শিল্পহীন, কর্মসংস্থানহীন, স্বপ্নহীন এই রাজ্য এখন তারুণ্যকে ঠেলে দিচ্ছে সীমানার বাইরে। —নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হল শুক্রবার। উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ণ নির্বিশেষে, অভিনন্দন সব ছাত্র-ছাত্রীকে যাঁরা এই পরীক্ষায় বসেছিলেন। এই দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির বিচারে যাঁরা এই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা সৌভাগ্যবান, উত্তীর্ণতার মাপকাঠির ঊর্ধ্বে তাঁরা সবাই অভিনন্দনযোগ্য।
কিন্তু তার পর? কতটা পরিসর তৈরি করে দিতে পারছি আমরা এই তরুণদের জন্য? পশ্চিমবঙ্গের কথাটাই ধরে নেওয়া যাক না কেন। সাড়ে ৬ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হলেন এ বার। এর পর তাঁদের গন্তব্য কী, কোথায়? উচ্চতর শিক্ষার জন্য অবকাশ সঙ্কুচিত, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিউতি গজিয়ে ওঠা বেসরকারি নানা মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কিছু বা পথের সম্ভাবনা— ভাবনাটা এত দূর পর্যন্তও প্রসারিত করা যায়। তার পর আসে এক অনির্দেশ্য যাত্রা, যেখানে আর যাই হোক, আবাল্যলালিত শিকড়সম্ভূত পরিচিত ভূমির গন্ধ নেই। ক্রমাগত এবং আরও ক্রমাগত ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এ পরিণত হতে থাকা এ রাজ্য শুধু দেখতে থাকবে মেধা-অধ্যবসায়-শক্তির ক্রমবর্ধমান বর্হিগমন। এ রাজ্যে অবকাশ নেই এই সদ্য উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সন্তানদের লালন এবং ধারণ করে রাখার ক্ষমতা।
শিল্পহীন, কর্মসংস্থানহীন, স্বপ্নহীন এই রাজ্য এখন তারুণ্যকে ঠেলে দিচ্ছে সীমানার বাইরে। আজন্মস্মৃতিমাখা গ্রাম-গঞ্জ-নাগরিক পাড়ার সমস্ত ছাপ ছুড়ে ফেলে নবীন প্রজন্মকে বাধ্য করছি সীমানাপারে এক অনির্দেশ্য আলোক উৎসের সন্ধানে ধেয়ে যাওয়ার জন্য। সেই আলোক উৎস, দুর্ভাগ্য আমাদের, এই পশ্চিমবঙ্গে কমই দেখাতে পারছি আমরা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: ফার্স্ট বয়ের দিনে পড়াশোনা, রাত জেগে নাটকের মহড়া আর গান
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে প্রথম দশে না থাকার মনখারাপটা আজ থেকে উধাও সেকেন্ড বয়ের
আরও পড়ুন: কঠিন অসুখ আর চরম দারিদ্রকে হারিয়ে ৭০% বাঁকুড়ার আশিসের
তবু স্বপ্ন থাকে, তবুও স্বপ্নসন্ধানী হয় আঠারো-কুড়ির প্রজন্ম, তবু দেখা যায় প্রতিস্পর্ধার কিছু চিহ্ন এই প্রজন্মের কাছেই। এই স্পর্ধাই অতএব দিক্নির্দেশ করুক এই রাজ্যের, যে রাজ্য মেধায় ও মননে, সম্পদে ও প্রতিভায়, ঐতিহ্যে ও বিপ্লবে আধুনিক থেকে এসেছে চিরকাল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করার অঙ্গীকার নিয়েছিলাম আমরা বহু দিন আগে। কবিতার পৃষ্ঠা নেমে আসুক বাস্তবের মাটিতে। আরও এক বার, ঘুরে দাঁড়াই আমরা। সতীদাহে অথবা বাল্যবিবাহে, বিধবাবিবাহে অথবা বর্গাদারের প্রশ্নে যেমনটা বারংবার পথ দেখিয়েছি আমরা। আরও এক বার সে পথ দেখাক পশ্চিমবঙ্গ। বাসযোগ্য হোক এই ভূমি। আমাদের উত্তরপুরুষের কাছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy