Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: উনি প্রথম নন

বিদেশের মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে প্রথম টেস্ট সিরিজ় জেতানো অধিনায়কের নাম মনসুর আলি খান পটৌডি।

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৫
Share: Save:

‘তাণ্ডবের মধ্যেও ইডেন ছাড়েননি আমাদের সঙ্গে’ (১৭-৮) নিবন্ধে অজিত ওয়াড়েকর (ছবিতে) সম্পর্কে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, ‘‘এই লড়াকু মনোভাবটা না থাকলে (১৯৭১ সালে) ভারতের প্রথম বিদেশে টেস্ট সিরিজ় জেতা হত না।’’ তা ছাড়া, ‘‘স্বাধীনতার রাতে চলে গেলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটকে বিদেশে ‘স্বাধীন’ করা প্রথম অধিনায়ক...।’’

কিন্তু বিদেশের মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে প্রথম টেস্ট সিরিজ় জেতানো অধিনায়কের নাম মনসুর আলি খান পটৌডি। ওয়াড়েকরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারানোর আগেই, ১৯৬৭-৬৮ মরসুমে, চার টেস্টের সিরিজ়ে, ব্যারি সিনক্লেয়ার ও গ্রাহাম ডাউলিং-এর নেতৃত্বাধীন নিউজ়িল্যান্ড-কে ৩-১ ব্যবধানে হারায় পটৌডির ভারত। তবে ওয়াড়েকরের বিশেষ কৃতিত্ব: ডুনেডিনের প্রথম টেস্টে তিনি ভারতের দু’ইনিংসেই সর্বোচ্চ স্কোরার (৮০ এবং ৭১)। সেটি ছিল বিদেশের মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়। আর ওয়েলিংটনের তৃতীয় টেস্টে ওয়াড়েকর দু’দলের মধ্যে একমাত্র শতরানকারী (১৪৩)। টেস্টটি ভারত জিতেছিল। ওই সিরিজ়ে ওয়া়়েড়কর ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৩২৮)।

সজলকান্তি ঘোষ

বারুইপুর

আজানের শব্দ

জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি আদর্শকুমার গয়ালের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় ও দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছেন, দিল্লির সাতটি মসজিদ থেকে আজানের শব্দে শব্দদূষণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে, আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা (সকাল ছ’টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত) ও রাতের বেলা (রাত্রি দশটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত) যথাক্রমে ৫৫ ডেসিবেল ও ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ নিষিদ্ধ। কিন্তু আমরা এ সবের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান থেকে দিনের পর দিন নিয়ন্ত্রণবিধি ভেঙে মাইক বাজাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত নির্দিষ্ট ডেসিবেলের মধ্যে কেন শব্দ বেঁধে রাখতে বলেছে। এর থেকে বেশি ডেসিবেলের শব্দ মানুষের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক, বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের পক্ষে।

যদি মসজিদে আজান দেওয়ার জন্য মাইক ব্যবহার করতে হয়, তবে তা কেন নির্দিষ্ট বিধি বজায় রেখে পালন করা হবে না? মনে রাখতে হবে, আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন পাশাপাশি বসবাস করি, কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি যেন অন্য সম্প্রদায়ের অসুবিধার কারণ না হয়। তা ছাড়া আমরা ধর্মীয়, পবিত্র স্থান থেকে কেন নিষিদ্ধ কাজ করব? বর্তমান দিনে যখন মানুষের মধ্যে সহনশীলতা কমে আসছে, তখন আমাদের নিজে থেকে এগিয়ে এসে মাইক ব্যবহার নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রেখে দেওয়া উচিত। ধর্মীয় স্থান একটি অতি সংবেদনশীল জায়গা। প্রশাসন এবং পুলিশ সহজে এখানে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যদি আদালত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তখন অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে।

এই নির্দিষ্ট় ডেসিবেলের মাত্রা কেবল মসজিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, সমস্ত ধর্মীয় স্থান, রাজনৈতিক দলের সভা, সামাজিক অনুষ্ঠান, সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রম করছে বলে পবিত্র মসজিদও তা করবে— এ যুক্তি ঠিক নয়।

হাসান আলি

কলকাতা-৬৩

সেই বাড়ি

‘কলকাতায় বিপ্লবী বেতার’ (বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘স্বাধীনতার গল্প’, ১৫-৮) নিবন্ধে নীলার্ণব চক্রবর্তী আমাদের ডোভার লেনের পৈতৃক বাড়ির কথা উল্লেখ করার জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। চল্লিশের দশকের শুরুতে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে উত্তাল ঢেউ উঠেছিল এবং তা পূর্ণ রূপ ধারণ করেছিল ঐতিহাসিক ’৪২-এর অগস্ট বিপ্লবে, তার অজস্র সাক্ষী রয়ে গিয়েছে বহু পরিবারের ইতিহাসে। দু’তিনটি তথ্য সংশোধন করার জন্য এই চিঠি লিখছি। সঙ্গে সামান্য কিছু নতুন তথ্যও যোগ করছি।

প্রথমত, বাড়ির ঠিকানা ১৮/৫৯ ডোভার লেন, ১৮/৪৯ নয়। ১৯৩৭ সালে নির্মিত এই বাড়ি এখনও প্রোমোটারের নজর এড়িয়ে দিব্য দাঁড়িয়ে আছে বাসযোগ্য অবস্থাতেই।

দ্বিতীয়ত, নিবেদিতা সেন-কে অশ্বিনী কুমার গুপ্ত’র বোন বলা হয়েছে, সেই তথ্যটি ঠিক নয়। তাঁর নাম নিবেদিতা সেনগুপ্ত। তিনি আমাদের মা ছিলেন, আর এই নিবন্ধে উল্লিখিত অনুশীলন সমিতির সদস্য অনিলকুমার সেনগুপ্তর সহোদরা তিনি। বিবাহপূর্ব জীবনে নিবেদিতা তাঁর দাদার বৈপ্লবিক কাজে মাঝে মাঝে সাহায্য করতেন। যেমন, পুলিশি তল্লাশির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বাড়ির পিছনের মাঠে মাটি চাপা দিয়ে নিষিদ্ধ বই, বোমা লুকিয়ে রাখা ইত্যাদি।

তৃতীয়ত, বাড়িটি কখনওই সম্পূর্ণ খালি ছিল না। আমাদের ঠাকুমা প্রয়াত সরলাদেবী তাঁর দুই কনিষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকতেন। মানিক ও দীপ্তি, তাঁর ছেলে ও মেয়ে, তখন জগদ্বন্ধু স্কুল ও বালিগঞ্জ গার্লস স্কুল— বর্তমানে মুরলীধর গার্লস স্কুলে অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে পড়তেন।

আমাদের বাবা প্রয়াত বীরেশ্বর মজুমদার কর্ম উপলক্ষে পাবনা জেলার পাকশিতে ছিলেন। তবে, ১৯৪২-এ অগস্ট আন্দোলনের আগে তিনি কলকাতা ফিরে আসেন। আমাদের মামা অনিলকুমার সেনগুপ্ত একতলার একটি ঘরে থাকতেন। মামার বিপ্লবী বন্ধুদের যাতায়াত অবশ্যই ছিল— বিশেষ করে রাত কাটাবার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে।

ট্রান্সমিটার যন্ত্র বসাবার কথা ঠিক জানা নেই। আমাদের বাবা নিশ্চয়ই জানতেন। তাঁর জ্ঞাতসারেই এই সব বৈপ্লবিক কাজ হয়েছিল। সরকারি চাকরি করলেও মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন স্বদেশভক্ত। মনে পড়ে, গভীর রাতে বাবা ও মামা রেডিয়োতে শুনতেন সায়গন থেকে ব্রডকাস্ট
করা নেতাজির ভাষণ, ১৯৪২-৪৩ সালে। সেই সময় জাপানি আক্রমণের জন্য ব্ল্যাকআউট জারি ছিল। জানালার কাচে কালো কাগজ লাগানো হত। আলো যথাসম্ভব কম জ্বালানো হত, যাতে বাইরে থেকে দেখা না যায়। ইংরেজ সরকারের সিভিক গার্ডদের চোখ এড়িয়ে ট্রান্সমিটারে খবর পাঠাতে নিশ্চয়ই তাঁদের যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল।

১৮/৫৯ ডোভার লেনের একতলার ঘরটি সেই বৈপ্লবিক ধারা বহন করেছিল ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে এক দল তরুণ-তরুণী সেই ঐতিহাসিক ঘরটিকে তাদের কর্মকেন্দ্র করেছিল।

বর্তমানেও সেই ঘরটিতেই বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে নিবেদিতা ব্রতী সঙ্ঘের মাসিক অধিবেশন ধারাবাহিক ভাবে হয়ে চলেছে।

সুব্রতা সেন, শুক্লা সেন ও শ্রীলা রায়

কলকাতা-২৯

স্বাধীনতার শব্দ

আমি ৬৩ বছরের বৃদ্ধা। গত কয়েক বছর ধরে ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে শব্দদানবের অত্যাচার সহ্য করছি। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় প্রচণ্ড শব্দে বোম ফাটানো। রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। কার পটকায় কত জোর, তাই দিয়ে বোধ হয় বোঝানোর চেষ্টা হয়, কার দেশপ্রেম কত জোরালো।

এরা কারা? দেশপ্রেমী? স্বাধীনতা দিবসে কারা কী পেয়েছিল, কারা কী হারিয়েছিল, এরা তার কিছু বোঝে? আমরা গুরুজনদের এই দিনটি পালন করতে দেখেছি। কারও চোখে থাকত আনন্দাশ্রু, কেউ বা নীরবে চোখের জল মুছতেন সব হারানোর বেদনায়। আমরাও প্রভাতফেরি ও নানা রকম অনুষ্ঠান করে সম্মান জানিয়েছি দেশের জন্য আত্মবলিদানকারীদের। আর এদের স্বাধীনতার আনন্দ প্রকাশ করার পন্থা মাঝরাত্তিরে আধ ঘণ্টা এক ঘণ্টা ধরে অন্যদের চূড়ান্ত অসুবিধে ঘটিয়ে, টানা বোম ফাটানো!

শুভ্রা রায়

কলকাতা-১৫৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wadekar Pataudi Test Cricket India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE