Advertisement
E-Paper

মহৎ দান 

মল্লিকার যকৃৎ এবং দুইটি বৃক্ক পাইয়াছেন তিন জন মৃত্যুপথযাত্রী রোগী। সাত দিন পরে কলিকাতার অদিতি সিংহের ব্রেন ডেথ হওয়ায় তাঁহার অঙ্গ পাইয়াছেন তিন জন গ্রহীতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শিলিগুড়ির কন্যা মল্লিকা মজুমদারের ব্রেন ডেথের পরে চিকিৎসকেরা অঙ্গদানের প্রস্তাব করিয়াছিলেন। প্রথমে তাহাতে অজ্ঞতাবশত সাড়া দেয় নাই মল্লিকার পরিবার। পরে বিষয়টি সম্যক জানিয়া খুশি হইয়া মল্লিকার মাতা বলেন, তাঁহার কন্যা যদি মৃত্যুর পরেও অন্য মানুষের দেহে জীবিত থাকে, তবে তাহাই হউক। মল্লিকার যকৃৎ এবং দুইটি বৃক্ক পাইয়াছেন তিন জন মৃত্যুপথযাত্রী রোগী। সাত দিন পরে কলিকাতার অদিতি সিংহের ব্রেন ডেথ হওয়ায় তাঁহার অঙ্গ পাইয়াছেন তিন জন গ্রহীতা। অঙ্গদানের ঘটনা শিরোনামে উঠিয়া আসায় বুঝা যায়, উহা বিরল। বাস্তবও বলিয়া দিবে, মল্লিকা কিংবা অদিতির পরিবার অঙ্গদান সম্পর্কে সচেতন ছিল না। তবে সাত দিনের ব্যবধানে দুইটি অঙ্গদানের ঘটনা হইতে ইহাও অনুমান করা চলে যে অঙ্গদানের বিরলতার কারণ অনিচ্ছা নহে, অজ্ঞতা। সামাজিক সচেতনতা গড়িয়া তুলিতে পারিলে, তাহাই ক্রমে পরিচিত হইয়া উঠিবে।
এবং এই পরিচিত করিয়া তুলিবার কাজটি আশু সামাজিক কর্তব্য। ‘মানুষ সমাজবদ্ধ জীব’ কথাটি বর্তমানে কেবল পাঠ্যবইয়ের শুষ্ক শব্দবন্ধ হইয়া বিরাজ করিতেছে। একান্নবর্তী পরিবার হইতে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ধারণাও এখন অতীত। নিউক্লিয়াসের ভিতরেও প্রোটন ও নিউট্রনরূপ পৃথক কণার তাঁহারা ন্যায় আপন জগতে বিচরণ করিতেছে। উপরন্তু পরমাণুর ন্যায় তাঁহারা জোটবদ্ধ নহে— একের সহিত অপরের বন্ধন ক্ষীণ হইতেছে। যুগ স্মার্ট হইবার পরে তাহা অধিক সত্য। আপন জগৎটি চারি পাশ হইতে স্থানান্তরিত হইয়া একটি ফোনের ভিতরে প্রবেশ করিয়াছে। তাহাতে আপন বৃত্তের সহিত প্রতি মুহূর্তে সংযোগের মাধ্যমে চারি পাশের পারিবারিক বৃত্তটিকে বিস্মৃত হইতেছে মানুষ। সেই কারণেই হয়তো চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির যুগেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করিলে ‘রক্তদান মহান দান’ বাণীটি জ্ঞাপন করা আবশ্যক। চক্ষুদান বিষয়টিও সার্বিক হইয়া উঠে নাই। এই বিচ্ছিন্নতার কালে আপন অঙ্গ অপর অপরকে দান করিবার প্রয়োজনটি এবং তাহার বৃহত্তর সামাজিক অর্থটি বোঝানো দরকার।
মানুষের সম্পত্তির ধারণাটি চির দিনই প্রখর। গোটা বিশ্বের যত বিবাদ, তুলাদণ্ডে মাপিলে ইহার পাল্লাই সর্বাধিক ওজনদার হইবে। কাহারও বাস্তুভিটা কিংবা পাটখেত, এবং যাঁহাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রহিয়াছে, তাঁহারা সাম্রাজ্য লইয়া বিবাদে মত্ত থাকেন। সেই বিশ্বে যাঁহারা আপন জনের অঙ্গ অন্য কাহাকেও দান করিবার ন্যায় মনের জোর দেখাইতে পারেন, তাঁহাদের মাহাত্ম্য নিঃসন্দেহে কুর্নিশযোগ্য। ইহা মহৎ, কারণ, প্রিয় জন ছা়ড়িয়া যাইবার বেদনাকে অতিক্রম করিয়া অপর কাহারও জন্য ভাবিবার ক্ষমতা ধরিয়াছেন সেই ব্যক্তি বা পরিবার। বিবদমান বিশ্বেও ইহা অলীক নহে— মল্লিকার ঘটনার পরে শিলিগুড়ির জনমানসে অঙ্গদান বিষয়ে আগ্রহে দেখা দিয়াছে। সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ‘ট্রান্সপ্লান্ট ক্লিনিক’ চালু করে এক বেসরকারি সংস্থা। একটিমাত্র ঘটনা যদি এত বড় সাড়া ফেলিতে পারে, তবে বোঝা যায়, অজ্ঞতা-বিচ্ছিন্নতা-বিবাদের ন্যায় বাধা অতিক্রম করা ক্রমে সম্ভব হইবে। সকলেই বুঝিতে পারিবেন, দানটি সমাজের পক্ষে কতখানি মহৎ।

Health Medical Organ Transplant Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy