—ফাইল চিত্র।
সাতটা দশক কাটিয়ে ফেলেছে ভারতীয় গণতন্ত্র। আর সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে এই নিয়ে ১৭ বার। কতটা পথ হেঁটে এসেছে গণতান্ত্রিক ভারত, এর পরেও তা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু রাজনীতিতে অপরিণত আচরণ যেন বাড়ছে দিন দিন। কেন এমন হচ্ছে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা উচিত প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের।
কখনও তৃণমূলের দুই ফিল্মস্টার প্রার্থীকে তুমুল এবং অশালীন ট্রোলের সম্মুখীন হতে হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কখনও বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতীকে আপত্তিকর কটাক্ষে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কখনও রাহুল গাঁধীকে নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে রসিকতার মিম। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বাসিন্দা হিসেবে বার বার গর্ব করি আমরা। ভারতের এই সাধারণ নির্বাচন বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন— সে কথাও আমরা সকলেই জানি। গণতন্ত্রের এই সুবৃহৎ ব্যপ্তি পৃথিবীর আর কোনও প্রান্তে দেখা যায় না। তা হলে নিজেরাই নিজেদের গণতন্ত্রের মাথা হেঁট করে দিই কেন!
গত ৭০ বছর ধরে একটানা মাথা উঁচু করে এগিয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্র। প্রকাণ্ড এক দেশ, ৯০ কোটি ভোটদাতা, একাধিক পর্বে ভোটগ্রহণ— যে বিপুল কর্মকাণ্ড ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে চলে, তা গোটা বিশ্বের কাছে দ্রষ্টব্য ও শিক্ষণীয় বিষয় আজ। ভারতের সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে অন্য অনেক দেশ সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার শিক্ষা নেয়। সেই দেশের নাগরিকদের বা নেতাদের রাজনৈতিক রুচি এত নিম্নগামী হলে মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন হয়।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যাদবপুর এবং বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানকে নিয়ে কদর্য চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রার্থী হিসেবে ওঁদের নাম ঘোষিত হতেই এই ট্রোল শুরু।
বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও রাজনৈতিক কুরুচির শিকার হচ্ছেন। তাঁর প্রসাধন এবং জীবনযাত্রা সংক্রান্ত নিতান্ত ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরপ্রদেশের রোহানিয়ার বিধায়ক সুরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে ‘পাপ্পু’ নামে ডাকার অভ্যাস বিজেপি কর্মীদের অনেক দিনের। এই সম্বোধনেও নিম্নরুচি এবং সস্তা রাজনীতির পরিচয় যথেষ্টই। সাধারণ নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে সেই কুরুচিকে প্রশ্রয় দিতে চাইলেন বিজেপি নেতা তথা হরিয়ানার মন্ত্রী অনিল ভিজ।
আরও পড়ুন: ‘কলপ, ফেসিয়াল করে যুবতী সাজছেন’, মোদীকে কটাক্ষ করায় মায়াবতীকে আক্রমণ বিজেপির
এগুলো কি আদৌ কোনও পরিণত এবং সুস্থ গণতন্ত্রের গণতন্ত্রের লক্ষণ? ভারতীয় গণতন্ত্রের বয়স বাড়ছে না কমছে? সাতটা দশক মাথা উঁচু করে কাটিয়ে দিতে পারে যে গণতন্ত্র, তার কাছ থেকে তো অনেক বেশি রুচিশীলতা কাম্য। এমন নিম্নরুচির ব্যক্তিগত আক্রমণ কোন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় দেয়? শালীনতার সীমা না ছাড়িয়ে বা কুরুচির পরিচয় না দিয়েও প্রতিপক্ষকে তীব্র ভাবে বিদ্ধ করা যায়। তার জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষা-দীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই সুবিশাল গণতন্ত্রে সেই শিক্ষার অভাব নেই, চোখকান খোলা রাখা রাখলেই শিক্ষিত হয়ে ওঠা যায়। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা স্তরের নেতাদের মধ্যে এবং নাগরিকদের একাংশের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আগ্রহ সম্ভবত কম। তাই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতেই নানা পরিসরের চর্চায় দ্রুত স্থান দখল করছে কুরুচি, অশালীনতা। সতর্ক না হতে পারলে নিজেদের নামই ডোবাব আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy