Advertisement
E-Paper

লন্ডন ডায়েরি

দরিদ্রও যাতে শিল্পের স্পর্শ পায়, রাস্কিন তাই শেফিল্ডে তৈরি করলেন ‘গিল্ড অব সেন্ট জর্জ’।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

সংবিধানকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি

ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে রানির সাম্রাজ্যের বাড়বাড়ন্তে সবাই যখন ধন্য ধন্য করছিলেন, তখন শিল্পী, সমালোচক, স্থাপত্য-ইতিহাসবিদ জন রাস্কিন (১৮১৯-১৯০০) ভাবছিলেন অন্য কথা। দেশের এই সাফল্যের মূলে তো গরিবকে শোষণ, প্রকৃতির উপরে কলকারখানার পীড়ন! সম্পদ-সম্পত্তি সবই মুষ্টিমেয়র হাতে। দরিদ্রও যাতে শিল্পের স্পর্শ পায়, রাস্কিন তাই শেফিল্ডে তৈরি করলেন ‘গিল্ড অব সেন্ট জর্জ’। উদ্দেশ্য: সুস্থ গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন। দরিদ্রদের জন্য স্কুল, গ্রন্থাগার, আর্ট গ্যালারি করতে চেয়েছিলেন। স্টেনলেস স্টিলের ছুরি-কাঁটা-চামচ তৈরিতে বিখ্যাত শহরের কাছেই গ্যালারি খুললেন; বললেন, এই গ্যালারি শেফিল্ডের লোহা-শ্রমিকদের জন্য! মহাত্মা গাঁধীকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিলেন রাস্কিন, গাঁধী তাঁর ‘আনটু দিস লাস্ট’ গুজরাতিতে অনুবাদ করেছিলেন, ‘সর্বোদয়’ নামে। রাস্কিনের জন্মের দু’শো বছরে লন্ডনের ঐতিহাসিক বাড়ি ‘টু টেম্পল প্লেস’-এ শুরু হয়েছে তাঁর শিল্পসংগ্রহ নিয়ে প্রদর্শনী ‘জন রাস্কিন: দ্য পাওয়ার অব সিইং’। আছে রাস্কিনের প্রকৃতি ও স্থাপত্য বিষয়ক বহু চিত্র, তাঁর সংগ্রহে থাকা টার্নার থেকে জন হোয়ার্লটন বানির বহু শিল্পকর্ম। মানুষ ভিড় করছেন রোজ, শুরুর দিন এসেছিলেন রাস্কিন-অনুরাগী স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরোও। প্রদর্শনীতে আছে রাস্কিনের ‘দশটা ঘৃণ্য বস্তু’র তালিকাও, তাতে ঠাঁই পেয়েছে পার্লামেন্ট, কারাগারের লোহার গরাদ, টাকা কামাই, এমনকি দেশের সংবিধানও!

নান্দনিক: নানান পাখি, মৃত ওকপাতার চিত্র। জন রাস্কিনের শিল্পসংগ্রহ প্রদর্শনী থেকে

আর কী চাই!

প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কল নিজেদের বাড়ি নতুন করে সাজাচ্ছেন। দেওয়ালে কোন ছবি আর শিল্পকর্মগুলো টাঙাবেন, সে নিয়ে মনে হয় ওঁদের ভাবতে হবে না। রানি বলে দিয়েছেন, তাঁর বিশাল ‘রয়াল কালেকশন’ থেকে ওঁরা ওঁদের বাড়ি সাজাতে যে কোনও কিছু নিতে পারেন। উইনসর কাস্‌ল-এর ফ্রগমোর হাউস, একদা যে বাড়ি ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার মুনশি আবদুল করিমের ঠিকানা, সেখানেই নতুন সংসার পাতছেন হ্যারি-মেগান। ভাগ্য বলতে হবে! চাইলেই ওঁরা পেতে পারেন রেমব্রান্ট, লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি, মিকেলেঞ্জেলো থেকে শুরু করে অ্যান্ডি ওয়ারহল, ডেভিড হকনি, ট্রেসি এমিন-এর অসামান্য কীর্তিও! বা, ৪৫০০০০ আলোকচিত্রের মধ্যে যা ইচ্ছে তা-ই! রানির সংগ্রহে আছে দশ লক্ষেরও বেশি চিত্র, স্কেচ, ভাস্কর্য, আসবাব ও অন্যান্য শিল্পবস্তু।

চন্দন-স্মৃতি

শিল্পী: নাচের পোশাকে চন্দন তারুর

ইন্ডিয়া ক্লাব-এর ‘হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম’ প্রদর্শনীর ভাণ্ডারে বিবিধ রতন। আছে মালয়ালম ব্যঙ্গ-কবিতার রেকর্ডিং, কবিতাটা লিখেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের বাবা চন্দন তারুর, ১৯৫১ সালে ইন্ডিয়া ক্লাব-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। কবিতার বিষয়বস্তু ‘ব্রিটেনে জীবন যেমন’, লেখা হয়েছিল কেরলের লোকনৃত্য ‘ওত্তানহুল্লাল’-এর পরিবেশনা উপলক্ষে। চন্দন পরে কবিতাটা ব্রিটেনে ভারতের প্রথম হাই কমিশনার কৃষ্ণ মেননের সামনে পরিবেশন করেছিলেন, এই ইন্ডিয়া ক্লাবেই। নাচের পোশাকে তাঁর ছবিও আছে। প্রদর্শনীতে আছে ‘ইন্ডিয়া লিগ’-এর পত্রিকা ‘ইন্ডিয়া উইকলি’র কিছু নিবন্ধও। একটা লেখায় লিবারাল পার্টির নেতা জেরেমি থর্প প্রজাতন্ত্র দিবসে বার্তা দিয়েছেন: ‘‘আমার ধারণা, দেশের অর্থনীতি গড়ে তোলার পাশাপাশি গণতন্ত্রের বিকাশে ভারতের যে প্রয়াস, তার সাফল্য বা ব্যর্থতার প্রশ্নটি এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ আর একটা লেখায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেড হিথ লন্ডনে ‘ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’কে বলছেন, ভারতের নতুন প্রজন্মকে জানা এখন খুব জরুরি।

ফতোয়ার ৩০

১৯৮৮-র ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে ইরানের আয়াতোল্লা খোমেইনি ফতোয়া জারি করেছিলেন সলমন রুশদির ‘দ্য সেটানিক ভার্সেস’-এর উপরে। সেই ঘটনার ত্রিশ বছর পূর্তিতে বিবিসি রেডিয়ো ফোর করছে পাঁচ পর্বের তথ্যচিত্র সিরিজ়। উদ্দেশ্য: জাতি-পরিচয়, বাক্‌স্বাধীনতা, ফতোয়া ও এ কালের সহিংস জেহাদের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে দেখা। প্রথম পর্বে দেখানো হয়েছে সত্তর-আশির দশকে ব্রাডফোর্ডের জীবন, এখানেই রাস্তায় পোড়ানো হয়েছিল সেটানিক ভার্সেস-এর কপি। দ্বিতীয় পর্বের উপজীব্য ইরান ও ইরানিয়ান রেভলিউশন। আছে লেখক হানিফ কুরেশি আর রুশদির প্রকাশক বিল বুফর্ড-এর সাক্ষাৎকারও।

London Diaries London Diaries লন্ডন ডায়েরি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy