্যান্য অ-পচনশীল বর্জ্য নিতেন। সেই দিন দু’জন সংগ্রাহক দু’টি গাড়ি নিয়ে আসতেন, দুই ধরনের বর্জ্যের জন্য।

সংবাদপত্রে দেখা গেল, পুরসভা নাগরিকদের সচেতনতার অভাবের দোহাই দিয়েছে। বেঙ্গালুরুতে কিন্তু কারও শুভবুদ্ধির অপেক্ষায় থাকেনি পুরসভা। এক জনগোষ্ঠীর সব মানুষ সচেতন হবে, এমন ভাবা অবাস্তব। আইন এমন হওয়া উচিত যে, মানুষ মানতে বাধ্য হয়। বর্জ্যে প্লাস্টিক থাকলে সংগ্রাহক তা নেবেন না, আর সংগ্রাহক দুই ধরনের বর্জ্য মিলিয়ে আনলে পুরসভা তাঁকে শাস্তি দেবে। এ ভাবে নিয়ম করা হলে দুই পক্ষই আইন মানতে বাধ্য থাকবে। আইন মানা হচ্ছে কি না, এটা নজরদারি করার দায়িত্ব প্রশাসকদের। পুরসভার কাউন্সিলররা প্রতি দিন সকালে এই বিষয়ে সাহায্য করবেন, কেন না প্রাথমিক ভাবে কিছু সমস্যার উদ্ভব হতেই পারে। কলকাতা বর্জ্য পৃথকীকরণে অসফল হওয়ায় জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে। এখন বোধ হয় উঠে বসার সময় হয়েছে পুরসভার।

উমা দাশগুপ্ত, কলকাতা-৯১

সাফাইকর্মী

প্রতি দিন ভোর পাঁচটার সময়ে আমি যখন হাঁটতে যাই, তখন তিনি আসেন। তবে তিনি আসেন কর্মসূত্রে। তিনি, আমাদের ওয়র্ডের কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী। গড়িয়ার ৪৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের মোড় থেকে ৬ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যত গলিঘুঁজি আছে, সব তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে। প্রতি দিন প্রায় ৬-৭ কুইন্টাল আবর্জনা ঠেলাগাড়িতে নিয়ে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। পুরসভার লোগো লাগানো কোনও জামাপ্যান্ট বা গ্লাভস বা গামবুট কোনও দিন চোখে পড়েনি। করোনার সময়ে শুধু মুখে মাস্ক দেখেছিলাম। ফুটপাতের ধারের যত দোকান, সবাই নিজের সামনেটা পরিষ্কার করে আবর্জনা রাস্তায় ফেলে দেন। কলার খোসা থেকে চায়ের ভাঁড়, আমের আঁটি থেকে ডাবের খোলা— কিছু বাকি নেই। দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর সময়ে প্রায় চার গুণ নোংরা হয়। পুজোর সময়ে প্রায় সব পুজো কিছু না কিছু পুরস্কার পায়, কিন্তু শহর পরিষ্কার রাখার জন্য কোনও দিন কোনও সাফাইওয়ালাকে পুরস্কার নিতে দেখিনি। অথচ, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টা ওয়র্ড এঁরাই পরিষ্কার রাখেন। ওখানে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৫০%। বাকি যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা সব স্বল্প সময়ের জন্য। কেউ কেউ ২০-২২ বছর ধরে ‘টেম্পোরারি’ হিসাবে কাজ করে চলেছেন। সাফাই কর্মচারীদের স্বার্থ দেখার জন্যে ১৯৯৪ সালে ন্যাশনাল কমিশন ফর সাফাই কর্মচারিজ় তৈরি হয়। তারা এঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। কিন্তু এখনও অনেককেই হাত দিয়ে ময়লা তুলতে হয়, একটা গ্লাভসও জোটে না। এটা মানবতার অপমান।

আমাদের এখানে শিক্ষিত নাগরিকদের সবার কাছে বার্তা এখনও পৌঁছয়নি যে, পচনশীল আর অ-পচনশীল আবর্জনা আলাদা জায়গায় ফেলতে হয়। এখানে রাজনৈতিক আর ব্যবসায়িক হোর্ডিং শহরের মুখ ঢেকে দেয়, কিন্তু কোথাও পরিবেশের উপরে একটা লাইনও খুঁজে পাওয়া যায় না। সমাজমাধ্যমে বা সান্ধ্য টিভির ঝগড়াতে বক্তারা মাইক ফাটিয়ে দেন, কিন্তু পরিবেশ দূষণ রুখতে আমাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে একটি বাক্যও খরচ করেন না। ‘প্রকৃতি-চুরি’ কিন্তু ‘চাকরি-চুরি’র থেকে কম অপরাধ নয়। রাস্তায় নোংরা ফেলার জন্যে পুরসভা ৫০ টাকা জরিমানা করেছিল এক সময়ে। যদিও আমি কোনও দিন নোংরা ফেলার জন্যে কাউকে জরিমানা দিতে দেখিনি। এ বার সেটা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যদি মহানগরের নাগরিকদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়, তবেই মঙ্গল।

রূপম মুখোপাধ্যায়, গড়িয়া, কলকাতা

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দ্বীপাঞ্চলে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসার অভাবে হা-হুতাশ করছেন সুন্দরবনের সাধারণ মানুষ। কুলতলির ভুবনেশ্বরী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আজ থেকে বহু বছর আগে চৌরঙ্গি মোড়ের কাছে নির্মিত হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে আমরা যখন ভুবনেশ্বরী জয়কৃষ্ণ হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম, দেখতাম গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে গরু, ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। ঘরগুলির দরজা, জানলা ভাঙা। স্থানীয়দের মুখে শুনতাম, এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, রাস্তাঘাট ভাল নয়, পানীয় জলের অভাব। তাই শহরের ডাক্তারবাবুরা জলা-জঙ্গল ভরা সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় চিকিৎসা করতে আসতে চান না। ছাত্রাবস্থায় দেখেছি, সাপের কামড়ে কার্যত বিনা চিকিৎসায় ওঝা, গুনিনের কেরামতিতে প্রচুর মানুষের অকালমৃত্যু। প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু।

কিন্তু এখন রাস্তাঘাট ভাল হয়েছে। সারা ক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। পানীয় জলের ভয়ঙ্কর সমস্যা নেই। আগের থেকে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। অথচ, গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক জন চিকিৎসক এই ব্লকের তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’দিন করে পরিষেবা দেন। এখনও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামীণ চিকিৎসকদের উপরে সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ, বিনোদপুর, ভুবনেশ্বরী, দেবীপুর, দেউলবাড়ি প্রভৃতি অঞ্চলের মানুষ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কুলতলি ব্লকের নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জামতলা, অর্থাৎ কুলতলি ব্লক অফিসের কাছে অবস্থিত। মৈপীঠ, ভুবনেশ্বরী বা বৈকুণ্ঠপুর থেকে যার দূরত্ব সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার। ফলে, অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ জামতলাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসার জন্য আসেন না। জন্মগত ভাবে কুলতলি ব্লকের বাসিন্দা হওয়ায় মানুষের দুর্দশা কাছ থেকে দেখেছি। সুচিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার অভাবে এখানকার মানুষের জীবন বিপন্ন। তাই কুলতলির সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যাতে সপ্তাহের সব দিন ডাক্তার এবং নার্স থাকেন, সেই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের প্রতি একান্ত অনুরোধ করছি। তা ছাড়া গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, উন্নত মানের আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং অপারেশনের ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয় মানুষদের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে সরকারের প্রচেষ্টায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল ফিরুক।

রতন নস্কর, সরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE