Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভারসাম্যের কঠিন পরীক্ষা আজ, উতরোতেই হবে মোদী-জেটলিদের

দুষ্কর ভারসাম্যের খেলায় আজ নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার মুখে অরুণ জেটলি। জটিল এবং বিপদসঙ্কুল এক আবর্ত, সেই আবর্তের প্রবল ঘূর্ণনের মধ্যে দাঁড়িয়েই লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট রাখার দায় আজ অর্থমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীরও বটে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

দুষ্কর ভারসাম্যের খেলায় আজ নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার মুখে অরুণ জেটলি। জটিল এবং বিপদসঙ্কুল এক আবর্ত, সেই আবর্তের প্রবল ঘূর্ণনের মধ্যে দাঁড়িয়েই লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট রাখার দায় আজ অর্থমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীরও বটে।

উত্তরপ্রদেশের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য এখন বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে। একই অবস্থানে আরও চার রাজ্য। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ— ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যের জনমতকে প্রভাবিত করার মতো কোনও ঘোষণা বাজেটে থাকতে পারবে না। বিচারবিভাগও চায় না, সরকার তেমন কিছু করুক। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে সুরক্ষিত থাকতে এই পাঁচ রাজ্যে ভাল ফল করা ভারতের বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। তাই যে ভাবেই হোক, নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালকে ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজে বার করতেই হবে আজ জেটলিকে। ভারসাম্যের প্রথম খেলাটা এই পর্বে।

ভারসাম্য রক্ষার দ্বিতীয় লড়াই সংস্কারের প্রশ্নে। ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়ার। প্রতিশ্রুতি পূরণের কোনও উল্লেখযোগ্য নিদর্শন গত আড়াই বছরে সৃষ্টি হয়নি। তাই সংস্কারমুখী বাজেট চেয়ে শিল্পমহলের তরফ থেকে হিমালয়প্রমাণ চাপ রয়েছে সরকারের উপর। কিন্তু ঠিক উল্টোটা চায় সঙ্ঘ। জনপরিসরে রাজনৈতিক অস্তিত্ব সুদৃঢ় করাই সঙ্ঘের প্রধান লক্ষ্য। বাজেটের সংস্কারমুখীনতা নয়, সঙ্ঘের একমাত্র লক্ষ্য বাজেটের জনপ্রিয়তা। সে চাহিদাকেও নস্যাৎ করার জায়গায় নেই নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা। অতএব সংস্কার চাই, জনমনোরঞ্জনও চাই।

তৃতীয়ত, ভারসাম্য চাই মুদ্রা প্রত্যাহার উত্তর পরিস্থিতির মোকাবিলার প্রশ্নেও। আচমকা নোট বাতিলের পদক্ষেপ দেশকে যে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন করেছে, বাজেটে তার ক্ষতিপূরণ জরুরি। সত্যিই যদি ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর ইচ্ছা থাকে, তা হলে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু তাতে অন্য এক ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। মুদ্রা প্রত্যাহারজনিত হয়রানি সাধারণ্যে অসন্তোষের গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। রাজকোষ ঘাটতির কথা ভাবতে গিয়ে সেই ক্ষতস্থানকে ভুলে গেলে ঘোর বিপদ। অতএব অসন্তোষের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে খুশি করার মতো কিছু ঘোষণা বাজেটে থাকা খুব জরুরি। আবার রাজকোষের ক্ষত মেরামতও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এতগুলি ক্ষেত্রে ভারসাম্য সুনিশ্চিত করার পর, এক সম্পূর্ণ নতুন সূচনার কথাও মাথায় রাখতে হবে সরকারকে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এ বারের বাজেট এক নতুন সূচনা। রেল বাজেট এ বার মিশে গিয়েছে সাধারণ বাজেটে। বেশ সহজে বিপুল রাজনৈতিক লাভ ঘরে তোলার এক বিরাট হাতিয়ার ছিল রেল বাজেট। এ হেন রেল বাজেটকে সাধারণ বাজেটে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে নিঃসন্দেহে এক বলিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু সেই বলিষ্ঠতা যাতে দলের রাজনৈতিক সক্ষমতায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলি, সুরেশ প্রভুদের নিশ্চয়ই সে কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে।

সর্বোপরি, বাজেটকে আবার প্রাসঙ্গিক করে তোলার একটা চ্যালেঞ্জও খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে এই মন্ত্রিসভার সামনে। দীর্ঘ দিন ধরেই বাজেটে ঘোষিত পরিকল্পিত ব্যয়ের তোয়াক্কা না করে বছরভর অপরিকল্পিত খাতের আওতায় ভূরি ভূরি প্রকল্প ঘোষণার প্রবণতা বাড়ছিল। এর জেরে বাজেট ভাষণ ক্রমশ তার গুরুত্ব হারাচ্ছিল। এ বার মুদ্রা প্রত্যাহার উত্তর পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এতগুলি বড় বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন যে বাজেটে ঘোষণা করার মতো নতুন কিছু খুব একটা নেই বলে অনেকেই মনে করছেন। এই নেতিবাচক ধারণা মুছে দিয়ে বাজেটকে এ বার কতটা প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারেন মোদী-জেটলি, তা অবশ্যই পরীক্ষণীয়।

তাই আবার বলি, কঠিন পরীক্ষা আজ। অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক সুতোর উপর দিয়ে হাঁটছেন যেন মোদী-জেটলিরা। পা টলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। কিন্তু থামার উপায় নেই। কিনারা মিলবে কি? উত্তরের প্রতীক্ষায় গোটা ভারতই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE