Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
State news

এটা রাজনীতির ভাষা!

নীতি এবং আদর্শের বলিষ্ঠ ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যে রাজনীতি, সেখানে কুকথার বা সস্তা মন্তব্যের কোনও ঠাঁই নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪৫
Share: Save:

রাজনীতিতে যখন যুক্তি এবং বুদ্ধির অভাব দেখা দেয়, তখনই শুরু হয় কুকথার স্রোত। নীতি এবং আদর্শের বলিষ্ঠ ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যে রাজনীতি, সেখানে কুকথার বা সস্তা মন্তব্যের কোনও ঠাঁই নেই।

বাংলার রাজনীতিতে এখন কুকথার স্রোত। ডিসেম্বরে বাংলা জুড়ে ‘রথযাত্রা’ শুরু করছে বিজেপি। সেই রথযাত্রায় বাধা দেওয়া হলে রথের চাকায় পিষে দেওয়া হবে বাধাদানকারীকে— এমনই মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। দিলীপ-লকেটদের এই মন্তব্য যে কুকথার বন্ধনীতে পড়ে, তা বলাই বাহুল্য। তবে এতেই শেষ নয়। দিলীপ-লকেটদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘‘লকেট তো মানুষ গলায় পরে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য।’’ এই মন্তব্যের কোনও রাজনৈতিক গভীরতা তো নেই-ই, কোনও মহিলার সম্পর্কে এ হেন চটুল মন্তব্য করা কতটা সমীচীন, সে কথা মন্ত্রীর নিজেরই ভেবে দেখা উচিত ছিল।

বাংলার রাজনীতিতে কুকথার এইসব নমুনা আমরা প্রথম দেখছি, এমন নয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে কুকথা নিক্ষিপ্ত হয়েছে পরস্পরের প্রতি। কিন্তু সে প্রবণতাকে ছাপিয়ে গিয়ে প্রাধান্য বজায় রেখেছে রাজনৈতিক রুচিশীলতা। চটুল বা সস্তা মন্তব্য আগেও বিভিন্ন রাজনীতিকের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি করে পাওয়া গিয়েছে গভীর রাজনৈতিক কথা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিভক্ত ছিল দুটি রাজনৈতিক মেরুতে। বাম ও কংগ্রেস। দুই শিবিরের মধ্যে তিক্ততাও ছিল অপরিসীম। ফলে কুকথাও নিক্ষিপ্ত হয়েছে অনেকবারই। তৃণমূল গঠিত হওয়ার পরেও সে ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আকথা-কুকথার স্রোতকে পিছনে ফেলে মানুষের উন্নতির পন্থা-পদ্ধতিই ছিল প্রধান আলোচ্য তখনও। মানুষের ভাল কিসে, শিল্পে, নাকি কৃষিতে, তা ছিল সে সময়ের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে।

আরও পড়ুন: ‘লকেট তো পরে সৌন্দর্য বাড়াতে’, ফিরহাদের মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

দিন যত গিয়েছে, প্রবণতা তত নিম্নগামী হয়েছে বাংলায়। গভীর রাজনৈতিক মন্তব্য সম্প্রতি বড্ড কম। চটুল কটাক্ষ, সস্তা বক্তব্য, ইত্যাদিরই রমরমা যেন। দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমরা তা নিয়ে চিন্তিত বলে মনে হয় না। তবে সকলেই যদি এরকমই নিশ্চিন্ত এবং নিশ্চেষ্ট থাকেন, তা হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলার রাজনীতির ভাষাটার দিকে করুণার দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE