Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নিজের দিকে আঙুল

পঞ্চাশ জন রক্ষক কী ভাবে পঞ্চাশ হাজার আইন লঙ্ঘনকারীকে সামলাবেন, সেটাও ভাবতে হবে। এক জন পুরপ্রতিনিধি বা বিধায়কের পক্ষেও কাজটা কঠিন। যাদের ভোটে তাঁরা ক্ষমতায় যান, সেই তাদেরই বাগে আনতে গেলে, সেটা হবে গাছের ডালে বসে সেই ডাল কাটার মতো আহাম্মকি।

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

প্রথমে মাঝেরহাট, তার পর বাগড়ি মার্কেট— পক্ষকালের মধ্যে দুই বড় দুর্ঘটনা! সঙ্গত কারণেই দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখেছেন ‘‘যাঁরা দায়িত্বের শীর্ষে, দায়ভার তাঁদের নিতেই হবে’’ (‘আত্মসমীক্ষা এখন জরুরি’, ২১-৯)। কিন্তু শুধু প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের আত্মসমীক্ষা যথেষ্ট নয়। আত্মসমীক্ষা দরকার সবারই। মাঝেরহাট সেতুর ওপর দিয়ে দিনের পর দিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছেন, সেতুর দৃশ্যমান জীর্ণতা তাঁদের কারও নজরে পড়েনি? বাগড়ি মার্কেটের অবস্থাটা তো আরও মারাত্মক। ডজন ডজন বেআইনি দখলদার বাড়িটার বারান্দা, সিঁড়ি এমনকি বাথরুমও গ্রাস করে বসেছিলেন। নিজেদের বিপদকেও তাঁরা আমল দেননি।

পঞ্চাশ জন রক্ষক কী ভাবে পঞ্চাশ হাজার আইন লঙ্ঘনকারীকে সামলাবেন, সেটাও ভাবতে হবে। এক জন পুরপ্রতিনিধি বা বিধায়কের পক্ষেও কাজটা কঠিন। যাদের ভোটে তাঁরা ক্ষমতায় যান, সেই তাদেরই বাগে আনতে গেলে, সেটা হবে গাছের ডালে বসে সেই ডাল কাটার মতো আহাম্মকি।

কথাগুলো বলছি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। একটি আবাসিক সমিতির সভাপতি হিসেবে আমাকে প্রায়ই স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি, বিধায়ক ও সাংসদের কাছে যেতে হত। দিনের পর দিন তাঁদের আমদরবারে হাজির হয়ে দেখেছি শতকরা নব্বই জনের দাবি বা আবদার ন্যায় ও নিয়মের পরিপন্থী। স্থানীয় একটি বস্তির শতকরা নব্বই ভাগ নির্মাণই বেআইনি। আইন বা প্রশাসনের কোনও রক্ষক বা পুরপ্রতিনিধি যদি সেখানে আইনের পথে হাঁটতে যান, পরিণামটা কী হবে, সহজে অনুমেয়।

কিন্তু, শুধু অন্যদের দিকে আঙুল তুললে সেটা হবে ভাবের ঘরে চুরি। বিধাননগরের আবাসনগুলিতে বেলা ন’টা-দশটা অবধি সিঁড়ি বা গেটের আলো জ্বলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল উপচে পড়ে। আমরি-কাণ্ডের পর আমাদের আবাসনে প্রচুর অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার বসানো হয়েছিল, কেউ সেগুলির ব্যবহারবিধি শেখাননি, আমরাও শিখতে আগ্রহ বোধ করিনি। এখানে কোনও বিপদ হলে কাকে দোষ দেব সেটাই ভাবছি।

আশিস সামন্ত, কলকাতা-৬৪

সেই ছেলে কবে

জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কিত নিবন্ধ ‘সব পাখি ঘরে আসে,...’ (পত্রিকা, ১৫-৯) প্রসঙ্গে এই চিঠি। এক জায়গায় লেখক দেবাশিস ঘড়াই লিখেছেন, ‘‘এমনকি, জীবনানন্দের ভাই অশোকানন্দ বিদ্যালয়ে আবৃত্তি করবেন বলে [কুসুমকুমারী দাস]লিখে ফেলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র মতো মুখে মুখে ফেরা কবিতা।’’ কিন্তু, সত্যিই কি তা-ই? কবিতাটির নাম ‘আদর্শ ছেলে’। সুমিতা চক্রবর্তী সম্পাদিত, ‘ভারবি’ থেকে প্রকাশিত ‘কুসুমকুমারী দাসের কবিতা’ সঙ্কলন থেকে জানা যায়, কবিতাটির প্রকাশকাল পৌষ ১৩০২ বঙ্গাব্দ। তখন অশোকানন্দ তো বটেই, জীবনানন্দও ভবিষ্যতের গর্ভে।।

কৌস্তুভ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান

প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবেদনের সিংহভাগ অংশই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা। জীবনানন্দ দাশের ভাই, অশোকানন্দ দাশের পুত্র অমিতানন্দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা। এই তথ্যটিও অমিতানন্দবাবুরই উল্লেখ করা। এ বার তাতেও প্রশ্ন থাকে, সেই তথ্য যাচাইয়ের দায় প্রতিবেদকের রয়েছে কি না। প্রশ্নটি ভীষণ ভাবেই প্রাসঙ্গিক। সেই তথ্য যাচাইও করা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ‘দেশ’ পত্রিকার একটি বিশেষ জীবনানন্দ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে ‘দাশপরিবার ও জীবনানন্দ’ নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, রচয়িতা ছিলেন সুচরিতা দাশ। সুচরিতা ছিলেন জীবনানন্দের ছোট বোন এবং পারিবারিক সূত্র অনুযায়ী, পারিবারিক মণ্ডলে তিনিই সর্বাধিক প্রিয়পাত্রী ছিলেন জীবনানন্দের। সেই প্রবন্ধে সুচরিতাদেবী নিজের মা অর্থাৎ, কুসুমকুমারী দেবী সম্পর্কে যা লিখেছিলেন তা হুবহু তুলে দেওয়া হল, (ওই সংখ্যার পৃষ্ঠা ৩২)—

‘‘অল্প বয়েস থেকেই মায়ের লেখার ঝোঁক ছিল। অনায়াসে অল্প সময়েই তিনি কবিতা প্রবন্ধ লিখে ফেলতেন।...তাঁর বহুপঠিত কবিতা ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। তিনি তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অশোকানন্দ পুজোর আগে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করবে বলে রচনা করেছিলেন।...’’

ফলে দুই প্রজন্মের পারিবারিক সূত্র ও তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই সেটি লেখা হয়েছিল। এখন, সাংবাদিকতার প্রাথমিক পাঠে ‘ফার্স্ট হ্যান্ড অ্যাকাউন্ট’ যে হেতু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য যে কোনও কিছুর থেকে, তাই দাশ পরিবারের প্রজন্মবাহিত স্মৃতি, মৌখিক ও লিখিত তথ্যকেই এখানে এক ও একমাত্র ‘সত্যি’ বলেই ধরা হয়েছে।

শৈলবালা

পুলককুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈলবালা ঘোষজায়া সম্বন্ধে লেখাটি (রবিবাসরীয়, ১৬-৯) পড়ে এই চিঠি। শৈলবালার আলোচ্য উপন্যাসটির নাম গোড়ায় ছিল ‘সেখ আন্দু’, পরে সংশোধন করে হয় ‘শেখ আন্দু’। লেখিকার আত্মপরিচয় সংক্রান্ত যে মন্তব্যটি শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন তা সঠিক নয়। শৈলবালা ঘোষজায়া নামের আগে কখন‌ওই ‘শ্রী’ লেখেননি। দ্বিতীয়ত, অনেক কাল পরে সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে শৈলবালা বলেছিলেন: ‘‘আমি নামের পর ঘোষজায়া কেন লিখি জান? শ্বশুর বাড়ির লোকেরা যেন কিছুতেই বুঝতে না পারে, আমি ওদের নতুন বৌ শৈলবালা ঘোষ। ও সব লেখা-টেখার ওরা ধার ধারত না, খবর‌ও রাখত না।’’ কী প্রতিকূল পরিবেশে শৈলবালাকে সাহিত্যসাধনা করতে হয়েছিল তার কিঞ্চিৎ আভাস এই উদ্ধৃতি থেকে মেলে! বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত শৈলবালা ঘোষজায়াকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেননি। দুঃখের বিষয়, ‘শেখ আন্দু’ বা শৈলবালার লেখা কোনও গ্রন্থ‌ই এখন আর পাঠাগারে পাওয়া যায় না। সে দিনের সাহসী লেখিকা আজ যথার্থই বিস্মৃত।

রঞ্জিতকুমার দাস, বালি, হাওড়া

প্রতিবেদকের উত্তর: শৈলবালা ঘোষজায়ার কিছু গ্রন্থে তাঁর নামের আগে ‘শ্রী’-এর ব্যবহার লক্ষ করেছি। পদবির ক্ষেত্রে শ্রীদাস যথার্থ তথ্যই দিয়েছেন। সমকালে পারিবারিক প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে আড়ালে রাখার জন্যেই পদবির ক্ষেত্রে এই ব্যাকরণসম্মত ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। ‘প্রবাসী’তে ধারাবাহিক এবং পরে পুস্তকাকারে প্রকাশের সময় উপন্যাসটি ‘সেখ আন্দু’ নামেই দীর্ঘ দিন পরিচিত ছিল। ১৯৫৪-এ তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের সময় মুসলমানি শব্দপ্রয়োগের নির্দিষ্ট ব্যাকরণরীতিকে মান্যতা দিয়ে ‘শেখ আন্দু’ হিসেবে নাম পরিবর্তন করেন লেখিকা।

‘অন্তর্মুখ’ পত্রিকার জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫ সংখ্যায় শৈলবালাকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখার কারণে বর্ধমান ও মেমারিতে গিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। ওঁর ভাশুর কুঞ্জলাল ঘোষের নাতি মনোময় ঘোষও দিল্লি থেকে কিছু তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে শৈলবালার শেষ সাক্ষাৎ হয় ১৯৬২-তে। লেখিকাকে নিয়ে ‘সেই সাবর্ণ’ পত্রিকার ১ম বর্ষ ২য় সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখেছেন মনোময় ঘোষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব উইমেন্স স্টাডিজ়’ শৈলবালা-চর্চায় আগ্রহ দেখিয়েছে। ১৯৫০-এ মেমারির রসিকলাল স্মৃতি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন শৈলবালা। বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

জীবদ্দশায় পারিবারিক ও মানসিক শান্তির আবহ ছিল একেবারেই প্রতিকূল, তবুও অধ্যবসায় এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই তিনি সারস্বত ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যদিও উত্তরকালের কাছে তিনি বিস্মৃত বলা যায়। ‘মিত্র ও ঘোষ’ থেকে অরুণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত শৈলবালা ঘোষজায়ার ‘সেরা পাঁচটি উপন্যাস’ গ্রন্থটি এই প্রজন্মের পাঠকের কাছে লেখিকার সাহিত্যপ্রতিভার নিদর্শন হিসেবে অনেকখানি সহায়ক।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE