প্রতীকী ছবি।
পাকিস্তানকে হাতে রাখিবার সুবিধা এত কাল ভোগ করিয়াছে চিন। এই বার আসিয়াছে সঙ্কটের কাল। সুখের কালে যাহা সহায়তা, অসুখের কালে তাহাই বিপুল বোঝা। বিশ্বমঞ্চে যে সন্ত্রাসবাদ বারংবার নিন্দিত, এবং চিন যাহা লইয়া এ যাবৎ কাল নিশ্চুপ— উহাই এখন তাহাকে বিঁধিতেছে। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে শিনচিয়াংয়ের সহিত যুক্ত হইতেছে বালুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর। সেই লইয়া বালুচ মুক্তি ফৌজের আপত্তির তির বিঁধিতেছে চিনকে। পাকিস্তান হইতে ‘স্বতন্ত্র’ হইবার আন্দোলনের অভিমুখ ঘুরিয়া শুক্রবার হামলা হইল করাচির চিনা দূতাবাসে। দীর্ঘ গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হইল চার জনের। এবং তৎক্ষণাৎ হামলার কড়া নিন্দা করিল ভারত। বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে বারংবার দিল্লির প্রশ্রয়ের অভিযোগ করিয়া থাকে ইসলামাবাদ। সেই প্রেক্ষিতে পদক্ষেপটির কূটনৈতিক তাৎপর্য অনেক। উপরন্তু, শি চিনফিংয়ের বহুকাঙ্ক্ষিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ ভারতের আপত্তি সুবিদিত। তৎসূত্রেও ইহা স্পষ্ট বার্তা।
চিনের সঙ্কট প্রভুর সঙ্কট। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অর্থনৈতিক মানদণ্ডে পাকিস্তানের ঊর্ধ্বে তাহার অবস্থান। ইউরোপীয়রা যখন এশিয়া এবং আফ্রিকায় নূতন নূতন দেশ অধিকার করিয়া বসতি স্থাপন করিয়াছিল, তখন তাহাদের ক্ষমতা এবং সম্পদ বৃদ্ধির সহিত যোগ হইয়াছিল অসংখ্য নয়া উপসর্গ। ম্যালেরিয়া হইতে পীত জ্বর— ‘অজানা’ রোগে আক্রান্ত হইয়া কত শ্বেতাঙ্গ পরলোকগত হইয়াছিলেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। অতএব, কলেবর বৃদ্ধির ভবিতব্য বিপদ বৃদ্ধি। কবি কবেই বলিয়াছেন: ‘বোঝা তোর ভারী হলেই ডুববে তরীখান’। বাস্তবে, পাকিস্তানে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করিয়াছে চিন। অর্থনৈতিক করি়ডর পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতিকে কিঞ্চিৎ অক্সিজেন দিবার ক্ষমতা রাখে। করিডরের সূত্রে বিনিয়োগ হইলে কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় উদ্যোগ গতি পাইবার আশা করা যায়। আবার, করিডর নির্মাণ না হইলে চিনের স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না।
তবে প্রশাসনের মিত্রতা হউক কিংবা বাণিজ্যিক চুক্তি, দুই সংস্কৃতির ফারাকের কারণে দুর্ভাগ্যজনক হইলেও শত্রুতা অবশ্যম্ভাবী। কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চিনের শিনচিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ দীর্ঘ কালের। সেই সমীকরণে কোনও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সত্যকার মিত্র হইয়া উঠা চিনের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। পাকিস্তানের উগ্রপন্থীরা ইহা সম্যক অবগত। ২০০৭ সালে ইসলামাবাদের একটি আকুপাংচার ক্লিনিকে হানা দিয়াছিল লাল মসজিদের নজরদারেরা। ওই স্থলে চৈনিক চিকিৎসার নামে গণিকালয় চালাইবার অভিযোগ তুলিয়াছিল তাহারা। প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশা ক্ষীণ, অতএব আইন আপন হস্তে লইতে ‘বাধ্য’ হয় মসজিদ। বালুচিস্তানের প্রকল্পে চিনা কর্মীরা কাজ পাইবার ফলে বালুচরা চটিয়াছে। গত বৎসর বালুচিস্তানের কেটায় অপহৃত হইয়াছিলেন দুই চিনা নাগরিক। ফেব্রুয়ারিতে করাচিতেই গুলিবিদ্ধ হইয়াছিলেন চিনা সরকারি আধিকারিক। এই ভাবে মিত্রতা যত বা়ড়িবে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটও তত চিনের স্কন্ধে ন্যস্ত হইবে। কালের নিয়মেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy