Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
Mental Stress

সম্পাদক সমীপেষু: ভাল ঘুম সতেজ মন

সরকারি বা বেসরকারি, যে কোনও ক্ষেত্রে সহকর্মীদের রূঢ় ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত হানে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, আসলে ভারতে শ্রমিক উদ্বৃত্ত হওয়ার কারণে মালিকপক্ষের মনোভাব হল, “না পারলে চলে যাও, অন্য কেউ ঠিক চলে আসবে।”

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৯
Share: Save:

রত্নাবলী রায় ‘কাজের মতো মন’ (২৮-৮) শীর্ষক প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন যে, মানসিক অসুস্থতার কারণে শ্রমের ঘাটতি হয় আর সে ঘাটতির কারণে উৎপাদনশীলতাও কম হয়। কর্মচারী বা শ্রমিকের মানসিক অসুস্থতা ও শ্রমের মধ্যে সম্পর্কের কথা আজ সরকার বা নিয়োগকারীদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, মনের অসুস্থতার কারণে যত শ্রমদিবস নষ্ট হয়, তার অর্থমূল্য বিপুল। বেসরকারি ক্ষেত্রে দেখি, পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে কর্মচারীর চরম শোষণই শেষ কথা। কর্মচারীর কাছ থেকে অতিরিক্ত কাজ আদায় করার জন্য বৃহৎ সংস্থাগুলি তাঁদের উপর নানা কৌশলে অতিরিক্ত চাপ দেয়। আট ঘণ্টা বা তারও বেশি কাজ করার পরে বাড়িতে এসেও অনবরত ফোন ও মিটিং-এর ফলে কর্মচারীদের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে। কারখানা ও অসংগঠিত ক্ষেত্রেও কর্মীদের মনোরোগের শিকার হতে হয়।

সরকারি বা বেসরকারি, যে কোনও ক্ষেত্রে সহকর্মীদের রূঢ় ব্যবহার (বিশেষ করে উচ্চপদের কর্মীদের) মানসিক স্বাস্থ্যে আঘাত হানে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, আসলে ভারতে শ্রমিক উদ্বৃত্ত হওয়ার কারণে মালিকপক্ষের মনোভাব হল, “না পারলে চলে যাও, অন্য কেউ ঠিক চলে আসবে।” কর্তৃপক্ষের কাছে এটা কম পয়সায় নতুন এক জন কর্মচারী বা শ্রমিক পাওয়ার একটা উপায়। মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য কর্মী সংগঠনগুলিকে উদ্যোগী হতে হবে। মালিকপক্ষের মধ্যে কাজের সুস্থ পরিবেশ, উচ্চমহলের চোখরাঙানি, অতিরিক্ত কাজের চাপ, কাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা, ও বিশ্রামকালে না বিরক্ত করা, এমন সব ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, সঠিক ঘুমই দেয় সতেজ মন। অনেক দেশের কর্মস্থলেই কর্মচারীদের জন্য ‘ন্যাপিং’ বা ২০-৩০ মিনিট ঘুমিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

নেতার ভয়

তূর্য বাইন তাঁর লেখা “দলের বাইরে যে ‘মানুষ’” (১০-৯) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে যথার্থই বলেছেন যে, আর জি কর কাণ্ডের পর থেকে দিনের পর দিন যে গণআন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেগুলি এতই স্বতঃস্ফূর্ত যে কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অপেক্ষা রাখছে না। বাঁধভাঙা ক্ষোভ বন্যার জলের মতো আছড়ে পড়ছে রাজপথে। সবার সব আক্ষেপ যেন মিলে গিয়েছে অভয়ার মৃত্যুজনিত ক্ষোভের সঙ্গে। শুরুটা করেছিলেন আর জি করের জুনিয়র ডাক্তাররা, রাজনীতির ছত্রছায়ার বাইরে। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাই রাজনীতিহীন ভাবেই সমাজের সব অংশের মানুষ মিলে গিয়েছেন প্রতিবাদে। যেখানেই মানুষ নিজেদের মধ্যে এতটুকু মিল পেয়েছেন, তাকে কেন্দ্র করে তাঁরা জোটবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন৷ প্রয়োজন হয়নি কোনও ব্যানারের। আর এতে যেমন শাসক দল ভয় পেয়েছে, তেমনই বেশ খানিকটা ভয় পেয়েছে ক্ষমতালোভী বিরোধী দলগুলি। তারা কিছুতেই নিজেদের ব্যানার ছেড়ে এই আন্দোলনে আসতে পারছে না। সর্বদা তাদের ভয়, এই বুঝি জনতার ভিড়ে তারা হারিয়ে গেল। তাই বিজেপি ‘ছাত্রসমাজ’-এর নামে নবান্ন অভিযানের ডাক দিলেও তাদের এক নেতা ঘোষণা করে দিলেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই মিছিলে থাকবেন। আসলে ভয়, জনতা পাছে চিনতে না পারে যে, এটা বিজেপির মিছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সেই মিছিলে সাধারণ ছাত্র নয়, দলের লোকদেরই ভিড় ছিল। পরের দিন তাই পার্টির ধর্মঘটের ডাকেও সাড়া দিল না জনগণ।

একই রকম ভয় পূর্বতন শাসক দল সিপিএম-এর মধ্যেও। আর জি কর হাসপাতালের ভিতর যখন জুনিয়র ডাক্তাররা অ-রাজনৈতিক অবস্থান চালাচ্ছেন, তখন গেটের বাইরে তারা তাদের ছাত্র-যুবদের ব্যানার লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে দিল। সাধারণ মানুষ এতে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা, ভাল চোখেই দেখলেন না। শুধু তা-ই নয়, আন্দোলনে জনতার বিপুল অংশগ্রহণ দেখে সরকার পক্ষও আন্দোলনের সমর্থনের কথা ঘোষণা করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিচ্ছে। ফলে এখন যাঁরা সত্যিই সঠিক বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের শুধু বিচার চাইলেই হবে না, ডাইনে-বাঁয়ে যাঁরা একই স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা আসলে কারা, তাঁরা সত্যিই ন্যায়বিচার চান, না কি এই আন্দোলনের বিপুল জনসমর্থনকে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে কেউ নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে, কেউ ক্ষমতার গদি পেতেই নেমেছেন, তা-ও বুঝে নিতে হবে। এই সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। না হলে শত পরিশ্রম, ত্যাগ সত্ত্বেও সাফল্য অধরা থেকে যাবে।

ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১

প্রতিনিধিত্ব

অমিতাভ পুরকায়স্থ তাঁর ‘বিরোধিতা করার গণ-অধিকার’ (৩-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন, আইনসভায় আসনসংখ্যার বিচারে শাসককে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধি ভাবা যায় না। অনেক সময়ই দেখা যায় যিনি বিজয়ী, তাঁর প্রাপ্ত ভোট তাঁর বিপক্ষে থাকা প্রার্থীদের মিলিত ভোটের থেকে অনেকটাই কম। তবু তিনি জয়ী বলে শংসাপত্র পান, কারণ তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা বেশি ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ কোনও কেন্দ্রে যদি ১০০টি ভোট পড়ে, এবং তিনটি দলের প্রার্থী যদি ৪৫, ৪০ ও ১৫টি করে ভোট পান, তা হলে ৪৫টি ভোটের প্রাপক জয়ী হবেন। যদিও তাঁকে চাইছেন না সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তাঁর সেই দল দ্বারা ঠিক করা বিবিধ নিয়ম বা আইন মেনে নিতে বাধ্য হন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর শর্ত মেনে নিয়ে চুপ থাকতে হয় জনগণকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মোট ভোট শতাংশে কংগ্রেসের থেকে বেশি পেলেও, একটি আসনও পায়নি। তার ফলে বিএসপি-কে যাঁরা ভোট দিলেন তাঁদের কথা বলার জন্য সংসদে কোনও প্রতিনিধি থাকলেন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে সকল অংশের মানুষ যদি তাঁদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদে নিজেদের কথা বলার সুযোগ না পান, তা হলে সাধারণের ক্ষোভ বাড়তেই থাকে।

এর একটা উপায় হতে পারে ভোট পাওয়ার শতাংশের নিরিখে আসনসংখ্যা নির্ধারণ। যেমন, কোনও একটি রাজ্যে বিধানসভায় যদি ২০০টি আসন থাকে, তা হলে কোনও দল ৪৫ শতাংশ ভোট পেলে, সেই দলের আসন সংখ্যা হবে ৯০টি। এ ভাবে কোনও দল ৩০ শতাংশ পেলে আসন হবে ৬০টি। এমনকি কোনও দল ১ শতাংশ ভোট পেলেও দু’জন জনপ্রতিনিধি সেই দলের থাকবেন। এ ভাবে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হলে, সংসদে ও বিধানসভায় সকল অংশের মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে বলে আমার মনে হয়। এ ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা প্রণীত আইন জনমুখী হবে বলেই আমার ধারণা।

প্রশান্ত দাস, খলিসানি, হুগলি

মূর্তির সম্মান

মহানগর, পুরসভা বা পঞ্চায়েত এলাকায় যে সব মহামানব বা সেই স্থানের বিখ্যাত মানুষের মূর্তি রয়েছে, সেগুলো ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার। শুধুমাত্র এক দিন বা দু’দিন মালা পরিয়ে বা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দায়িত্ব পালন করা উচিত নয়। নিয়ম করা উচিত যে, মাসে অন্তত দু’বার বা তার বেশি মূর্তিগুলি ও তার চার পাশ পরিষ্কার করতে হবে, প্রয়োজনে রং করতে হবে এবং অবশ্যই আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে এই স্মরণীয় ব্যক্তিদের জীবনপঞ্জি ও অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। সব দফতরেই এমন অনেক কর্মী আছেন, যাঁদের দিয়ে এই কাজ খুব ভাল ভাবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে করানো সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের দায়িত্ব ও পরিকল্পনা। কোনও মহান মানুষকে সম্মান করতে না পারি, কিন্তু অসম্মান বা অবহেলা তাঁর প্রাপ্য নয়।

স্বস্তিক দত্ত চৌধুরী, শান্তিপুর, নদিয়া

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE