Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: ক্লাসে ‘জয় শ্রীরাম!’

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ বলেছেন, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কারের অনেক আগেই নাকি এই সূত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার প্রমাণ প্রাচীন ভারতীয় মন্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে!

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

• নাম ডাকলে ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘নিশানায় নিউটনও’ শীর্ষক দুটি সংবাদের (১-৩) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। এত দিনে ভারতবর্ষ একেবারে খাঁটি সব মন্ত্রী পেয়েছে!

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ বলেছেন, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কারের অনেক আগেই নাকি এই সূত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার প্রমাণ প্রাচীন ভারতীয় মন্ত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে! এর পর হয়তো তিনি বলবেন, বিজ্ঞানে আর নিউটনের তত্ত্ব পড়ানোর দরকার নেই! উনি তো ভারতীয় প্রাচীন মন্ত্র চুরি করে বিজ্ঞানী হয়েছেন! কিছু কাল আগে সত্যপাল বলেছিলেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ নাকি ডাহা ভুল! মানুষ বানর থেকে ধাপে ধাপে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হয়নি, একবারেই মানুষ হয়ে জন্মেছিল! নিউটন বাদ, ডারউইন বাদ, আর কে কে এই তালিকায় পড়বেন কে জানে!

প্রকাশ জাভড়েকরের সভাপতিত্বে শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের বৈঠকে যে প্রস্তাবগুলো জমা পড়েছে, তা এই ধরনের মানসিকতারই পরিচায়ক। ক্লাসে রোল কলের সময় ‘ইয়েস স্যর’ বা ‘ইয়েস ম্যাম’-এর বদলে ছাত্রছাত্রীরা ‘জয় হিন্দ’ বলুক, প্রস্তাবে জোর দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী। মিড-ডে মিলে শুধু নিরামিষ খাবার থাক, বলেছেন উত্তরাখণ্ডের শিক্ষামন্ত্রী। তা হলে এ বার থেকে শিক্ষা মানে শুধু এক ধরনের উগ্র হিন্দুত্ববাদ শেখা। এবং সচেতন ভাবে একটি রাজনৈতিক দল গোটা দেশের ছাত্রছাত্রীর মগজ ধোলাই করতে চায়!

অপেক্ষায় আছি, কবে শিক্ষা দফতর থেকে নির্দেশিকা আসে, ক্লাসে শিক্ষক ঢোকা মাত্রই ছাত্রছাত্রীরা সমস্বরে বলে উঠবে— জয় শ্রীরাম!

বিজন মজুমদার

ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

দেশ ও বাঙালি

• ‘নৈরাজ্যের শহর’ (২৫-২) শীর্ষক পত্র প্রসঙ্গে এই লেখা। পত্রলেখকের ‘ভাবতে অবাক লাগে’ যে কলকাতা তো মোদীর রাজ্যের শহর নয়, এমনকী আদিত্যনাথের রাজ্যেরও নয়, তা হলে ‘সম্প্রীতির’ এই বঙ্গের শহরে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই কেন! তাঁকে বিনয়ের সঙ্গে জানাই, কলকাতা মোদীর রাজ্যের শহর না হলেও, মোদীর দেশের শহর তো বটেই! এমনকী আদিত্যনাথের রাজ্য যে দেশের অংশ, সেই দেশেরই অন্যতম শহর এই কলকাতা! আর মহিলাদের ‘নিরাপত্তা’র নিরিখে এই দেশ সম্বন্ধে বিশ্ব তথা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়ন কী? One of the most dangerous places for women to live in! সুতরাং যে ‘ঐতিহ্যবান’, ‘মূল্যবোধসম্পন্ন’, ‘সংস্কৃতিমান’, ‘মহান’ দেশের এই রকম ‘চমৎকার’ রেকর্ড; সেই রাষ্ট্রেরই অন্তর্গত কলকাতা শহর অশালীনতার আঁচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে পারে কী করে!

পশ্চিমবঙ্গের বুকে ভূমিজ বাংলা ভাষা ও ভূমিপুত্র বাঙালির ন্যায্য অধিকারের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে ‘জাতীয়তাবাদী’ বাঙালি কানে আঙুল দিয়ে বলে ওঠে, ছি! বাংলা-বাঙালি আবার কী! ‘প্রাদেশিকতা’ হয়ে যাবে না! আমাদের একমাত্র পরিচয়, আমরা ভারতীয় ও ভারতবাসী! তা, এহেন ‘ভারতীয়ত্ব’ রক্ষার একমাত্র স্বনিযুক্ত অভিভাবক ‘উদার’ বাঙালি জাতি হঠাৎ নারী নিগ্রহ বা ‘নিরাপত্তা’র প্রসঙ্গে সমগ্র দেশকে ছেড়ে শুধুমাত্র কলকাতা বা বাংলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করছে কেন? তা হলে কি এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে হবে যে, বাংলা-বাঙালির ন্যায্য অধিকারের প্রশ্ন উঠলে আমাদের একমাত্র পরিচয় ‘আমরা ভারতীয়’; কিন্তু শুধুমাত্র স্বভূমি ও স্বজাতির নিন্দা করার সময়ে আমরা রাতারাতি ‘নির্ভেজাল বাঙালি’ হয়ে যাই!

কাজল চট্টোপাধ্যায়

সোদপুর

কাশীর আরতি

• ‘মুঘল কাশীর ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক (২৫-২) লেখায় কয়েকটি ভুল চোখে পড়ল। লেখাটিতে যে ছবি ছাপা হয়েছে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, বারাণসীর দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গারতির ছবি। কিন্তু আসলে তা হল পার্শ্ববর্তী শীতলা ঘাটের সন্ধ্যারতির ছবি। বৈশিষ্ট্য হল, শীতলাঘাটে সন্ধ্যারতি করেন পাঁচ জন মিলে, আর দশাশ্বমেধ ঘাটে সন্ধ্যারতি করেন সাত জন মিলে। আরতিকারী শীতলা ঘাটের পু্রোহিতদের পরিধেয় বস্ত্র হল হাফ হাতা কমলা পাঞ্জাবি ও পাটের জোড়। অপর দিকে দশাশ্বমেধ ঘাটে আরতিকারীদের পরনে থাকে হাফ হাতা গাঢ় মেরুন পাঞ্জাবি ও পাটের জোড়। বিভিন্ন মুদ্রা সহযোগে আরতির মেয়াদকাল ৪৫ মিনিট। প্রথমে শুরু দশাশ্বমেধ ঘাটে, কিছু পরে শীতলা ঘাটে।

কার্তিক মিশ্র

ই-মেল মারফত

প্রতিবেদকের উত্তর: আপনি ঠিকই লিখেছেন। কিন্তু শীতলাঘাট এখন আলাদা হলেও, ঐতিহ্যগত ভাবে এটি দশাশ্বমেধ ঘাটেরই অংশ। যে কারণে ওই শীতলামন্দিরে শিবলিঙ্গের নামই দশাশ্বমেধেশ্বর। এখানে শীতলা একই সঙ্গে শিবের শক্তি ও বসন্ত রোগ নিবারণকারিণী দেবী। ১৮৭৮, ১৮৮৪, ১৮৮৯ সালে বারাণসীতে বসন্তরোগের প্রবল প্রাদুর্ভাব হয়, শীতলামাহাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। তার আগে, জেমস প্রিন্সেপের আঁকা ছবিতেও দশাশ্বমেধ ঘাট আছে, আলাদা করে শীতলা ঘাট নেই। আর মেরুন পাঞ্জাবি, কমলা পাঞ্জাবির তফাতও বাহ্যমাত্র। দুটি আরতি দুই পৃথক সংস্থার। একটির দায়িত্বে গঙ্গা সেবানিধি, অন্যটির দায়িত্বে গঙ্গোত্রী সেবাসমিতি। মাত্র দেড় দশকের মধ্যে একটি আরতি ভেঙে কী ভাবে দুটি হয়, সেই আধুনিক রাজনীতি অবশ্যই আমার লেখার বিষয় ছিল না।

ব্যাংকিং সংস্কার

• ভারতে ব্যাংকিং সংস্কার বিল, ২০১৭ বর্তমানে যৌথ কমিটির বিবেচনাধীন হলেও, সে সম্পর্কে কিছু বলি। বিলের দুটি প্রধান বিষয়, যা নিয়ে আমানতকারী ও ব্যাংক কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে: ক) ব্যাংক-কে দেউলিয়া ঘোষণা বা বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ। খ) আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থ অন্যত্র (শেয়ার বা বন্ডে) খাটানোর (বেল ইন) স্বাধীনতা প্রদান।

বিগত এক দশকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মিলিয়ে অন্তত ২২টি দেশে ব্যাংকিং সংস্থায় মূলধন ঘাটতি সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। সমাধান হিসাবে, সরকারি ভাঁড়ার থেকে অর্থের জোগান, ব্যাংকগুলির নিজস্ব উদ্যোগে অর্থের সাশ্রয় ঘটানো এবং সাধারণের অর্থে সবল হয়ে ওঠার চেষ্টাই প্রাধান্য পেয়েছে। অনাদায়ী ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেই সঙ্গে আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থের উপর ব্যাংকের অধিকার প্রতিষ্ঠা (বেল ইন) আইনে স্বীকৃত হয়। ২০১৩ সালে সাইপ্রাস, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের এক ছোট্ট এবং ধনী দেশ, এ-ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু বিধ্বস্ত হয়। আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে ঘরে মজুত করতে থাকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়, অর্থনীতির অগ্রগতি শ্লথ হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ঋণ নিয়ে অবস্থা সামাল দিতে হয়। অনেকেই এই মডেল নিয়ে অসন্তুষ্ট। অস্ট্রেলিয়ায় প্রবল প্রতিবাদ হয়েছে এবং পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন ঋণ আদায়ে কঠোর হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ধনী দেশেও সব ব্যাংকের এই ধাক্কাটি নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

ভারতে ৮৪.৭% মানুষের জীবিকা অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল। দক্ষ, অদক্ষ এবং শিক্ষিত পুরুষ মহিলা এ-ক্ষেত্রে নিযুক্ত হচ্ছেন। ফলে এ-ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে (৪-৫ শতাংশ হারে)। ইউরোপের দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নির্ভরতা ১০-১২%-এর বেশি নয়; সে তুলনায় ভারতে অনেক বেশি।

দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর দ্রুত নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকিং সংস্কার বিল সেখানে উদ্বেগের কারণ হবে না কি? কারণ বন্ড বা শেয়ারে বিনিয়োগ করা আয়ে দৈনন্দিন সংসার-ব্যয় নির্বাহ হয় না। বস্তুত, আর্থিক প্রতিবন্ধকতা স্বল্প বা বাঁধা আয়ের (পেনশনভোগী, বার্ধক্যভাতা নির্ভর ইত্যাদি) ব্যক্তিদের বেশি ধাক্কা দেয়।

শক্তিনাথ সাহা

স্বরূপনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

extremism Classroom BJP RSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE