Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: যাদবপুরের আন্দোলন

শুনতে পাচ্ছি ছ’টি বিভাগে নিয়ম ছিল ৫০-৫০, অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রবেশিকা পরীক্ষার সমান সমান গুরুত্ব, আর এই দুই মিলে তৈরি হয় মেধাতালিকা। প্রশ্ন করা খুব অসমীচীন হবে কি যে একটি নিয়ম শুধু মাত্র ছ’টি বিভাগে বলবৎ কেন?

যাদবপুরের আন্দোলন

যাদবপুরের আন্দোলন

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কয়েক দিন ধরে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ভর্তি-প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে উথালপাথাল চলল। আমি নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখানকার ভাল খবরে খুশি হই, এবং এখন যা চলছে, সে রকম কিছু চললে চিন্তিত হই। বেশ কিছু কথা কিছু দিন হল শুনতে পাচ্ছি, যেমন, ‘স্বাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে জয় হল’, ‘যাদবপুরের একটা আন্দোলনের ঐতিহ্য আছে’, ‘দীর্ঘ কাল যে ভর্তি প্রক্রিয়া চলে আসছে তার পরিবর্তন হবে কেন?’ ইত্যাদি। তার সঙ্গে দেখছি, ছেলেমেয়েরা অনশন করছে, কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, উপাচার্য ইস্তফা দেওয়ার চিন্তা করছেন ইত্যাদি। দেখেশুনে আর দশ জনের মতো আমিও ভাবিত। কিছু প্রশ্ন তোলা দরকার মনে হচ্ছে।

১) স্বাধিকার— বলা হচ্ছে, সরকার স্বাধিকার হরণ করতে চেয়েছিল, আন্দোলন করে তা ঠেকানো গিয়েছে। যত দূর জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল নামক বডি আছে, আর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদেরই হাতে। সেখানে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি থাকেন ঠিকই, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মানুষজন। তা হলে সিদ্ধান্তটা সরকার চাপিয়ে দিচ্ছিল— এ রকম ভাবার কারণ কী? অনেকে বলবেন, সরকারের প্রিয়পাত্রেরাই এই কাউন্সিলে যান। তা-ই যদি হয়, তা হলে বলতে হবে, তথাকথিত স্বাধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও দিনই ছিল না বা থাকবে না। এবং তা হলে এই দাবিতে আন্দোলন হওয়া দরকার— সব বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল তৈরি করে দিক ইউজিসি।

২) ছ’টি বিভাগের নিয়ম— শুনতে পাচ্ছি ছ’টি বিভাগে নিয়ম ছিল ৫০-৫০, অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রবেশিকা পরীক্ষার সমান সমান গুরুত্ব, আর এই দুই মিলে তৈরি হয় মেধাতালিকা। প্রশ্ন করা খুব অসমীচীন হবে কি যে একটি নিয়ম শুধু মাত্র ছ’টি বিভাগে বলবৎ কেন?

৩) ঐতিহ্য— এ কথাটা বেশ গোলমেলে। কোনও ব্যবস্থা বা নিয়ম যদি চলে আসে অনেক দিন ধরে, তা হলেই তাকে ‘ঐতিহ্য’-এর মর্যাদা দিতে হলে, কোনও নিয়মকেই কোনও দিন বদলানো যাবে না, সে নিয়মে যত গলদই থাকুক না কেন!

৪) উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর বনাম প্রবেশিকা পরীক্ষা— আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি প্রবেশের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়মটি ভাল, উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। যুক্তি হল: এ নিয়মে কোনও কারণে যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও একটি ছাত্রের যদি উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর আশানুরূপ না হয়, তা হলে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিভাগের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে না। কিন্তু যাদবপুরের নিয়মে এ কূল ও কূল কোনওটাই তো থাকছে না। ৫০-৫০ নিয়মে, প্রবেশিকা পরীক্ষার এই গুণ অর্ধেকটাই মার খেয়ে যাচ্ছে। তা হলে এ নিয়মের মানে কি?

আর, যাদবপুরে প্রবেশিকা পরীক্ষা পুরোটাই সেই বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই রকম একটা ব্যবস্থায় সব সময় সব পরীক্ষার্থী সুবিচার পাবেন, তা আশা করা যায় কি? প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়ম কিন্তু এটা নয়। প্রবেশিকা পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কিংবা যিনি খাতা দেখবেন উভয়ের উভয়কে চেনারই কথা নয়। তাই প্রবেশিকা যদি রাখতে হয় তা হলে: ক) সব বিভাগেই তা রাখতে হবে। খ) ৫০-৫০ নয়, পুরো গুরুত্ব দিতে হবে প্রবেশিকা পরীক্ষার ওপর। গ) পরীক্ষার ব্যাপারটা পুরো ছেড়ে দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একেবারেই যুক্ত নয় এমন কোনও সংস্থা বা বোর্ডের হাতে। আর তা যদি করা সম্ভব না হয়, তা হলে নির্ভর করতেই হবে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ওপর।

৫) যাদবপুরের আন্দোলনের ঐতিহ্য— গত পঞ্চাশ বছরে যাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তাঁরা কোনও না কোনও আন্দোলন হতে দেখেছেন, বা সামিল হয়েছেন। ছাত্র আন্দোলন তাই নতুন কোনও ঘটনা নয় এখানে। সেটা প্রশ্নও নয়। প্রশ্ন হল, ছাত্ররা কি এক বারও ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখছে, যা নিয়ে তারা আন্দোলনে নামছে তার কতটা যৌক্তিকতা আছে? গত ত্রিশ বছরে, অর্থাৎ যখন থেকে আমি যাদবপুরে ছাত্র হিসেবে ঢুকেছিলাম, দেখেছি এই তথাকথিত আন্দোলনসমূহ যাদবপুরের বদনাম ছাড়া কিছু করেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অভাব আছে। তার জন্য আন্দোলন কিন্তু দেখিনি। কোনও দিন দেখিনি, পর্যাপ্ত হস্টেল নেই কেন তার জন্য অনশন হচ্ছে। কোনও দিন দেখিনি, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রদের জন্য বাড়তি ক্লাসের দাবিতে ইসি অভিযান, বা আরও ভাল করে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ করার দাবিতে মিছিল।

শেষে বলব, ছাত্ররা নিজেদের ভালটা বুঝুক। সুস্থ মনে নিরপেক্ষ বিচারবুদ্ধি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিক। এ দেশে অসুস্থ রাজনীতির চাষের অনেক জায়গা আছে। আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তা না হলে কারও কোনও ক্ষতি হবে না।

সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-১৫০

মৃত্যুদণ্ড

কোনও অতি ভয়ানক হিংস্র হত্যাকাণ্ড বা অপরাধেও, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ভারতের মতো একটি শান্তিপ্রিয় প্রজাতান্ত্রিক দেশে কোনও মতেই কাম্য নয়। কারণ, মৃত্যুদণ্ডের বিধান শুধুমাত্র রাষ্ট্র কর্তৃক সংগঠিত আর একটি ভয়ঙ্কর অপরাধেরই জন্ম দেয়।

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

বার্নপুর, পশ্চিম বর্ধমান

ওঁরা পারছেন

পরিবেশ দূষণের জন্য সরকারি নীতি যতটা দায়ী, তার থেকে অনেক বেশি দায়ী আমাদের ব্যক্তিগত চালচলন ও পরিচ্ছন্নতাবোধ। এ বার উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে গ্রামগঞ্জের এক চিলতে পাকদণ্ডী পথে ট্রেকিং করতে গিয়ে দেখেছি, এক একটা সবুজ রং করা বাঁশের মাথায় একটা করে সবুজ রং করা ক্যানেস্তারা টিন লটকানো আছে। এই সব টিনের গায়ে অপটু হাতে হলুদ রং দিয়ে ইংরেজিতে লেখা ‘ইউজ় মি’ দেখে, উঁকি দিয়ে দেখি, সেগুলোর ভেতর হরেক পলিথিন— প্লাস্টিকের মোড়ক-সহ বর্জিত জঞ্জাল।

খোঁজ নিয়ে জানলাম, গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফ থেকে এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার ও বিনষ্টিকরণ করা হয়। আমরা শহরের পুরসভা-কর্পোরেশন এলাকায় বাস করে যে পরিষেবা ঠিকমতো পাই না, প্রত্যন্ত পর্বতপ্রদেশের অজগাঁয়ে এমন ব্যবস্থাদি দেখে ‘আমরা-ওরা’ তফাতটা বুঝতে পারি।

আবার রিম্বিকের থেকে খচ্চরের পিঠে ইট-কাঠ-বালি-সিমেন্টের বস্তা-সহ ইমারতি মাল বয়ে নিয়ে শ্রীখোলা গুরদুমের রাস্তা হয়ে সান্দাকফু যাওয়ার সময়, সেই সব খচ্চরের প্রস্রাব-পায়খানা এক মুহূর্তে পথের পাশে বসবাসকারী বাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের পরিষ্কার করতে দেখেছি দিনের পর দিন। এ জন্য কখনও খচ্চরের মালিকের সঙ্গে তাঁদের তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখিনি। এ যেন ‘‘আমার বাড়ি ও আমার বাড়ির আশেপাশের পুরোটাই আমার, তাই সেটা পরিষ্কারের দায়িত্বভার আমার ওপরই ন্যস্ত।’’ এমন মানসিকতা থাকলে স্বচ্ছ ভারত অভিযান অনায়াসে সফল হবে।

সঞ্জীব রাহা

পাডিয়া মার্কেট, নদিয়া

কাটাকাটি

শান্তভানু সেনের ‘মোক্ষম’ (৩-৭) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৬০। প্রিয়া সিনেমায় নাইট-শো দেখে লাস্ট এইট-বি বাসে যাদবপুর ফিরছি। বাসে প্রচুর ভিড়, দোতলাতেও অনেকেই দাঁড়িয়ে। গড়িয়াহাটের পর দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ঠেলেঠুলে ওপরে উঠে কন্ডাক্টরবাবু বললেন, “দেখি ভাই, একটু সামনে যেতে দিন, আমি সামনে থেকে কাটতে শুরু করি।’’ ওপরতলায় দাঁড়ানো এক যুবক ঠেলেঠুলে কন্ডাক্টরকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “যান দাদা, আপনি সামনে থেকে কাটুন, আর আমরা একে একে পিছন থেকে কাটতে থাকি।’’

প্রদীপ ভট্টাচার্য

কলকাতা-৬১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE