Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: স্মরণের মধ্য দিয়ে

বিদ্যাসাগরকে স্মরণের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদে গড়ে তুলুন সুস্থ শিক্ষার শপথ।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ইসলামপুরে ছাত্র খুনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে বিজেপি ও আরএসএস। ২৬ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষাব্রতী বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। এই দিনে বন্‌ধের মাধ্যমে প্রতিবাদ না করে, বিদ্যাসাগরকে স্মরণের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদে গড়ে তুলুন সুস্থ শিক্ষার শপথ।

নরেন্দ্রনাথ কুলে

ইমেল মারফত

মেডিক্যাল শিক্ষা

সোমা মুখোপাধ্যায় ‘একই অঙ্গে এত রোগ’ (৯-৯, ১০-৯ ও ১১-৯) শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ে নানা পর্যালোচনা করেছেন, কিন্তু অনেক বিষয় বাদ পড়েছে।

প্রথমত, ভারতে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠ্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর তত্ত্বাবধানে। বহু চিকিৎসক, শিক্ষক ও জনস্বাস্থ্যের দিকপালকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সিলেবাস, পঠনপাঠনের পদ্ধতি ও তার প্রয়োগ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সবটা তাল মিলিয়ে এই পাঠ্যক্রম গড়ে না উঠলেও, একে বাদ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের শাসক আজ এমসিআই-কে পায়ে মাড়িয়ে চলতে চাইছে, মনোনীত এনএমসি দিয়ে মেডিক্যাল শিক্ষার মানোন্নয়ন(!) করার চেষ্টা করছে। এমসিআই-এর সমস্ত নিয়ম প্রয়োগ করতে হলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো জরুরি, তার ব্যবস্থা সরকার আদৌ করছে না। মেডিক্যাল শিক্ষার মান পড়ছে; কিন্তু তার দায় ছাত্র বা শিক্ষকের নয়, সরকারের। মেডিক্যাল শিক্ষা যে হেতু দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সর্বোপরি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি, তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবনমন হলে, মেডিক্যাল শিক্ষার অবনমন হবেই।

১৯৪৬ সালেই স্যর জোসেফ ভোর ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল্যায়ন করেছিলেন। ভোর কমিটি যে ভাবে ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য থ্রি-টিয়ার সিস্টেম— প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি হেল্‌থ কেয়ারের কথা বলেছিল এবং জিডিপি’র ৫-১০% বরাদ্দ করার পরামর্শ দিয়েছিল, তা স্বাধীন ভারতে বার বার পদদলিত হয়েছে। এ দেশে শাসকরা স্বাস্থ্য ও মেডিক্যাল শিক্ষাকে দেখতে চেয়েছে এক মুনাফা লোটার কারখানা হিসাবে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ১৯৮৩, ২০০২ ও ২০১৭-তে তা-ই পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় ৫% থেকে ক্রমে ক্রমে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল শিক্ষার মানোন্নয়ন করাটা কথার কথা নয়।

মেডিক্যাল শিক্ষায় লেকচার ক্লাস, ক্লিনিক্যাল ক্লাস, প্র্যাক্টিক্যাল-এর যে শেডিউল জিএমই গাইডলাইন অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং বাস্তবে যে ক্লাস হয়, তাতে ঘণ্টা বা দিনের হিসাব মেলে, কিন্তু গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে। আকর্ষক পড়ানোর ধরনের অভাবে, ক্লাসগুলি শুধু ওভারহেড প্রোজেক্টরের স্লাইড আর স্ক্রিনের আঁকিবুঁকিতে পরিণত হয়। ইউনিভার্সিটি বা স্বাস্থ্য দফতরের টিচার্স ট্রেনিং ব্যবস্থার গলদ স্পষ্ট।

ক্লিনিক্যাল ক্লাসে কোনও রোগীকে নিয়ে পড়াশোনার সময় রোগীর বেডের চারিদিকে প্রতিটি ব্যাচে এতটাই ভিড় হয়ে যায়, কাউকে টুল বা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকের অপ্রতুলতা, প্রতিটি ব্যাচে অসম্ভব ভিড় এবং এমসিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী দুটো বেডের মাঝে অন্তত ১-১.৫ মিটার দূরত্ব রাখার নিয়ম না মানা— সব মিলিয়ে এই ক্লাস করা অত্যন্ত কষ্টকর। ডাক্তারি ছাত্ররা ধৈর্য হারান। অনেক সময় রোগীকে ছুঁতে পর্যন্ত পারেন না। ফলে আশু কর্তব্য হল আরএমও, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসরের সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ানো এবং পরিকাঠামো উন্নত করার সব রকম দায়িত্ব সরকারের গ্রহণ করা। জিএমই ১৯৯৭ রেগুলেশন অনুযায়ী, মেডিক্যাল শিক্ষার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবে রাজ্য সরকার।

হেল্‌থ কেয়ার ডেলিভারিতে দুই বিষয়ের দ্বন্দ্ব চলছে: ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বনাম এভিডেন্স বেসড মেডিসিন। আসলে এই দ্বন্দ্বটি মিলনাত্মক। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হাতে হাত ধরে এই দু’টির সঙ্গে চলার কথা। এভিডেন্স বেসড মেডিসিনে, কোনও রোগের সমস্ত ডিফারেনশিয়াল ডায়াগনসিস-এর জন্য প্রযোজ্য পরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। অনেক সময় খরচসাপেক্ষ পরীক্ষাও থাকে। কিন্তু এতে রোগকে প্রমাণ করা যায় পুরোপুরি ভাবে। আবার অনেক রোগ প্রমাণের অভাবেই ধুঁকতে থাকে। সেখানে ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে ডায়াগনসিসগুলোর তালিকা সঙ্কীর্ণ করা হয়, তার পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা তাকে নিশ্চিত করে। এটাই ঠিক ‘অ্যাপ্রোচ’। মুনাফার আশায় কর্পোরেটশ্রেণি জনগণকে এভিডেন্স বেস্ড মেডিসিনের প্রতি লেলিয়ে দিচ্ছে প্রচারের মাধ্যমে। আর ডাক্তারি পড়ুয়ারাও ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের প্রতি উন্নাসিক হয়ে উঠছে।

ডাক্তারি পড়ুয়ারা ডাক্তারি পাশ করে কম্পালসারি রোটেটিং ইন্টার্নশিপ করেন। কিন্তু সেখানেও যা করার কথা বা শেখার কথা, যেমন— সিপিআর করা, ইন্টারকস্টাল টিউব ড্রেনেজ, ভ্যাসেক্টমি, সারকামসিশন, অ্যাডভান্সড এয়ার ওয়ে ইত্যাদি, তা শেখানো হয় না। বরং লোকবলের অভাব পূরণ করতে ব্লাড টানা, চ্যানেল করা, ক্যাথেটর করার মতো বিষয়ে তাঁদের আবদ্ধ রাখা হয় এবং সস্তার শ্রম হিসাবে কাজে লাগানো হয়। ফলে তাঁরা শেখার মানসিকতা হারান। তার সঙ্গে, স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে যে ভাবে চিকিৎসা করা জরুরি তা পরিকাঠামোর অভাবে করতে না পারায় আরও ডিপ্রেস্ড হয়ে পড়েন। যেমন, শীতের রাতে এক সিওপিডি-র রোগী প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হলে, ওয়ার্ডে যা যা চিকিৎসা (নেবুলাইজ়েশন, ইঞ্জেকশন) করা সম্ভব, তা করেও বাঁচাতে পারেন না। কারণ ওয়ার্ডে বাইপ্যাপ নেই অথবা ক্রিটিক্যাল কেয়ারে বেড নেই। এই অবস্থায় কাজ করতে করতে ওঁদের গয়ংগচ্ছ মনোভাব গড়ে ওঠে।

এই যুগে স্পেশালিস্ট ডাক্তার হিসাবে গড়ে ওঠার ইঁদুর-দৌড়ে মেডিক্যাল পড়ুয়া নামতে বাধ্য, কারণ তিনি পাশ করার পর দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় কী ভাবে নিয়োজিত হবেন, তার কোনও দিশা নেই। তাই প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই এমডি/এমএস অর্থাৎ স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নামছেন। ফলে না শিখছেন ক্লিনিকস না শিখছেন পড়াশোনা। শুধু এমসিকিউ মুখস্থ করার হিড়িক চলছে। স্নাতক স্তরে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। এই সুযোগে পিজি কোচিং সেন্টারগুলো বাড়ছে। তার সঙ্গে এমবিবিএস সিট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সিটের চূড়ান্ত অসমতা— ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ডা. কবিউল হক

কলকাতা-৯৭

অভিজ্ঞতায় বলে

দীর্ঘ সময় স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজগুলি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর ব্যর্থ। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যে অধ্যাপক ডাক্তাররা আছেন, তাঁরা স্বাস্থ্য দফতরকে বিশেষ পাত্তা দেন না। কারণ, তাঁরা অনেকেই মহারথী/সেলেব্রিটি। সোমা মুখোপাধ্যায় লেখেননি, গত ১৫ বছরে কত জন অধ্যাপক ডাক্তার এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বদলি হয়ে মাঝ রাস্তায় নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিনের ডাক্তার, অর্থোপেডিক ডাক্তার আছেন, তাঁরা হঠাৎ দীর্ঘ ১০-১৫ বছর বাদে স্যাট-এ বা হাই কোর্টে মামলা করে তাঁদের ১৫ বছরের বকেয়া টাকা সরকারের ঘর থেকে আদায় করে নিয়েছেন কোনও রকম সার্ভিস না দিয়ে।

স্বাস্থ্য দফতরের উচিত প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে একটি করে ডাইরেক্টরেট তৈরি করা, যার মাথায় থাকবেন এক জন কড়া প্রশাসক। তিনি সিভিল সার্ভিস থেকেও আসতে পারেন, অথবা পুলিশ বা আর্মি থেকে। তাঁর নীচে প্রিন্সিপাল, এমএমভিপি যেমন আছেন থাকবেন।

আর ওই সব রোগী কল্যাণ সমিতি তুলে দেওয়া হোক। কারণ এর ফলে ডাক্তার-রাজনীতিক অশুভ আঁতাত তৈরি হয়। সেটা আমি অসহায় ভাবে লক্ষ করেছি, যখন একটি জেলায় জেলাশাসক ছিলাম।

দীপক রঞ্জন কর

কলকাতা-৭৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Islampur Medical Health Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE