Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ

‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’-এর সমালোচনা রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন।  তবে এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, ‘ব্যক্তিগত মালিকানা’ এবং ‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’-এর সম্পর্ক।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

বিশ্বজিৎ রায় ‘সম্পদ থেকেই সম্পর্কে’ (৯-৫) শীর্ষক লেখাটির শুরুতেই ঘোষণা করেছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত মালিকানা ও সম্পদের অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন।’’ এই দাবি কি যথাযথ ভাবে এই লেখায় প্রতিষ্ঠা করা গেল? রবীন্দ্রনাথের কোনও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট উদ্ধৃতি দিয়ে এই দাবি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি লেখায়। ব্যক্তির সঙ্গে সম্পদের সম্পর্ক তো নানা রূপ হতে পারে। ব্যক্তিমালিকানা, সামাজিক মালিকানা অথবা এই দুইয়ের মধ্যবর্তী আরও নানা ধরনের সম্পর্ক।

‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’-এর সমালোচনা রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, ‘ব্যক্তিগত মালিকানা’ এবং ‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’-এর সম্পর্ক। মানুষ এবং তার মনুষ্যত্বের বিকাশ কোথায় কোন পথে হবে, তার সঙ্গে ব্যক্তিগত মালিকানার সরলরৈখিক সম্বন্ধ কি সত্যিই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? উল্টো দিকে এটাও তো ঠিক, ব্যক্তিগত মালিকানা ‘এক্সক্লুশন’-এর জন্ম দেয় এবং এই ‘এক্সক্লুশন’ আবার হয়ে উঠতে পারে মনুষ্যত্বের বিকাশের অন্তরায়। যে বই ভালবাসে তার কেনা বই কেড়ে নিলে তা কেবল সম্পদের হরণ নয় বরং তাঁর প্রকাশভঙ্গিকেও ধ্বংস করা— এ কথা যদি মেনেও নিই, তবু মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সেই শিশুদের কথা, যাদের পরিবারের হয়তো বই কিনে দেওয়ারই ক্ষমতা নেই। বইয়ের সামাজিক মালিকানা সেই শিশুর বিকাশে সহায়ক হতে পারে। সোভিয়েত ব্যবস্থার বজ্রআঁটুনি তথা ‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’ তৈরির ব্যবস্থার সমালোচনা, আর ‘ব্যক্তিগত মালিকানা’র সমর্থন করা তো সমার্থক না-ও হতে পারে।

‘‘সম্পদ তো আমাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম’’— এ কথাও নির্দ্বিধায় মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছে। ব্যক্তিত্ব প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পদ হয়তো অন্যতম মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু সেই সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগতই হতে হবে? সামাজিক মালিকানার ক্ষেত্রেও সম্পদের ব্যবহার করে যদি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ বিনা বাধায় হতে পারে, তা হলে ক্ষতি কি? সোভিয়েতের মতন ‘একই ছাঁচে ঢালা মানুষ’ তৈরির ব্যবস্থার সমর্থন না করেও এ প্রশ্ন আজকের দিনে তোলাই যায়, এমন একটা ব্যবস্থা— যাতে ব্যক্তিগত মালিকানা আর সামাজিক মালিকানা— এই দুই এবং এই দুইয়ের বিভিন্ন সংমিশ্রণ রয়েছে, সেই ব্যবস্থাকে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে দেখতেন? শেষে এই প্রশ্নও জাগে, আজকের ব্যক্তিগত মালিকানাপ্রধান সমাজের এই উৎকট অসাম্য লক্ষ করেও কি রবীন্দ্রনাথ শুধু ‘হিতবাদী বিত্তশালী’ ব্যক্তিদের দানখয়রাতির উপরেই ভরসা রেখে ক্ষান্ত দিতেন, না অন্তত আংশিক ভাবেও ‘অন্যান্য’ ধরনের মালিকানার বা স্বত্বাধিকারের কথাও বিবেচনায় আনতেন?

মানস ভৌমিক কোন্নগর, হুগলি

আবাসনের হাল

‘মরচে ধরা পাইপ ভেঙে মৃত্যু রক্ষীর’ (২৭-৪) পড়ে মনে হল, এই ঘটনা হয়তো অনেক আবাসনেই ঘটতে পারে। এই পত্রকার কলকাতার উপকণ্ঠে একটি বড়সড় আবাসনের দীর্ঘ দিনের আবাসিক। প্রায় ত্রিশ বছর হতে চলল আবাসনটির বয়স। দু’টি ফেজ-এ বিভক্ত আবাসনটিতে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩২০। দু’টি ফেজের জন্য দু’টি নির্বাচিত বা মনোনীত সমবায় সমিতি আছে। নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন দু’টি ফেজেই। হাল তাঁদের নিধিরাম সর্দারের। যৎসামান্য পারিশ্রমিকে কোন কোম্পানিই বা তেজি ঘোড়সওয়ারের মতো নিরাপত্তারক্ষী সাপ্লাই দেবে? অতএব বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত, বহু রাত অবধি মেন গেট খোলা রাখা (যে হেতু দু’টি ফেজেই একটি এন্ট্রি গেট)— সব কিছু গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে আবাসিকদের। অথচ রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ (মান্থলি মেনটেনেন্স) কোনও মতে বৃদ্ধি করতে নারাজ তাঁরা। ২০১৮-তেও মান্ধাতা আমলের ৩০০ টাকা চার্জ দিয়ে তাঁরা কো-অপারেটিভ থেকে সব সুবিধে আদায় করতে বদ্ধপরিকর!

দীর্ঘ দিন পর পূর্বেকার সমিতি সমস্ত ফ্ল্যাটের (ফেজ টু) সার্বিক সংস্কার শুরু করেছিল। প্রায় নব্বই শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার সময় এজিএম আসন্ন হয়ে পড়ে। সমস্ত নিয়মকানুন মেনে যে কাজগুলো সম্পন্ন হচ্ছিল, এত দিনে বাইরের রঙের কাজ সম্পন্ন করে বিল্ডিংগুলো (ফেজ টু-র ৭টি) ঝাঁ-চকচকে রূপ পেত। কোনও আবাসিকের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচ পড়েনি। সমিতির জমানো ফান্ড থেকে সমস্ত কাজ এবং পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হল না, স্রেফ কতিপয় আবাসিকের দলবাজিতে। এই দলাদলি করে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ স্তব্ধ করে দেওয়ার উদাহরণ অবশ্য সর্বত্রই আছে।

অথচ, বোর্ডে কেউ আসবেন না। সমিতি নির্বাচনে নমিনেশন সাবমিট করবেন না। কিন্তু যাঁরা দীর্ঘ দিন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজ করে চলেছেন, তাঁদের কাজে বাগড়া দেবেন। উৎসব হবে। ফুর্তি হবে। ফাংশন করতে হবে। কেন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় না?— জবাব দিতে হবে। কেন কোনও আবাসিকের মৃত্যুর পর স্মরণসভা হচ্ছে না, তার দায় তো কো-অপারেটিভের। সেই যে হারাধনের দশটি ছেলে আছেন, যাঁরা ঘুরে ফিরে আসেন নির্বাচিত সমিতিতে, তাঁরা আবাসনের উন্নতিকল্পে বহু রাত অবধি মিটিং করবেন। উন্নয়নের খসড়া রচিত হবে। কিন্তু রূপায়িত করতে গেলেই সেই গা-জোয়ারি এবং দাদাগিরি, এজিএম পণ্ড করে দেওয়ার নির্ভুল চিত্রনাট্য।

উন্নয়ন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সেটা দেখভালের জন্য যদি প্রতিটি বিল্ডিং থেকে এক জন করে মনোনীত আবাসিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়বেন। অথচ, কারও ফ্ল্যাটের সামনে মরা বেড়াল কেন পড়ে আছে বা আবাসনের মধ্যে বর্জ্য কেন যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে (যা সারমেয়দের কীর্তি) তার জন্য দায়ী করা হবে সমিতিকে! এই হচ্ছে বেশির ভাগ আবাসনের চালচিত্র।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী কলকাতা-১২৫

প্রবীণের সিট

আমার বয়স ৬৩ বছর। গত ৪০ বছর ধরে প্রতি দিন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেনের (সোনারপুর থেকে বালিগঞ্জ) নিত্যযাত্রী। ট্রেনের সামনের ও পিছনের বগিতে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত কিছু আসন আছে। প্রতি দিনই লক্ষ করি আসনগুলির প্রায় অর্ধেকই নবীন যুবকরা দখল করে বসে থাকে এবং তাদের সামনে প্রবীণ যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও আসন ছেড়ে তাঁদের বসতে দেওয়ার সৌজন্যটুকু দেখায় না।

গত ৪ মে সকাল ১০:৫৫-র ক্যানিং লোকালে যাচ্ছিলাম। দেখি, ৭০ বছরের বেশি বয়সি এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাঁর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। যেখানে লাঠি হাতে প্রবীণ নাগরিকের চিহ্ন আছে, সেখানে বসে থাকা জানলার ধারে এক জন প্রবীণ ব্যক্তি ছাড়া সকলের উদ্দেশে বললাম, আপনারা যে কেউ এক জন উঠে এই বৃদ্ধ ভদ্রলোকের বসার ব্যবস্থা করুন। তার জবাবে প্রায় সকলেই সমস্বরে বলে ওঠে, এখানে জানালার ধারের একটি আসনই প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত। আপনার ক্ষমতা থাকে আমাদের তুলে ওঁকে বসিয়ে দিন।

বালিগঞ্জ স্টেশনে নেমে স্টেশন মাস্টারকে ব্যাপারটি জানাই এবং অনুরোধ করি, ওখানকার চারটি আসনই যদি প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত হয়, তা হলে প্রবীণ নাগরিকের চিহ্নটির নীচে ‘অল সিটস’ কথাটি লেখা থাকলে ভাল। আর শ্বাসকষ্ট হওয়া সত্তর বছরের লোককে বসতে দেওয়ার জন্য চিহ্নিত সিটের দরকার হয় কি না, সে তর্ক বরং থাক।

শুভাশীষ রায় কলকাতা-১৪৮

শিয়ালদহ অবধি

সকাল ৫:১৫-র লালগোলা-রানাঘাট মেমো প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিতে দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে বহু রোগী কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে যান। কিন্তু তাঁদের রানাঘাট স্টেশনে নেমে ট্রেন বা বাসে করে শিয়ালদহ যেতে হয়। ট্রেনটি যদি শিয়ালদহ পর্যন্ত যায়, বড্ড সুবিধে হয়।

সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায় দেবগ্রাম, নদিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Wealth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE