Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

সংসদ কী জন্য? সাংসদরা কি ভুলে যান মাঝেমধ্যেই?

সংসদের অন্দরের দৃশ্য দেখলে কিন্তু সংশয় জাগে। সৌভাগ্যের উপলব্ধি বা দায়িত্বশীলতার বোধ— কোনওটাই কি রয়েছে সাংসদদের? কিছুতেই নিশ্চিত হওয়া যায় না। শুক্রবার থেকে একটানা হট্টগোল চলছে লোকসভায়।

লোকসভায় বিরোধীদের হট্টগোল। ছবি: পিটিআই।

লোকসভায় বিরোধীদের হট্টগোল। ছবি: পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। জনসংখ্যা ১৩০ কোটির আশেপাশে। আর দেশের সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক সভায় সেই ১৩০ কোটি নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার মাত্র ৭৯০ জনের— লোকসভায় ৫৪৫ জন, রাজ্যসভায় ২৪৫ জন।

গণতন্ত্রে জনগণই ঈশ্বর, অত্যন্ত প্রচলিত এ বাক্যবন্ধ। সেই ঈশ্বর কতটা অসীম সৌভাগ্য বরাদ্দ করলে ১৩০ কোটির মধ্যে থেকে উঠে এসে প্রথম ৭৯০-তে ঠাঁই পাওয়া সম্ভব, সাংসদদের মধ্যে সে উপলব্ধি থাকা জরুরি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর হয়ে সর্বোচ্চ আইন সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে কতখানি দায়িত্বশীলতা বর্তায় কাঁধে, সে বোধ থাকাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সংসদের অন্দরের দৃশ্য দেখলে কিন্তু সংশয় জাগে। সৌভাগ্যের উপলব্ধি বা দায়িত্বশীলতার বোধ— কোনওটাই কি রয়েছে সাংসদদের? কিছুতেই নিশ্চিত হওয়া যায় না। শুক্রবার থেকে একটানা হট্টগোল চলছে লোকসভায়। অধিবেশনের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে রয়েছে। জনস্বার্থ সংক্রান্ত যে সব প্রস্তাবনায় জনপ্রতিনিধি সভার সিলমোহর দরকার, সেই সব প্রস্তাবনাই আটকে রয়েছে। আটকে রয়েছে অনাস্থা প্রস্তাবও। বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতি আস্থা নেই অনেকগুলি বিরোধী দলের। সেই কারণেই অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে। অনাস্থা প্রস্তাব যে কোনও সাধারণ বা রুটিন কার্যকলাপের অঙ্গ নয়, তা যে অত্যন্ত গুরুতর বিষয়, সে কথা সাধারণ নাগরিকও বোঝেন। কিন্তু সাংসদরা সম্ভবত তা বোঝেন না, অথবা বুঝেও অবুঝ সেজে থাকেন।

স্পিকার সুমিত্রা মহাজন যত্পরোনাস্তি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। টানা কয়েক দিন ধরে লোকসভায় যা চলছে, তাকে স্পিকার ‘বিশৃঙ্খলা’ আখ্যা দিয়েছেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সাংসদদের যেন ভ্রূক্ষেপই নেই। হই-হট্টগোলের লক্ষ্য নিয়েই যেন রোজ সকালে সংসদে ঢুকছেন এক দল জনপ্রতিনিধি। পরিস্থিতি রোজ স্পিকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। রোজ সভা মুলতুবি হয়ে যাচ্ছে। এ সব কি আদৌ কোনও গণতান্ত্রিক কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে? সংসদ তো প্রস্তাবনা, আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, তর্ক-বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। যাবতীয় চর্চার সম্ভাবনাকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য তো সংসদ নয়। এই সাধারণ এবং বুনিয়াদি সত্যকে অস্বীকার যাঁরা করেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার উপযুক্ত কি না, সে প্রশ্ন তুলতেই হচ্ছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গত কয়েক দিন ধরে সংসদে যা চলছে, তা জনস্বার্থের উপরে প্রত্যক্ষ আঘাত। সংসদের অধিবেশন চালানো বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ। জনসাধারণের করের অর্থেই সেই খরচ মেটানো হয়। কিন্তু জনসাধারণের জীবন মসৃণ হতে পারে, এমন কোনও কাজ লোকসভায় হতে দেওয়া হচ্ছে না গত কয়েক দিন ধরে।

যাঁরা সংসদ অচল রেখেছেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ করছেন। সরকার বা মন্ত্রিসভার কার্যকলাপের উপরে ভরসা না থাকলে অনাস্থা জ্ঞাপন করা বিরোধী দলের অধিকার। লোকসভা অচল রেখে সেই অধিকার প্রয়োগের পথে বাধা তৈরি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মুলতুবি! ফের আজ অনাস্থা প্রস্তাব

লোকসভায় যা চলছে, তা কোনও নতুন ছবি অবশ্য নয়। যে কোনও অধিবেশনে এবং সংসদের যে কোনও কক্ষে এই ছবি দেখা যায় আজকাল। গঠনমূলক আলোচনার ছবি দিন দিন অমিল হয়ে উঠছে। হট্টগোলের কুনাট্যরঙ্গ দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক কালে প্রায় সব অধিবেশনকেই পণ্ড করে দেওয়ার নীতি নিচ্ছে একাংশ। এই নীতি যদি রেওয়াজ হয়ে ওঠে সংসদে, খুব বড় বিপদ আমাদের অপেক্ষায় থাকবে।

মনে রাখা দরকার, গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান বিপন্ন হলে গণতন্ত্রও বিপন্ন হবে। সাধারণ নাগরিকের চেয়ে অনেক বেশি করে এ কথা মনে রাখা দরকার তাঁদের, যাঁরা ওই সর্বোচ্চ আইনসভায় পদার্পণ করেছেন সাধারণ নাগরিকের স্বার্থরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE