Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু:চা বাগানের শ্রমিকেরা

এমন বঞ্চনা যেখানে, অনাহার-অপুষ্টিজনিত মৃত্যু হবেই। শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হবেই। শহরের মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে চা-বাগান বেড়ানোর জায়গা। কলকাতাবাসীদের কাছে ওই মৃত্যু এবং প্রতিবাদ দুই-ই যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বর্তমান ব্যবস্থায়, ডুয়ার্স-তরাই ও দার্জিলিং অঞ্চলে চা-শ্রমিকদের দিনমজুরি ১৫৯ টাকা। টি প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট (১৯৫১) অনুযায়ী, মজুরি ছাড়াও আনুষঙ্গিক সুবিধা হিসেবে প্রত্যেকের প্রাপ্য ভর্তুকির রেশন, নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্বালানি কাঠ, বিনামূল্য আবাসন, পানীয় জলের জোগান, চিকিৎসার সুবিধা। অনূর্ধ্ব ১২ বছরের সন্তানদের জন্য প্রাইমারি স্কুলের বন্দোবস্ত। বাগানে দৈনন্দিন কাজ করার জন্য প্রত্যেকের ৭২ গজ থান কাপড় পাওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্যের বেশির ভাগ চা-বাগানে এই সব সুবিধা নেই। প্ল্যানটেশন লেবার অ্যাক্ট (১৯৫১) অধিকাংশ বাগানেই যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে, বাগিচা শ্রমিকদের রাজ্য সরকার দু’টাকা কিলো চাল দিয়ে থাকে। মালিকদের আর রেশন দিতে হয় না।

বছর পাঁচেক আগে ডুয়ার্স-তরাই-পাহাড়ের আঞ্চলিক লেবার কমিশনার দফতর থেকে, বাগিচা এলাকার ২৭৬টি চা-বাগানের ২৭৩টিতে এক সমীক্ষা চালানো হয়। ১০ মে ২০১৩-য় প্রকাশিত সমীক্ষাপত্রে পাওয়া গেল অন্তত ১০টি বঞ্চনার ছবি। ১) আড়াই লক্ষেরও বেশি শ্রমিকের মধ্যে এখনও ৯৫,৮৩৫ জন ঘর পাননি। ২) প্রায় ৩০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ৩) মাত্র ৬১টি চা বাগানে পানীয় জলের ব্যবস্থা আছে। ৪) চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে মাত্র ১০৭টি চা বাগানে। ৫) ১৭৫টি চা-বাগানে কোনও লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই। ৬) ক্যান্টিন নেই ১২৫টি বাগানে। ৭) স্কুল নেই ৪২টি চা-বাগান মহল্লায়। ৮) ১৮টি চা-বাগান শ্রমিকদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে টাকা জমা দেয়নি। ৯) ৪৬টি বাগান এক পয়সাও গ্র্যাচুইটি দেয়নি শ্রমিকদের। ১০) কোনও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখাতে বা জমা দিতে পারেনি ৮৭টি চা-বাগান। গত পাঁচ বছরে অবস্থার গুণগত পরিবর্তন হয়নি। এখন প্রায় সব বাগানেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১০০ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া।

এমন বঞ্চনা যেখানে, অনাহার-অপুষ্টিজনিত মৃত্যু হবেই। শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হবেই। শহরের মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে চা-বাগান বেড়ানোর জায়গা। কলকাতাবাসীদের কাছে ওই মৃত্যু এবং প্রতিবাদ দুই-ই যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। চুপচাপ অনাহারে মারা যাওয়া অচেতন, নামগোত্রহীন জনজাতির সদস্যদের জন্য আমাদের সহানুভূতি কতটাই বা জেগে ওঠে? কিন্তু, দিনের পর দিন অনাহারে চোখের সামনে বৌ-বাচ্চাকে মারা যেতে দেখে, নারীপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে পরিবারের মেয়েদের নিখোঁজ হতে দেখে (ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট বলছে ২০১০-এ রেড ব্যাঙ্ক গ্রুপের এক চা-বাগান থেকে নিখোঁজ ৩০০-র বেশি নারী), তারা খেপে উঠে যদি কোনও বাগান ম্যানেজারকে পিটিয়ে মেরে ফেলে, তখন আমাদের যাবতীয় বিবেক জেগে উঠে ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রতিবাদ করতে। হিংসা মানে কি শুধু দৈহিক নিগ্রহ, খুন-জখম? লাগাতার বঞ্চনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ছিন্নভিন্ন করা, অনাহারে মেরে ফেলা হিংসা নয়? অথচ কোনও সরকারই চা বাগানে অনাহার-মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করে না।

অপুষ্টি অনাহার দুর্ভিক্ষের কবলে রয়েছে কি কোনও জনগোষ্ঠী? বোঝার জন্য মান্য সূচক হল বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)। এই সংখ্যা যদি ১৮.৫-এর নীচে হয়, বুঝতে হবে তার ওজন স্বাভাবিকের কম— সে অনাহার, অপুষ্টিতে আছে। কোনও জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের বিএমআই ১৮.৫-এর তলায় থাকলে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজ়েশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি। এই তত্ত্বের নির্ভরে প্রথম সমীক্ষা হয়েছিল জুলাই, ২০১৪-তে রায়পুর চা বাগানে। ২০১২ সালে রায়পুর বন্ধ। সমীক্ষকরা ২০১৪ সালে যাওয়ার আগে মারা গিয়েছিলেন ছ’জন চা-শ্রমিক। সরকারি মহল থেকে বলা হয়েছিল, কেউ অনাহারে মারা যাননি। এটা ঠিক, দুর্ভিক্ষের মতো রাস্তায় রাস্তায় ‘ফ্যান দাও, ভাত দাও’ অবস্থা হয়নি। কিন্তু ক্রমাগত অপুষ্টি ও অনাহার নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরবঙ্গের রেড ব্যাঙ্ক, বান্দাপানি, ডায়না, কাঁঠালগুড়ি, ঢেকলাপাড়া এবং রায়পুর চা-বাগান থেকে মৃত্যুর খবর আসছিল। একটি সমীক্ষায় দেখা গেল, যা ভাবা গিয়েছিল, বাস্তব অবস্থা তার থেকে অনেক খারাপ। খাবার নেই, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কেউ কেউ নদীর বুকে পাথর ভেঙে খুবই সামান্য রোজগার করেন। তা দিয়ে খাওয়া চলে না। অতএব অপুষ্টি, অনাহার। দীর্ঘ কাল বাগান বন্ধ থাকলে এ পরিস্থিতি অনিবার্য।

চা-বাগানকে বলা হয় ‘এনক্লেভড ইকনমি’। প্রায় ১৫০ বছর আগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে শত শত মানুষকে ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করে বাগিচা শিল্পে নিয়োগ করা হয়। তার পর থেকে এই শ্রমিকদের জীবন সম্পূর্ণ বাগিচাকেন্দ্রিক। বাগিচা অর্থনীতির ভেতরেই এঁদের জীবন-মৃত্যু। এনক্লেভড ইকনমিতে জীবিকার কোনও বিকল্প সম্ভাবনাও থাকে না। সঙ্গত কারণে চা-শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার সম্পূর্ণ দায় মালিকপক্ষের। আমাদের দেশে একমাত্র বাগিচা শ্রমিকদেরই নিজস্ব বাড়িঘর বা বাস্তুজমির কোনও অধিকার নেই। কাজ না থাকলে গৃহহীন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

রাষ্ট্র যদি শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার সাহায্য না করে তা হলে শ্রমিকদের সামনে ধর্মঘট ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা থাকে কি?

অশোক ঘোষ

সাধারণ সম্পাদক, ইউটিইউসি

হল না

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত দফতরের প্রধান সচিবের ২৮-০৩-২০১৩ তারিখের ১৩০১ নম্বর নোটিফিকেশন অনুসারে ‘নানান ভাতা বৃদ্ধি থেকে পদোন্নতি, ভোটের মুখে সুবিধা ঘোষণায় প্রশ্ন’ (২৯-৩) শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল। ফলে অন্যদের সঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মচারীদের মনে বেশ খুশির সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু আজ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে আরও একটি পঞ্চায়েত নির্বাচন (২০১৮) শেষ হয়ে গেলেও, উক্ত বিভিন্ন পদে পদোন্নতির নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও প্রকার ‘সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি’ (রিক্রুটমেন্ট রুলস) তৈরি করে গেজ়েট আকারে তা প্রকাশ হয়নি।

তৃণা দে

বুদবুদ, বর্ধমান

মাইক ছিল না

১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে হওয়া জলসা ‘অশোককুমার নাইট’ নিয়ে ২৭-৭ এবং ৩-৮ দু’টি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কোনওটিতেই জলসার ঠিক চিত্র ফুটে ওঠেনি। আমি ওই জলসায় দর্শক ছিলাম, সামনের দিকেই বসেছিলাম। মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনা ঘটেনি, অন্তত অনুষ্ঠান ভেঙে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। সমস্ত কিছুর মূলে ছিল মাইকের স্বল্পতা। বিশাল মণ্ডপের অনেক জায়গাতেই মাইকের আওয়াজ পৌঁছচ্ছিল না। যে দিক থেকে ক্ষুব্ধ শ্রোতাদের চিৎকার আসছে, পোস্ট-এ উঠে সেই দিকে মাইকের মুখ ঘুরিয়ে দিতেই আবার অন্য দিক থেকে চিৎকার শুরু। মঞ্চে উঠে অশোককুমার হাসিঠাট্টা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন। তাঁর হাতে এসে লাগল একটা কাঠের টুকরো। হেসে করুণ মুখে বললেন, ‘‘ম্যায় বুঢঢা আদমি হুঁ, মুঝে মারনে মে...’’ ইত্যাদি। তিনি বিফল হয়ে নেমে যেতে মঞ্চে এলেন কমেডিয়ান ভগবান দাস। আবার একটা কাঠের টুকরো, যেটা কুড়িয়ে নিয়ে উনি বাঁশি বাজাবার ভঙ্গি করলেন। এর পর মঞ্চে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এসে, এ দিক ও দিক ঘুরে, কিছু না বলে মঞ্চ ত্যাগ করলেন। অবশেষে তৎকালীন বিধানসভার স্পিকার বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে বলে বসলেন, যত মাইকই লাগুক, আমি কিছু ক্ষণের মধ্যে জোগাড় করার ব্যবস্থা করছি। শ্রোতারা তখন অধৈর্য। পরিস্থিতি ক্রমশ চলে গেল হাতের বাইরে, শুরু হল ভাঙচুর।

মানিক দাশ

কলকাতা-১৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Workers Tea garden Facility Tea Garden Labour Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE