Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Editorial news

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই ভয়ঙ্কর বিপদের বীজটা রয়ে গিয়েছে

সামাজিক দিক থেকেও সমপরিমাণে সাংঘাতিক এ ঘটনা। শ্লীলতাহানির মতো জঘন্য অপরাধ সমাজের চোখে কতটা ঘৃণ্য করে তুলবে, তা নিয়ে অভিযুক্ত কিশোরের মাথাব্যাথাই নেই। যার শ্লীলতাহানি হল, তার চেয়েও বেশি লজ্জা তো শ্লীলতাহানিকারীর হওয়া উচিত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

বিপজ্জনক প্রবণতাটার ইঙ্গিত বেশ অনেক দিন ধরেই মিলছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনও যুগলের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি কখনও হঠাত্ ভেসে উঠছিল সামাজিক মাধ্যমে। গোপনীয় ছবিগুলো হয়ে উঠছিল ব্ল্যাকমেলিংয়ের হাতিয়ার। ওই সব ছবি প্রকাশ্যে এলে সংশ্লিষ্ট মেয়েটির সম্মান-সম্ভ্রম ধুলোয় মিশে যায়, সংশ্লিষ্ট ছেলেটির অবশ্য খুব ক্ষতি হয় না— এমন কিছু ধারণা এখনও বদ্ধমূল আমাদের সমাজমানসের নানা অনগ্রসরতায়। সেই রকম এক অনগ্রসর এবং অন্ধকার সামাজিক সরণিতে হেঁটেই কোচবিহারে এক কিশোর শ্লীলতাহানি ঘটাল আর এক স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর, শ্লীলতাহানির সেই দৃশ্য ভিডিওয় ধরে রাখল, সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েও দিল।

দু’রকম ভাবে বিপজ্জনক এ ঘটনা। প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ অতি বিষম ছবি। কিশোরীর শ্লীলতাহানি ঘটানোর মতো জঘন্য ফৌজদারি অপরাধ করছে এক কিশোর, কিন্তু সে একটুও ভয় পাচ্ছে না। সে নিজেই ঘটনার ভিডিও করছে। ওই ভিডিও প্রকাশ্যে এলে তার কী হতে পারে, সে নিয়ে অভিযুক্তের কোনও মাথাব্যাথাই নেই। প্রশাসনটা গেল কোথায়? অপরাধপ্রবণ মন তা হলে ভয়ই পাচ্ছে না প্রশাসনকে! এ তো অত্যন্ত সাংঘাতিক পরিস্থিতি!

সামাজিক দিক থেকেও সমপরিমাণে সাংঘাতিক এ ঘটনা। শ্লীলতাহানির মতো জঘন্য অপরাধ সমাজের চোখে কতটা ঘৃণ্য করে তুলবে, তা নিয়ে অভিযুক্ত কিশোরের মাথাব্যাথাই নেই। যার শ্লীলতাহানি হল, তার চেয়েও বেশি লজ্জা তো শ্লীলতাহানিকারীর হওয়া উচিত। কিন্তু অভিযুক্ত কিশোর বিন্দুমাত্র সঙ্কুচিত বলে মনে হচ্ছে না। এই ছবি নিদারুণ সামাজিক ব্যর্থতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশাসনিক ব্যর্থতার চেয়েও সামাজিক ব্যর্থতাটা অনেক বড় গোটা ঘটনাপ্রবাহে। অপরাধী বা অপরাধপ্রবণ মন প্রশাসনকে ভয়ই পাচ্ছে না, এই ছবি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এত লজ্জাজনক একটা ঘটনা ঘটালে সমাজের চোখে, বন্ধু-বান্ধবের চোখে, পরিচিতদের চোখে কতটা নীচে নেমে যেতে হবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই যেন অভিযুক্তের। শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় আসল লজ্জা যে মেয়েটির নয়, অভিযুক্তের বা অপরাধীর, সে কথাই ভাবতে ভুলে গিয়েছি আমরা। এও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিরই এক ভয়ঙ্কর প্রতিফলন। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের অনেককেই ভুলিয়ে দেয়, শ্লীলতাহানি একটি জঘন্য অপরাধ এবং অপরাধী মানবতার ঘৃণিত শত্রু। এই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের ভাবতে শেখায়, শ্লীলতাহানির শিকার যিনি হলেন, তাঁর নাম-পরিচয় গোপন থাকাই বাঞ্ছনীয় কারণ বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার তাঁর পক্ষে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিটা আমাদের ভাবতে শেখায় না যে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত হওয়া আরও বেশি সামাজিক লজ্জার।

আরও পড়ুন: ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার সময়ে ভিডিও! দুঃসাহসে হতভম্ব কোচবিহার

এই মানসিকতা তথা এই দৃষ্টিভঙ্গি যত দিন থাকবে, তত দিন প্রবণতাগুলো মারাত্মকই হয়ে উঠবে। নারীর সম্ভ্রম নিয়ে টানাটানি করবে যে অপরাধী, সে নিজেকে অপরাধী ভাববে না, ওই নারীকে বেকায়দায় ফেলা যাচ্ছে ভেবে উল্লসিত হবে বরং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE