—ফাইল চিত্র।
সংশয়ের কোনও অবকাশ নেই যে, বিরোধী ঐক্যের উচ্ছ্বাসটাকে অসামান্য ভঙ্গিতে মেলে ধরার অবকাশ তৈরি করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আজ সুবিশাল জনসমাবেশকে আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। এই প্রথম বার তৃণমূল চেয়ারপার্সন ব্রিগেড সমাবেশেক ডাক দিলেন বা এই প্রথম বার বিপুল সংখ্যক জনতাকে তিনি ব্রিগেডে সমবেত হতে বললেন, এমন নয়। তা হলে এই সমাবেশ বিশেষ উল্লেখ পাচ্ছে কেন? বিশেষ উল্লেখ পাচ্ছে কারণ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ধারে এবং রাজনৈতিক সমীকরণের ভারে। মমতার ডাকা এই ব্রিগেড সমাবেশ তাঁর অতীতের সমাবেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। নেতা হিসেবে কেউ মনোনীত হন বা না হন, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবিরের তরফে প্রধানমন্ত্রীত্বের মুখ হিসেবে কোনও এক জনকে তুলে ধরা যাক বা না যাক, আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ভূখণ্ডে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধী প্রায় সব শক্তিকে যে অত্যন্ত উজ্জ্বল ভাবে এবং স্পষ্ট ভাবে এক মঞ্চে আনা সম্ভব, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন।
মোদীর বিকল্প কে? বিজেপির সঙ্গে টক্কর নেওয়ার মতো কে আছে? গেরুয়া শিবির থেকে বার বার ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই সব প্রশ্ন। প্রত্যেকটা প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর এই মুহূর্তে বিরোধীদের কাছে সম্ভবত নেই। কিন্তু মোদী-শাহের নেতৃত্বাধীন বিজেপির মতো এক প্রবল পরাক্রমী শক্তির ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করার জন্য যে একটা অভিন্ন রণকৌশল দানা বেঁধে গিয়েছে , বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে শাসকের বিরুদ্ধে যে একটা বড়সড় যৌথ মঞ্চ প্রস্তুত, ব্রিগেড সমাবেশের আগের দিনই তা গোটা দেশকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্রিগেডের এই সমাবেশে মমতা তো ডেকেছেন অনেককেই। আসবেন ক’জন? সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছিল দেশের শাসক শিবির থেকে। ব্রিগেড সমাবেশের আগের দিনই দেশের শাসক দলের সেই সব কটাক্ষকে ম্লান করে দিয়ে কলকাতায় পৌঁছে গেলেন দেশের এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীরা, উত্তরপ্রদেশ ও অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরা, মরাঠা স্ট্রংম্যান, শীর্ষ তামিল রাজনীতিক, এমনকি বিজেপির এক বর্তমান সাংসদ এবং বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের এক মন্ত্রীও। সমাবেশের আগের রাতেই কলকাতা পৌঁছে গিয়ে ভারতীয় রাজনীতির এই মহারথীরা বুঝিয়ে দিলেন, কলকাতার এই সমাবেশকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাঁরা। আজ সমাবেশ শুরুর আগে আরও অনেকে পৌঁছে ওই একই বার্তাকে আরও মজবুত করবেন। ঠিক যে ভাবে মজবুত করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রশ্নে তৃণমূলের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন মতান্তর রয়েছে কংগ্রেসের। বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলের সঙ্গে প্রকট মনান্তর রয়েছে কংগ্রেসের। তা সত্ত্বেও চিঠি পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশকে সমর্থন জানালেন রাহুল গাঁধী, পাঠাচ্ছেন প্রতিনিধিও। অর্থাৎ সমাবেশ শুরুর আগেই বিজেপির ছুড়ে দেওয়া বেশ কয়েকটা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে ফেলেছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন।
আরও পড়ুন: ইন্দিরা, জ্যোতি থেকে মমতা নিজে, জনসমুদ্রে সব ভেসে যাওয়ার মুখে, ফের ইতিহাসের দরজায় ব্রিগেড
ব্রিগেডের এই সমাবেশে কত ভিড় হবে, ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রথম সারির রাজনীতিকরা ব্রিগেডের এই সমাবেশ মঞ্চ থেকে কী বলবেন, এই সমাবেশ বিরোধী ঐক্যকে কতটা মজবুত করতে পারবে, মজবুত বিরোধী ঐক্যের ছবি বিজেপিকে কতটা বেকায়দায় ফেলবে, এ সব প্রশ্ন নিয়ে তর্ক উত্থাপিত হতেই পারে। কিন্তু বিজেপিকে রোখার জন্য প্রয়োজন হলে সব তর্ক, সব মতান্তর, সব মনান্তর দূরে সরিয়ে রেখে এতগুলো দল যে একবিন্দুতে চলে আসতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা এই কর্মসূচি তা প্রমাণ করে দিল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বদ্ধতা বলে কিছু হয় না— আজকের ব্রিগেড সমাবেশকে ঘিরে গোটা দেশে তৈরি হওয়া তৎপরতা, কৌতূহল এবং আগ্রহ সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। নরেন্দ্র মোদী যেমন প্রবল পরাক্রমে রয়েছেন, তেমনই তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষও যে রয়েছে, কলকাতায় রাজনৈতিক নক্ষত্রের সমাহার তা প্রমাণ করছে। শাসক দোর্দন্ডপ্রতাপ হলেই তাঁর বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এই তত্ত্বকে মান্যতা দেয় না। নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে একক নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাক বা না যাক, যৌথ নেতৃত্বও যে নিজেকে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তা আরও এক বার স্পষ্টভাবে ধরা দিতে পারল। এই ব্রিগেড সমাবেশই লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে চলেছে, এই ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই দিল্লির ভাগ্য নতুন করে লেখা শুরু হয়ে যাচ্ছে— এই রকম কোনও কথা বলার সময় আসেনি বা অবকাশ তৈরি হয়নি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যদি নানা রকম ক্ষোভ থেকে থাকে, তা হলে সেই ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটার অবকাশও যে রয়েছে, নির্বাচনী আস্থাজ্ঞাপন করার একটা বিকল্প অবকাশও যে রয়েছে, কলকাতা থেকে তা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy