Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ১

বুঝে নেওয়ার দায় আমাদের সকলেরই

রাজনৈতিক দলেরা নিজেদের হিসেব মতো লড়ুন। দলের বাইরে দাঁড়িয়ে যাঁরা মনে করছেন পশ্চিমবাংলার গণতন্ত্র আক্রান্ত, তাঁদের সামনে আরও এক বার সুযোগ এসেছে। প্রশ্ন করার, একলা হওয়ার সুযোগ।রূ  পম’ নামের একটি শারদপত্রিকা থেকে ডাকে একটি চিঠি এসেছে। শারদপত্রিকা মানে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতি বছরে, মাত্র এক বার প্রকাশিত হওয়া বা হতে পারা একটি ‘পত্রিকা’। ১৯৮১ সালে এই ক্লাবটি তৈরি হয়েছিল। ‘রূপম’ সম্পর্কে আমার যেটুকু ‘জানা’, তা হল ওই ‘চিঠি’র মারফত। পত্রিকা সম্পাদক সৈয়দ মৈনুদ্দীন হোসেন লিখেছেন: ‘...আমরা থাকি বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার অন্তর্গত মাসড়া গ্রামে।

‘নিজেরাই মারামারি করছি, ঘরে-বাইরে মরছি।’ বিধাননগর, ৩ অক্টোবর ২০১৫। ছবি: সুমন বল্লভ

‘নিজেরাই মারামারি করছি, ঘরে-বাইরে মরছি।’ বিধাননগর, ৩ অক্টোবর ২০১৫। ছবি: সুমন বল্লভ

কৌশিক সেন
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

রূ  পম’ নামের একটি শারদপত্রিকা থেকে ডাকে একটি চিঠি এসেছে। শারদপত্রিকা মানে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতি বছরে, মাত্র এক বার প্রকাশিত হওয়া বা হতে পারা একটি ‘পত্রিকা’। ১৯৮১ সালে এই ক্লাবটি তৈরি হয়েছিল। ‘রূপম’ সম্পর্কে আমার যেটুকু ‘জানা’, তা হল ওই ‘চিঠি’র মারফত। পত্রিকা সম্পাদক সৈয়দ মৈনুদ্দীন হোসেন লিখেছেন: ‘...আমরা থাকি বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার অন্তর্গত মাসড়া গ্রামে। এই গ্রাম বীরভূম জেলার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে, যার গা ঘেঁষে আছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। এক অবহেলিত খরাপ্রধান অঞ্চল, যার সিংহভাগ বাসিন্দাই আদিবাসী-সাঁওতাল। আমাদের গ্রাম হতে নিকটবর্তী রেল ষ্টেশন, ‘মল্লারপুর’ ১০ কিমি আর থানা রামপুরহাট হতে ২৩ কিমি দূরে, এক পরিকাঠামোবিহীন গ্রাম, সেখানে পোষ্ট অফিস নাই, ব্যাঙ্ক নাই, এমনকি এখনকার বহুলভাবে ব্যবহৃত A.T.M পর্যন্ত নাই। রাস্তার অবস্থা তথৈবচ...’ চিঠিতে এর পর রয়েছে কিছু তথ্য, যেমন অতীতে এখানে লৌহশিল্প গড়ে উঠেছিল, যার নিদর্শন আজও আছে। আছে জেলার প্রাচীনতম শিবমন্দির। কিন্তু তা রয়ে গিয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। কেউ কোনও দিন এর মূল্য দেয়নি।
এর পর, ‘...এই গ্রামেই আমরা হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে গড়ে তুলেছি একটা ক্লাব— ‘মাসড়া রূপম কালচারাল ক্লাব’, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজ থেকে ৩৪ বছর আগে। এ বছরও প্রতি বছরের মতো কোজাগরী পূর্ণিমার পরদিন হতে যার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উৎসব শুরু হবে— চলে তিনদিন। গ্রামেরই ছেলেমেয়েদের কবিতা, আবৃত্তি, গান, মেয়েদের নাটক, ছেলেদের দ্বারা অভিনীত যাত্রা-গান-গুণীজন সংবর্দ্ধনা প্রভৃতির মাধ্যমে গোটা গ্রাম উৎসবের মেজাজে মেতে ওঠে। আর সবচেয়ে গর্বের কথা— আমাদের এই ক্লাব— জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে এক অরাজনৈতিক সংগঠন— যার সদস্য এই গ্রামের সবাই...’

গ্রামটাকে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। প্রত্নতত্ত্বের আকরে ভরা, এ দিকে, ও দিকে নানান ঢিপি। মাথার ওপর দপদপে সূর্য। খাঁ-খাঁ করছে প্রান্তর। দূরে, খুব দূরে একটুখানি সবুজের আভাস। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, শাঁখ বাজে, আজানের শব্দ ভেসে আসে। বুড়ো শিবমন্দিরের আশেপাশে ঝিঁঝিঁর আওয়াজ আর চাপ চাপ অন্ধকারে ঢেকে যায় গ্রামটি। এই কি তবে শ্রীজাত-র সেই ‘ছাই রঙের গ্রাম’? ভাবছিলাম, এই গ্রামে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বা গেরুয়া রঙের ভোট নিশ্চয়ই পড়ে ব্যালট বাক্সে। তবু কোজাগরী পূর্ণিমার পর দিন, যখন কোনও কিশোর অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে আবৃত্তি করে, করতে করতে লাইন ভুলে যায়, উৎসুক চেয়ে থাকা দর্শকদের দিকে অপ্রস্তুত ভাবে খানিকক্ষণ দেখে নিয়ে, ফের শুরু করে, কোনও কিশোরী ঈষৎ ভুল স্কেলে গানটা ধরে ফিরে আসে ঠিক সুরে, নাটকের সংলাপ আচম্বিতে মনে পড়া কোনও অভিনেতা যখন গা ঝাড়া দিয়ে কণ্ঠস্বরকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যান, তখন তা বহুচর্চিত, বহু অনুশীলনে সমৃদ্ধ, বহু খ্যাতনামা শিল্পীর তুলনায় বিবর্ণ হলেও অন্য এক আলোতে ঝলমলিয়ে ওঠে। এমন আলো পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’তে বসে আমরা যখন ভুলতে বসেছি শিল্প কী, কেন আঁকছি, কেন গাইছি বা লিখছি, কেন অভিনয় করছি, তখন গ্রামে, মফস‌্সলে এমন বহু ছাইরঙা মানুষ লিখছেন, গাইছেন, নাচছেন, অভিনয় করছেন সম্পূর্ণ অন্য এক তাগিদ থেকে। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য যেমন মুখের ভাষা ও লিখিত ভাষার সাহায্য নিয়েছে, তেমনই মানুষ তার ভাবের কথা, ভালবাসার কথা, রাগ, দুঃখ, অভিমানের কথা অন্য এক জন মানুষের সঙ্গে আদানপ্রদান করার জন্য অন্য রকম এক ভাষা আবিষ্কার করেছে। সে ভাষা শিল্পের ভাষা। সেই ভাষাকে দ্রুত, খুব দ্রুত গ্রাস করেছে ব্যবসা। এসেছে কোনটা, কতটা বাজারে চলল বা চলছে তার মূল্যায়ন। জানি, এ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মনে হয়, আমরা যারা নিজেদের শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিই, আমরা ঠিক ভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারছি তো অন্যদের সঙ্গে, শ্রোতার সঙ্গে, দর্শকের সঙ্গে?

কোনটাতে মানুষের মঙ্গল, কোনটাতে নয়, এই নিয়ে গভীর ভাবে ভাবার দায় শিল্পীদেরও আছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পরবর্তী কালে, নাগরিক সমাজের উজ্জীবিত চেহারা আমরা দেখেছিলাম। তার প্রতি যে সম্মান তৈরি হয়েছিল, তা আজ নানা কারণে গুরুত্বহীন হয়েছে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে শিল্পীদের বৃহত্তর দায়বদ্ধতা নিয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সন্দেহও। ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের সীমাহীন ‘লোভ’-এর চেহারাটা দেখে সবাই চমকে উঠছি। কেন চমকে উঠছি? যে দলটার নেতা-কর্মীরা এক সময় মার খেয়েছেন, হেনস্তার শিকার হয়েছেন, খুন হয়ে যাঁদের দেহ মাটির গভীরে কঙ্কাল হয়ে গিয়েছে, সেই দল ক্ষমতায় আসার পর নানান ভাবে প্রতিশোধ নিতে চাইবে— এই ভাবেই তো পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস তৈরি হয়েছে, এ আর নতুন কী!

কিন্তু আসলে ২০১১ সালে পশ্চিমবাংলার মানুষ তো শুধু রাজনৈতিক রংবদলটাই চাননি, চেয়েছিলেন বহু দিন ধরে গড়ে ওঠা একটা স্থবির ও বিপজ্জনক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পালটা মার দেওয়ার কথা বলবে না, পুলিশ-প্রশাসনের চোখে দলীয় বাধ্যবাধকতার কালো কাপড় পরিয়ে রাখবে না, অনুব্রত, মনিরুল, মুন্না, বিজন (জন)-দের লালন করবে না। সেটা হল না। আমরা-ওরার রাজনীতি অমোঘ চেহারা নিল। সব থেকে পীড়াদায়ক হয়ে উঠল সমাজের অনুভবী মানুষদের একটা বড় অংশের নীরবতা। সেই নীরবতা সৃষ্টি করল আরও বড় ও ব্যাপক বিভাজন ও শত্রুতার ইতিবৃত্ত।

এই মুহূর্তে পশ্চিমবাংলার চেহারা সংকটপূর্ণ ও ভীতিপ্রদ। অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে লুম্পেনরা মাত্রাছাড়া। প্রতি দিন নানা অনিশ্চয়তায় বেঁচে থাকা, খেটে খাওয়া মানুষ বিপর্যস্ত। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার সম্পর্কে মানুষের চাপা হতাশ্বাস স্পষ্ট। এই সমস্ত কিছুর প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে পুরসভা নির্বাচন ও সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন। আমরা শত চেষ্টা করলেও তো এর আঁচ থেকে সরিয়ে রাখতে পারব না নিজেদের। কত ক্রিকেট দেখব? কত আলোচনা করব মেসি বা রোনাল্ডোর বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে? শাহরুখ, সলমন নিয়ে কত সহস্র বার মাতিয়ে তুলব সান্ধ্য আড্ডা? খেলা, কবিতা, গান, সিনেমা, থিয়েটার, পরচর্চা, ক্রমশ বাড়তে থাকা ঢাকের আওয়াজ, সব কিছু চেটেপুটে নেওয়ার পরও যে জীবন, যে জীবনের অনিশ্চয়তা প্রতি রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখায়, সেই সত্য ও নিরেট জীবনের দিকে তো মুখ ফেরাতেই হবে। কী করব আমরা? কী ভাবে স্থির করব যে কেমন হবে আমাদের সন্তানসন্ততিদের ভবিষ্যৎ?

ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আগে ও তার পরেও কি থেকে যায় কিছু? কী থাকে? কেমন ভাবে থাকে? যাঁদের জীবন আমার থেকেও অনিশ্চিত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য যা প্রয়োজন তা-ও যাঁদের কাছে অধরা, সেই অসহায় মানুষরা ভোট দেন না, তাঁদের দিয়ে ভোট দেওয়ানো হয়, কখনও প্রচারের ঝকমকে আলোয় তাঁদের চোখ ঝলসে দিয়ে, কখনও বা সরাসরি বন্দুক-বোমা-পিস্তলের নলটা তাঁদের মাথায় ঠেকিয়ে দিয়ে, চির-অবহেলিত, অসহায়, ফাঁদে পড়া সেই মানুষগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে শুধুই কতকগুলো সংখ্যা।

সমাজের যে অংশে ‘আমরা’ বাস করি, যাদের বলা যায় সুবিধাভোগী শ্রেিণ, সেই আমরা এক দিকে যেমন নানা রকম অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত, তেমনই আবার ‘সংখ্যালঘু’ও বটে, আমাদের ভোটে নির্ধারিত হয় না ক্ষমতার ভূতভবিষ্যৎ। আমরা যারা কোনও না কোনও ভাবে মানুষের কাছে পরিচিত মুখ, এই অংশটাকে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো। শাসনে থাকা দল ও বিরোধী শক্তি, উভয়েই। এই তথাকথিত আমরা দুই বা তিন টুকরোয় ভাগ হয়ে যাই, শাসক ও বিরোধীরা আমাদের ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন। শাসকের যেহেতু ক্ষমতা সীমাহীন, সেহেতু তাদের পক্ষে থাকা টুকরোটা ক্ষমতার আশীর্বাদ ও সুবিধা অনেকটাই পান। ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থাকা অংশটি স্বভাবতই সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত, কিন্তু তাদের থাকে যথেচ্ছ পরিমাণে বাক্‌স্বাধীনতার সুযোগ। তারা ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মিছিল করতে পারে, কবিতা-গান লিখতে পারে, থিয়েটার করতে পারে, শাসকদল তাতে বাধা দিলে গণতন্ত্র আক্রান্ত বলে টেলিভিশন চ্যানেলে তুফান তুলতে পারে। সমাজ তাদের প্রতিবাদী হিসেবে সম্মান দেয়। এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। তবু যদি একটু ভাবি, দেখব, এ এক মজার খেলা। শাসক ও বিরোধী দলগুলি কেমন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আমাদের কাজে লাগিয়েছে, লাগাচ্ছে।

বামফ্রন্ট সরকারকে গদিচ্যুত করার জন্য পশ্চিমবাংলার আপামর মানুষ ‘পরিবর্তন’ চেয়েছিলেন। সেই আকাঙ্ক্ষা, আমি আজও বিশ্বাস করি, ঠিক ছিল। মানুষ তখন প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে থাকা মানুষজনদের ওপর অনেকটা আস্থা রেখেছিলেন। আমাদের উচিত ছিল ‘শাসক-বিরোধী’ খেলার অংশ না হয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের একটা পরিসর বা মঞ্চ তৈরি করা। যেটা করা গেলে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা ও আন্দোলন করার পাশাপাশি আমরা তৃণমূল সম্পর্কেও সচেতন থাকতে পারতাম।

সামনে আবারও নির্বাচন। আমাদের সকলেরই দায় আছে, বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে কোন পথে হাঁটবে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ। আমরা, যারা শিল্পী বলে পরিচয় দিই নিজেদের, এখনও, নানান মোহভঙ্গ সত্ত্বেও যাদের ওপর মানুষের সামান্য বিশ্বাস আছে, সেই ‘আমাদের’ উচিত একত্রিত হওয়া। সৈয়দ মৈনুদ্দীন হোসেনের মাসড়া গ্রামের মতোই বহু ছাইরঙা গ্রাম তৈরি হোক আমাদের মনে, লাল নীল সবুজের খেলা তো অনেক হল।

সল্টলেক, রাজারহাট, আসানসোল, বালি, শিলিগুড়ি পুরনির্বাচন প্রমাণ করে দিল তৃণমূল-আশ্রিত গুন্ডারা এমনটাই করবে, আর তৃণমূল-আশ্রিত বুদ্ধিমান মানুষজনেরা নীরবতা পালন করবেন, ঠিক যেমন ভাবে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর-এর পর সিপিআইএম আশ্রিত গুণিজনেরা নীরবতা পালন করেছিলেন এবং তার পর অন্যায়ের স্বপক্ষে যুক্তি সাজিয়েছিলেন।

টেলিভিশনের পর্দায় সাংবাদিকদের মার খেতে দেখে বা ‘বাস্তববাদী’ পুলিশকর্তাদের নির্লজ্জতা দেখে, তখনকার শাসক এবং এখনকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মার খেতে দেখে শিউরে ওঠাটাই স্বাভাবিক। কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে, মন বলে ‘পক্ষ নিন’, ‘পক্ষ নিন’। কার পক্ষ নেব? কাদের ওপর আস্থা রাখব? তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের হুংকারে যেমন বুক কাঁপে তেমনই ভয় পাই যখন দীর্ঘদিন বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা নেতা-কর্মীরা নিঃশব্দে তৃণমূল-এ যোগ দেন। বিমানবন্দরের নিরালায় দীর্ঘ দিনের বাম নেতা তৃণমূল শিবিরে যোগ দেওয়ার পর্বটুকু সেরে নেন। ভয় লাগে, কারণ পরিষ্কার হয়ে যায়, একটা বামপন্থী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার ভিতরেই যদি এত ক্ষমতার লোভ থাকে, এত আদর্শহীনতার দৈন্য থাকে, তবে কাদের ওপর আস্থা রাখবেন সাধারণ মানুষ? দলের এমন সংকটপূর্ণ অবস্থায় ওই নেতার তৃণমূলে যোগদান কি তৃণমূলের গুন্ডাদের হাত মার খাওয়ার চেয়েও ভয়ানক নয়?

সময় আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। আবারও। রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের সাধ্যমত, তাঁদের নিজেদের হিসেব মতো লড়াই করুন, কিন্তু সচেতন, সংবেদনশীল মানুষেরা, যাঁরা সরাসরি রাজনীতি করেন না, এবং যাঁরা মনে করছেন পশ্চিমবাংলার গণতন্ত্র আক্রান্ত (সত্যিই আক্রান্ত), সেই তাঁদের সামনে আরও এক বার সুযোগ এসেছে প্রমাণ করার যে নিছক সবুজ-লাল-গেরুয়াই শুধু নয়, ছাইরঙেরও প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন আছে সন্দিহান হওয়ার, প্রশ্ন করার, একলা হওয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE