Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: হ্যাঁ, বৃহৎ ধর্মশালা

ব্যক্তি ভারতীয়, সে অসমবাসী হোন বা বাংলা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, মেঘালয়বাসী হোন, কেউই নিষ্ঠুর হতে পারেননি অসহায় মানুষের প্রতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রীয় জীবনে অস্থিরতার সময়। এই মহৎ মনোবৃত্তিকে কি নিজেরাই পদদলিত করে যাব?

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অসমের এনআরসি তালিকাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘দেশটা কি ধর্মশালা?’’ আমরা বিশ্বাস করি এই দেশে “কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা’’ আমরা স্বীকার করি ‘‘শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন’’। আজকের রাম-রহিমদের পূর্বপুরুষ, রঘুনাথ মুর্মু ও রামানুজনের পূর্বপুরুষ বা কুমারন আসান, কমলা সুরাইয়ার পূর্বপুরুষ, আজকের অসম বা বঙ্গালবাসীর পূর্বপুরুষ, গোরক্ষনাথ, বৌদ্ধমন্দির, চার্চ, মসজিদ ও মীনাক্ষী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতার পূর্বপুরুষেরা সবাই এসেছেন বাইরে থেকে এই ভূখণ্ডে। দলে দলে। আর এই তিন দিকে লহরী ঘেরা ভূখণ্ড ঠাঁই দিয়েছে, লালন করেছে তাঁদের বহু যুগ ধরে। গড়ে উঠেছে এই বৈচিত্রময় সভ্যতা। আসলে দেশটার গোটা অতীতটাই হচ্ছে ধর্মশালার ইতিহাস। এই ধর্মশালায় কেউ আগে এসেছেন, কেউ পরে। যিনি তালিকা বানাচ্ছেন আর যাঁদের তালিকা বানাচ্ছেন, যাঁরা পাহারা দিচ্ছেন যাঁদের পাহারা দিচ্ছেন, কেউই এর বাইরে নেই। যিনি ব্যঙ্গ করে বলছেন ‘ধর্মশালা আর যাঁরা শুনছেন, তাঁদেরও অতীত ওই একই। সহ-অবস্থানের সংস্কৃতি এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ আমাদের মন্ত্র। তাই অপর দেশের উপর আক্রমণের ইতিহাস এই দেশের সংস্কৃতিতে তেমন করে পাওয়া যায় না।

এ কথা ঠিক, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নিরিখে বিচার করলে, এই অনুপ্রবেশের মূলে কোথাও না কোথাও প্রশাসনিক দুর্বলতা ছিল। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ছিল আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মনন, অপরের প্রতি সহানুভূতি। ব্যক্তি ভারতীয়, সে অসমবাসী হোন বা বাংলা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, মেঘালয়বাসী হোন, কেউই নিষ্ঠুর হতে পারেননি অসহায় মানুষের প্রতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রীয় জীবনে অস্থিরতার সময়। এই মহৎ মনোবৃত্তিকে কি নিজেরাই পদদলিত করে যাব?

মহীদাস ভট্টাচার্য

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

ঠিক পদক্ষেপ

প্রশ্নটা বাঙালি-অবাঙালি নয় কিংবা মুসলিম-অমুসলিম। প্রশ্নটা হল, দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে। প্রশ্নটা হল, শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে। নিশ্চয় বলা যায় না, শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারী— এই দুই-ই এক! দেশভাগ হলে, মুসলিমদের এ দেশ থেকে যেতে বাধ্য করা হয়নি।‍ কিন্তু নতুন সৃষ্ট দুটো দেশ থেকে যখন নির্বিচারে হিন্দুদের বিতাড়ন করা হয়, তখন সেই দেশ দু’টির সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। দেশ দু’টি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই দেশ দু’টি থেকেও যখন মুসলিমরা এ দেশে অবাধে প্রবেশ করেন, নকল কাগজপত্র বানিয়ে নাগরিকত্ব অর্জন করেন এবং ভারতীয় জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট করেন, ভারতীয়দের রুজিরোজগারে ভাগ বসান, তখন কেন আমরা আপত্তি করব না? তখন কেন প্রতিটি ভারতীয় সেই সমস্ত দেশকে বলব না, তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিক? যে ভাবে রাজ্যভিত্তিক বিভাজনের অপপ্রচার চালিয়ে ‘বিহারি খেদাও’, ‘বাঙালি খেদাও’ বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, সেটাই বরং বেশি বিপজ্জনক। কারণ হলফ করে বলা যায়, যাঁরা ভারতীয় তাঁদের বিপদের আশঙ্কা নেই। তা হলে অ-ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে আমরা কেন ভাবব? বরং দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে প্রত্যেক দেশেরই অধিকার রয়েছে, অ-নাগরিকদের চিহ্নিত করার।

বাকি রইল মানবিকতার প্রশ্ন। যে সমস্ত দেশ থেকে মানুষ স্বেচ্ছায় এ দেশে এসে বসবাস করছেন, সেই সমস্ত দেশের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে, কী ভাবে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া যায়। বা, যত দিন না কোনও সুরাহা হচ্ছে, একটা কিছু মধ্যপন্থা অবলম্বন করে তাঁদের সুরক্ষার দিকটি সুনিশ্চিত করা যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই এই ধরনের অনুপ্রবেশকে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়। যাতে কোনও ভাবেই আর এই জিনিসের পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য এটাই সঠিক পদক্ষেপ।

কৌশিক সরকার

রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

ভোট লুটতে

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির মধ্যে কোনও অপরাধ নেই। কিন্তু অসমে বিজেপি যে উদ্দেশ্যে নাগরিক পঞ্জি তৈরি করেছে এবং লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তার অবগুণ্ঠন উন্মোচিত করেছে তা নিঃসন্দেহে হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভোট রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে পঞ্জি প্রকাশনার পর বিজেপি নেতাদের কথাবার্তার ধরন গিয়েছে পাল্টে। কেবল একটি রাজ্যে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে পঞ্জির বাইরে রেখে তাঁরা একটা বিরাট দাঁও মেরেছেন— ভাবখানা এমনই। এর আগে ১৯৮৫ সালে এজিপি নেতৃত্বাধীন অসম সরকার এই উদ্দেশ্যে যে সমীক্ষা চালিয়েছিল; যে সমীক্ষাও জাতিগত, ধর্ম ও ভাষাগত বিদ্বেষ থেকে মুক্ত ছিল না, সেখানেও ডি-ভোটারের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ছাড়ায়নি। এ বারে এক লাফে ৪০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা কেবল অবিশ্বাস্য নয়, গভীর ষড়যন্ত্রমূলকও। শাসক দলের সর্বভারতীয় সভাপতি গর্বের সঙ্গে বলছেন, এ হিম্মত তাঁদের ছাড়া অন্য কোনও দলের নেই। বলছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এ বার পালাবার পথ পাবে না। ভোটে লাভ হবে; তাই একটা ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন এঁরা গোটা দেশকে। তাই অমুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘শরণার্থী’, আর মুসলিমদের ক্ষেত্রে ‘অনুপ্রবেশকারী’— এই দু’টি শব্দ ব্যবহার করছেন। এ ভাবেই হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশীদার হতে তাঁরা তৎপর। ভোট রাজনীতি এ ভাবেই মানুষকে অমানুষ হতে সাহায্য করছে।

এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আবার এই বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। এখানেও কাজ করছে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার নামে জাতপাত-ভিত্তিক রাজনীতির মহড়া। তা ছাড়া যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এ রাজ্যে কোনও আন্দোলন বরদাস্ত করা হবে না, তিনি সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করবেন কী ভাবে? এ রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধি, বেকার সমস্যা, অন্যায় ছাঁটাই কিংবা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিদ্যুৎ প্রভৃতি নিয়ে ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠলে নির্মম পুলিশি দমন-পীড়ন নেমে আসে। এই ঐতিহ্য নিয়ে তিনি কী করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলবেন?

গৌরীশঙ্কর দাস

সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

ধন্যবাদ বিজেপি

ঈশানী দত্ত রায়ের লেখাটি (‘এর পরে কারা? আমরা?’, ৩-৮) পড়ে অবাক হলাম। কেন ওঁর মনে এই সংশয় তৈরি হল যে হিন্দু বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও ওঁকে কেউ ও-পার বাংলায় তাড়িয়ে দিতে পারে? এমনকি অসমে যে সব হিন্দু বাঙালি আছেন তাঁদেরও মনে এই সংশয়ের কোনও ভিত্তি নেই। এখন কেউ যদি, তৃণমূলনেত্রী ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে অধুনা যে সব কার্যকলাপ শুরু করেছেন, তাকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেন, তবে তাঁর পক্ষে বিভ্রান্তি এড়ানো সত্যিই শক্ত।

প্রথমত মুসলিম লিগের যে দ্বিজাতি তত্ত্বটির নীতির দরুন ভারত ভাগ হয়েছিল, স্বাধীনতোত্তর ভারতের কোনও শাসকই তাতে বলি হওয়া হিন্দু বাঙালিদের স্বার্থ বিরোধী নীতি গ্রহণ করেননি। কিন্তু প্রধানত মুসলিম বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখতেই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী এই নাগরিক পঞ্জি চালু করেন। পরে বহু আলোচনার ভিত্তিতে এও ঠিক হয়, প্রয়োজনে হিন্দুদের রাষ্ট্রপুঞ্জের রিফিউজ়ির মর্যাদা ও সুবিধা দেওয়া হবে, কিন্তু যে পাকিস্তানিরা (পরবর্তী কালে বাংলাদেশিরা) হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও হিন্দু বিতাড়নের জন্য দায়ী তাঁদের এ দেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। অধুনা তৃণমূলনেত্রী এঁদের নিয়েই তাঁর ক্ষয় হয়ে যাওয়া ভোটব্যাঙ্ক
পূরণ করতে চাইছেন এবং অসমে মিথ্যা বাঙালি খেদাও, বিহারি খেদাওয়ের ধুয়ো তুলেছেন। বিজেপিকে ধন্যবাদ, তারা তৃণমূল নেত্রীর এই ভোটব্যাঙ্ক বাড়াবার রাজনীতি প্রতিহত করেছেন।

অরুণ কুমার দত্ত
কলকাতা-৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Culture Immigration Neighbours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE