মেট্রো রেল চালু হওয়ার পর থেকে স্টেশনগুলির নামে অঞ্চলের নামের প্রাধান্য ছিল। শুধু রবীন্দ্র সদন, নেতাজি ভবন, যতীন দাস পার্ক, গিরিশ পার্ক— এগুলোই বিখ্যাত মহাপুরুষের নামে। পরবর্তী কালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বা একদা রেলমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু কবি, বিপ্লবী, নায়কদের নামে কয়েকটি স্টেশন নামাঙ্কিত হয়। ট্রেন এক প্রযুক্তি অর্থাৎ বিজ্ঞানের দান। অথচ বাংলার তথা পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা এই নামকরণে উপেক্ষিত। এটা লক্ষণীয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, তামিলনাড়ু তথা তদানীন্তন মাদ্রাজের নোবেলজয়ী পদার্থবিদ সি ভি রামন এঁদের কারও নামই স্থান পায়নি। আমার মনে হয় এঁদের নামে নামাঙ্কিত করা যায় অঞ্চল ভিত্তিক স্টেশনগুলির। এই তালিকায় আছে দমদম, বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল, চাঁদনি চক, এসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রিট, ময়দান ইত্যাদি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন: এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচিত হোক।
বদ্রীনাথ দাস
কলকাতা-২৮
বেদখল প্ল্যাটফর্ম
2 ‘কত হাজার মরিলে...’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে উল্লিখিত ‘‘তাঁহাদের (রেলের) নিকট যাত্রীরা সংখ্যামাত্র, তাহার অধিক কিছু নহেন’’ বাক্যটি পড়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করি। আমি নিত্যযাত্রী। বিধাননগর থেকে শিয়ালদহ মেন লাইনে সোদপুর পর্যন্ত যাতায়াত করি। বিধাননগর স্টেশনটিতে যে কোনও দিন সাঁতরাগাছির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্টেশনে আগমন ও বহির্গমনের পথ অতি সঙ্কীর্ণ। ঠিক সময়ে ঘোষণা না হওয়ায় ওভারব্রিজে সব সময়ই ভিড়। প্ল্যাটফর্ম সঙ্কীর্ণ এবং ১ ও ২ প্রতিটিরই অর্ধেক অংশ বেদখল। ঘোষণাকারীরা কোনও নির্দিষ্ট ট্রেন আসার বহু আগেই ঘোষণা করে তাঁদের দায় শেষ করেন, ফলে যখন ট্রেনটি আসে, তখন যাত্রীদের পক্ষে জানা অসম্ভব হয়। ভিড়, ঠেলাঠেলি, বয়স্ক মানুষদের পড়ে যাওয়া এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। সভয়ে অপেক্ষা করি যে আরও একটা সাঁতরাগাছি না ঘটলে কি কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে না? বিধাননগর থেকে সোদপুর, প্রতিটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের পাদানি থেকে যথেষ্ট নিচুতে, ফলে নামার সময় বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়ে যাওয়াও নৈমিত্তিক ঘটনা।
রেলের কাছে যাত্রীরা যে সংখ্যামাত্র তার আরও প্রমাণ শিয়ালদহ থেকে রামপুরহাট ও লালগোলা লাইনে পুরনো রেক তুলে দিয়ে নতুন রেক প্রবর্তন। টয়লেটহীন এই রেকগুলিতে চার-সাড়ে চার ঘণ্টার যাত্রাপথ অতিক্রম করা কী আনন্দময়, তা ভুক্তভোগীই জানেন!
শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য
কালিন্দী, কলকাতা
অব্যবস্থা
সাঁতরাগাছি স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে, সাঁতরাগাছি নিবাসী প্রাত্যহিক রেলযাত্রী হিসেবে কয়েকটি কথা জানাতে চাই। এক, হাজার হাজার মানুষ বাস, ট্যাক্সি ও নানা প্রকার গাড়িতে সাঁতরাগাছি স্টেশনে আসেন লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে। ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মূলত মেদিনীপুর, আমতা,ও দিঘাগামী ট্রেনগুলি দেওয়া হয়। আর ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে দূরপাল্লার ট্রেন। এই ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে , বা ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে, বা ট্যাক্সি বা বাস স্ট্যান্ডে কোথাও কোনও শৌচালয় নেই। দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীদের, যাঁদের মধ্যে বহু মহিলা ও বৃদ্ধ তাঁদের শৌচকর্ম করতে হলে ফুট ওভারব্রিজ পেরিয়ে, ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে প্রায় ১৫০ মিটার পথ পেরিয়ে নতুন এবং একমাত্র শৌচালয়টিতে যেতে হয়। আমি নিজে টিকিট কাউন্টারে ডিসপ্লে করা ফোন নাম্বার ধরে সাঁতরাগাছির স্টেশন ম্যানেজারকে অনুরোধ করেছি, যাতে গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন পে অ্যান্ড ইউজ় টয়লেটটির চাবি খুলে দেওয়া হয়। অনুরোধ করেছিলাম ইউনিয়ন অফিসগুলোতেও যাতে এই প্রাথমিক সুবিধাটুকু দেওয়া যায়। কিন্তু আজ অবধি সেই টয়লেটটি বন্ধ অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে।
দুই, ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার জন্য একটি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। কিন্তু ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বর্তমান এগ্জ়িট পয়েন্টটা এমন জায়গায় যে পিছনের ফুট ওভারব্রিজটি নিষ্ফলা। অতএব, সম্পূর্ণ যাত্রিভার ওই পুরনো একটি ওভারব্রিজে। তিন, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম না ২ নম্বর, দূরপাল্লার ট্রেন কোথায় দেবে এই অনিশ্চয়তায় বহু মানুষ তাদের বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে ফুট ওভারব্রিজেই দাঁড়িয়ে থাকেন। চলাচলের পথ সঙ্কীর্ণ হয়। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই কোনও আরপিএফ পুলিশকে ফুট ওভারব্রিজে ভিড় নিয়ন্ত্রণে চোখে পড়ে না। চার, জগাছা এবং বাকসারা অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমও এই একই ওভারব্রিজ। দুই পারের দু’টি হাইস্কুলে প্রচুর ছেলে মেয়ে এই ওভারব্রিজের মাধ্যমেই যাতায়াত করে। পাঁচ, সঙ্কীর্ণ ব্রিজটির বহু স্থানে কোনও লোহার জাল বা পাত নেই, শুধুই আড়াআড়ি দুই তিনটি রড, তার উচ্চতা ২ ফুটের বেশি নয়। ভিড়ের চাপে, ওর ওপর দিয়ে টপকে মানুষের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
এই অব্যবস্থা নিয়ে, অসম্পূর্ণ পরিকাঠামো নিয়ে কী করে রেল কর্তৃপক্ষ এতগুলো এক্সপ্রেস ট্রেন চালায় এই স্টেশন থেকে? রেলের এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের চিন্তাহীনতা, অদূরদর্শিতা, এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা ও ভাবনার নিদারুণ অভাবের পরিণতিই দুর্ঘটনা।
শোভন সেন
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
যা করা উচিত
অমৃতসরের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটে গেল সাঁতরাগাছি রেল ওভারব্রিজে দুর্ঘটনা। সাঁতরাগাছি এখন যথেষ্ট ব্যস্ত রেল স্টেশন; অসংখ্য ট্রেন এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে, বহু দূরপাল্লার রেলগাড়িরও যাত্রা শুরু এবং শেষ এই স্টেশনেই। এই স্টেশনের কর্মকাণ্ড অতি দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু পরিকাঠামো বাড়তে পারছে না। অতিরিক্ত এবং প্রশস্ত ওভারব্রিজ করতে সময় এবং অর্থের দরকার, ভবিষ্যতে রেল হয়তো তা করবে। কিন্তু যত দিন তা না হয়, এমনকি হলেও এগুলি করা উচিত— এক) অতিরিক্ত গাড়ি এবং যাত্রী যখন প্ল্যাটফর্মে থাকবে, তখন আগে থেকেই মাইকে পুনঃপুনঃ ঘোষণা করা উচিত যে গাড়ি যথেষ্ট সময় স্টেশনে থামবে, যাত্রীরা যেন হুড়োহুড়ি না করে ধীরেসুস্থে ব্রিজ পার করে গাড়িতে ওঠেন। দুই) রাস্তায় যেমন ডিভাইডার থাকে, তেমনি ব্রিজের উপরও ডিভাইডার রাখা যেতে পারে যাতে সবাই বাঁ দিক ধরে চলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চলাচল ওয়ান-ওয়ে হওয়ায় ধাক্কাধাক্কি কম হবে, লোকে সুশৃঙ্খল ভাবে যাতায়াত করবে। তিন) আমাদের দেশে জমির বড় অভাব, তাই অতিরিক্ত রেল লাইন পাতা হয়তো সম্ভব নয়, ফলে রেলগাড়ির সংখ্যা যেমন খুশি বাড়ানো যায় না। ফলে যাত্রী উপচে পড়ে। এ ক্ষেত্রে দুটো গাড়িকে এক সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সিনক্রোনাইজ় করে চালানো সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। সে ক্ষেত্রে এই ট্রেনগুলি প্ল্যাটফর্মে দুই বার থামবে, কিন্তু যাত্রী পরিবহণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। নেদারল্যান্ডসে এমন গাড়িতে চড়েছি।
হরলাল চক্রবর্তী
কলকাতা-৪০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy