Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: শিয়াল ও আমরা

বনদফতর বলছে ওরা শিকার করতে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু শিকার তো ওদের জন্মগত প্রবৃত্তি। স্বাভাবিক পরিবেশে একটু বিলম্বে হলেও এই প্রবৃত্তি ফিরবে। যদি এরা এখানে থাকে, প্রদীপবাবুর অনুপস্থিতিতে তো প্রায় অনাহারে মারা যাবে।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি সুন্দর বিরল খবর পড়লাম— দমদমের দিশারি মাঠের কচুবন ঝোপঝাড় থেকে বেরিয়ে এল চারটে শিয়াল। এলাকার ৬০ বছরের বৃদ্ধ প্রদীপ দে ওদের জন্য খাবার এনেছেন। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে খাদ্য জোগান দিয়ে এদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন প্রশ্ন: ওরা এখানে এ ভাবে থাকবে না জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়া হবে? এখানে এদের স্বাভাবিক খাদ্য নেই। বনদফতর বলছে ওরা শিকার করতে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু শিকার তো ওদের জন্মগত প্রবৃত্তি। স্বাভাবিক পরিবেশে একটু বিলম্বে হলেও এই প্রবৃত্তি ফিরবে। যদি এরা এখানে থাকে, প্রদীপবাবুর অনুপস্থিতিতে তো প্রায় অনাহারে মারা যাবে। অন্য দিকে এদের জঙ্গলে ছেড়ে দিলে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন থাকছে। আর এখানে থাকলে যদি প্রদীপবাবুকে কোনও এনজিও, জীববৈচিত্র পর্ষদ বা বনদফতর সহযোগিতা করে তবে এরা টিকে যেতেও পারে। সল্টলেকের বনবিতানে শিয়ালের অভয়ারণ্য গড়ার প্রস্তাব ছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ইন্দিরা ভবনে জ্যোতি বসুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল বলে মেরে ফেলা হয়েছিল এক গর্ভবতী শিয়ালকে।

প্রভুদান হালদার

চেয়ারম্যান, বাসন্তী জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা কমিটি, দ. ২৪ পরগনা

ল্যান্ড বন্ড শর্ত

আমার ‘চাষির জমি অধিগ্রহণ’ (২০-৭) চিঠিতে, নগদ টাকার পরিবর্তে ল্যান্ড বন্ড-এর বিনিময়ে জমি অধিগ্রহণ গরিব চাষির পক্ষে কী কারণে সুবিধাজনক— ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। স্বল্প পরিসরে যে আলোচনা করা যায়নি তা হল, কম শিক্ষিত দরিদ্র চাষি এই ব্যবস্থা অনুধাবন ও অনুমোদন করেন কি না। চাষির সঙ্গে আলোচনা করলে জানা যায়, ল্যান্ড বন্ড ব্যবস্থা নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পূরণ করলে অধিগ্রহণের পন্থা হিসাবে সফল হতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ়ে আলু রাখার ও সেই আলু বন্ডের মাধ্যমে বিক্রির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা থাকায়, প্রায় সমস্ত চাষি সহজে বুঝতে পারছেন, জমির বিনিময়ে ল্যান্ড বন্ড নিলে চাষ থেকে তাঁদের এত কালের নিয়মিত আয়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাঁরা ডিভিডেন্ড পাবেন আর ভবিষ্যতে প্রয়োজনের সময় ওই বন্ড সরকারকে বিক্রি করলে জমির সেই ভবিষ্যতের দাম হাতে পাবেন; বন্ড বিক্রির পরে ডিভিডেন্ড পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি তাঁদের অনেকের কাছেই লাভজনক এ কথা বুঝলেও সঙ্গত কারণেই তাঁদের জমি দিতে দ্বিধা আছে। চাষিদের বক্তব্য, ‘‘হাতে জমি পেয়ে সরকার যদি নিয়মিত ডিভিডেন্ড না দেয়? আর আমাদের প্রয়োজনের সময় বন্ড কিনতে যদি গড়িমসি করে।’’

দ্বিধা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল না করা চাষি ও তাঁর পরিবারের লোকসংখ্যা নেহাত কম নয়। এঁদের মধ্যে যেমন আছেন চাষ থেকে লাভ না পাওয়া চাষি, তেমন আছেন চাষি পরিবারের অধিকাংশ কলেজ যাওয়া ছেলেপুলে। ইদানীং বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও কৃষিঋণের সুদ বাবদ যে খরচ হয়, তা মিটিয়ে তিন-ফসলি জমির চাষির হাতেও প্রায় কিছুই থাকে না। ঋণ শোধের তাগিদে ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি করতে হয়। তখন বাজারে ওই ফসলের দাম খুবই কম। সরকারকে ন্যায্য দামে ফসল বিক্রির সুযোগও সব সময় থাকে না। তা ছাড়া চাষির কলেজশিক্ষিত ছেলে চাষি হতে চায় না। সুতরাং সতর্কতার সঙ্গে প্রকৃত কৃষকদরদি হয়ে ল্যান্ড বন্ডের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করলে, অপেক্ষাকৃত কম খরচে জমি পেতে অসুবিধা হবে না।

হুগলি জেলার মুণ্ডেশ্বরী নদীর ধারে পূর্ব কেশবপুর গ্রামের জনৈক পঞ্চাশোর্ধ্ব চাষি ল্যান্ড বন্ডের বিবরণ শোনামাত্র আমার হাত দু’টি চেপে ধরে বলেছিলেন, ‘‘দেখুন না, সরকারকে বলে যদি এই ব্যবস্থা চালু করা যায়। চাষে লাভ নেই। শুধু নেশায় চাষ করি।’’ ওই অঞ্চলে মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং তিনটি ফসলের চাষ হয়। এই ভাবে বেশ কিছু প্রান্তিক চাষি, বর্গাদার, ভূমিহীন খেত মজুরের সঙ্গে আলোচনা করে মনে হয়েছে, ল্যান্ড বন্ড ব্যবস্থা— নতুন ধরনের অথচ বিশেষ ব্যয়সাপেক্ষ নয়— নিম্নলিখিত এমন সাতটি শর্ত পূরণ করলে, অপেক্ষাকৃত সহজে শিল্পের জন্য জমি পাওয়া যাবে।

১) ডিভিডেন্ড হিসাবে চাষির চাহিদা বর্তমানে তাঁর জমি থেকে চাষের খরচ বাদ দিয়ে গড়পড়তা যে নিট লাভ তার অন্তত দেড় গুণ, যে হেতু চাষ থেকে যে লাভ তাঁর হওয়া উচিত, তা হয় না। অঞ্চলভেদে এই ব্যবস্থায় মোটামুটি ভাবে চাষির প্রাপ্য দাঁড়ায় একর পিছু ২৭ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ওই জমি কেনার চেয়ে নিশ্চয়ই বাৎসরিক ডিভিডেন্ড দিয়ে জমি নেওয়া সরকারের পক্ষে অর্থ সাশ্রয়কারী।

২) চাষি প্রথমেই সরকারের হাতে জমি তুলে দেবেন না। প্রথমে উভয় পক্ষ এক বছরের জন্য বাধ্যবাধকতাহীন এক অঙ্গীকারপত্র বা মউ (MOU) স্বাক্ষর করবেন। এই এক বছর চাষি কিন্তু চাষ চালিয়ে যাবেন। এই সময় সরকারের কাছ থেকে চাষির প্রাপ্য হবে তাঁর নিট লাভের ৫০% মাত্র। এই এক বছর ধরে চাষি দেখে নেবেন, তাঁর ঘরে সরকার নিয়মিত (ত্রৈমাসিক) টাকা পৌঁছে দিতে পারছে কি না। আরও দেখবেন, হঠাৎ প্রয়োজনে তিনি অগ্রিম টাকা তুলতে পারছেন কি না। সন্তুষ্ট হলে তবেই তিনি পাকাপাকি ভাবে জমি হস্তান্তর করবেন। পরিবর্তে তিনি নেবেন পছন্দমতো হয় এককালীন টাকা অথবা ল্যান্ড বন্ড; কিংবা আংশিক টাকা ও আংশিক ল্যান্ড বন্ড। টাকা ও বন্ডের এক অংশ নথিভুক্ত বর্গাদারের প্রাপ্য, যা কিনা চাষিদের মতে ২৫%।

৩) প্রতি এক বা দুই বছর অন্তর ওই অঞ্চলে চাষ থেকে নিট আয় কত ও জমির দাম কত, সে হিসাব কষে যথাক্রমে ডিভিডেন্ড ও বন্ডের দাম স্থির করতে হবে।

৪) ল্যান্ড বন্ডের বিনিময়ে চাষি যেন সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণ পেতে পারেন। যেমন কিসান বিকাশ পত্রের বিনিময়ে পাওয়া যায়। আর্থিক প্রয়োজনে সরকারি হারের কয়েক গুণ টাকা দিয়ে বর্তমানে গরিব চাষিকে সুদের কারবারিদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়।

৫) রাজ্যের শিল্পায়নে জমি দিয়ে সহায়তা করার জন্য চাষিকে আরও একটু বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায়, আর এ জন্য সরকারের তেমন খরচ বাড়বে না। অথচ গরিব চাষির কাছে সুবিধাটি লোভনীয়। যেমন, জমিদাতা ও তাঁর পরিবারের কারও জটিল রোগের ক্ষেত্রে, রাজ্যের নামী সরকারি হাসপাতালে (বিনা পয়সার চিকিৎসায়) বিশেষ অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা করা।

৬) ল্যান্ড বন্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সরকারের খরচ সামান্য বাড়িয়ে চাষিকে জীবনবিমার সুবিধা দেওয়া যায়। ৬০ বছর বয়স হওয়ার আগে জমিদাতা চাষির মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবারকে মাসিক দুই বা তিন হাজার টাকা দেওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা চালু থাকবে মৃত চাষির ৬০ বছর পূর্তি পর্যন্ত। এতে সরকারের খরচ তেমন বাড়বে না, কারণ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে প্রায় সত্তর বছর।

৭) উল্লিখিত সুবিধাগুলি পাওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও আনুমানিক পাঁচ-সাত শতাংশ চাষি জমি ছাড়তে চাইবেন না। এই অনিচ্ছুকদের জমির বিনিময়ে জমি দেওয়াই শ্রেয়। তাই শিল্পের জন্য এক হাজার একর জমি প্রয়োজন হলে এক হাজার একশো একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

মানসেন্দু কুণ্ডু

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ছটপুজো

‘বারো মাসে তেরো রাজনীতি’ (১১-৮) নিবন্ধে জহর সরকার একটি পুজোর কথা বাদ দিয়ে গিয়েছেন— ছটপুজো। যেটি অধুনা অঞ্চলবিশেষে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ জাঁকজমক-সহ পালিত হচ্ছে। কালীপুজোর মতন বাজিও পোড়ানো হয়, কিন্তু এ শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা বোধ হয় নেই। তার সঙ্গে মাইক ও ‘ডিজে’র শব্দদূষণ তো আছেই। এ সময় বাগবাজার থেকে প্রিন্সেপ ঘাট অবধি চক্ররেল চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গৌতম মুখোপাধ্যায়

খড়দহ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Man Pet Fox
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE