—নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন-প্রশাসন খেলাটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। সব কিছুরই সীমা থাকা দরকার। কাজ করলে ভুল-ক্রটি হয়। কিন্তু অনবরত ভুল-ক্রুটি হতে থাকা এবং সেই ভুল-ত্রুটির জন্য প্রায় আক্ষরিক অর্থেই বারবার জনসাধারণের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না, কোনও অজুহাতই চলে না। জননিরাপত্তার প্রতি অসীম অবহেলা না থাকলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতে পারে না।
একটু লজ্জা পান এ বার। দায়বদ্ধ প্রতিটি পক্ষকেই বলছি— একটু অন্তত লজ্জিত হন। না হলে আপনাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। কারণ, যে কোনও সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মধ্যেই লজ্জার বোধটা থাকে।
২০১১ সাল, উল্টোডাঙায় ব্রিজ ভেঙে পড়ল। ২০১৬ সাল, বিবেকানন্দ রোডের ব্যস্ত মোড়ে ভয়াবহ ভাবে ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ উড়ালপুল। হতাহতের সংখ্যা এবং আচমকা মাথার উপর থেকে নেমে আসা মৃত্যুর বীভৎসতা স্মৃতিতে উঁকি দিলে আজও শিউরে উঠতে হয়। তাতেও শিক্ষা হয়নি। এ বার মাঝেরহাটের উড়ালসেতু ভেঙে পড়ল। আর কতবার মহানগরের বুকে এই একই ঘটনা ঘটবে, জানা নেই কারও। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রকদের চূড়ান্ত গাফিলতি বা অপদার্থতা বা দুর্নীতি বা নির্লজ্জতার কারণে আর কত প্রাণ যাবে, আর কত রক্ত ঝরবে জানা নেই কারও।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এঁদের কি বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে? জনসাধারণ কিন্তু ভিক্ষা চাইছে না। জননিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা কোনও দয়া বা করুণা নয়। সরকার বা প্রশাসনের দায়বদ্ধতা এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ওটা। এর জন্যই তো জনসাধারণের কাছ থেকে কর নেওয়া হয়। নিজেদের জীবনযাত্রা মসৃণ রাখতে এবং নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে রোজ খরচ করছি আমরা। কর দিচ্ছি সরকারকে। তারপরেও বারবার এই ছেলেখেলা মেনে নেব না। নাগরিকের জীবন, নাগরিকের অধিকার নিয়ে এই নির্লজ্জ ছিনিমিনি খেলা কিছুতেই মানা যাবে না।
সরকার বা প্রশাসন জেনে রাখুন, আমরা আপনাদের উপরে ভরসা করি। আমাদের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তার খেয়াল আপনারা রাখবেন, সেটা আমরা আশা করি। অকারণে আশা করি না, অনধিকারে আশা করি না, আশা করার জন্য খরচও করি। কিন্তু তার বিনিময়ে কিছুদিন অন্তরই ফিরে পাই এইসব ভয়ঙ্কর মুহূর্ত।
আরও পড়ুন: ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট ব্রিজ, মৃত ১, জখম ১৯, ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে আসছে কণ্ঠস্বর
দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের অনেকেই কোটি কোটি নাগরিকের দেওয়া করের অর্থকে নিতান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ ভেবে নিচ্ছেন অসীম নির্লজ্জতায় ডুব দিয়ে। এটা দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হতে পারে না। বারবার সাধারণ নাগরিক ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বেন, আর সকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শুরু হওয়া চাপান-উতোরের দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থেকে অবশেষে সব ভুলে যাবেন, এমনটা কেউ ভেবে নিলে ভুল করছেন। একটু লজ্জা পান। না হলে পরিণতিটা লজ্জাজনক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy