Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
State news

‘সংস্কৃতি’তে বাংলা ‘এক নম্বর’, বিরোধীরা এটাও জানেন না!

ভারতের গণতান্ত্রিক উপলব্ধি যত বেড়েছে, ভোট লুঠের প্রবণতা ততই কমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ যেন ঠিক উল্টো পথে। দিন যত যাচ্ছে, অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এ রাজ্যে ততই  যেন অসম্ভব হয়ে উঠছে।

সশস্ত্র: সিউড়িতে বিজেপির দলীয় দফতরের গলিতে তাণ্ডব। সোমবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

সশস্ত্র: সিউড়িতে বিজেপির দলীয় দফতরের গলিতে তাণ্ডব। সোমবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১০:৫৬
Share: Save:

ঘোষিত স্বৈরাচারীরা বারবারই পৃথিবীর নানা প্রান্তে গণতন্ত্রের হন্তারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। আমাদের এ বাংলায় কিন্তু তেমনটা ঘটে না, কারণ বাংলার একটা ‘সংস্কৃতি’ রয়েছে। এখানে গণতন্ত্রের মুণ্ডপাত তাঁরাই ঘটান যাঁরা খাতায়-কলমে একটা আদ্যন্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে পরিচিত।

নির্বাচনে কারচুপি বা রিগিং বা ছাপ্পা বা সন্ত্রাসের অভিযোগ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতের গণতান্ত্রিক উপলব্ধি যত বেড়েছে, ভোট লুঠের প্রবণতা ততই কমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ যেন ঠিক উল্টো পথে। দিন যত যাচ্ছে, অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এ রাজ্যে ততই যেন অসম্ভব হয়ে উঠছে।

কিছুতেই সুষ্ঠু ভাবে হতে দেওয়া হবে না নির্বাচন— গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোনও অংশীদার যে এমন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে পারে, এ রাজ্যের শাসক দলকে না দেখলে তা কিছুতেই উপলব্ধি করা যেত না। মনোয়ন পর্বে তীব্র হিংসা নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপা়ড় হয়ে গেল। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সম্মুখীন হল হাইকোর্টের কঠোর বার্তার। নতুন করে মনোনয়নের দিন ঘোষণা করতে বলা হল। ভোটগ্রহণের তারিখও নতুন করে ঘোষণা করার নির্দেশ এল।

হাইকোর্টের নির্দেশ যা-ই হোক, শাসক দল তথা সরকার যেন বেপরোয়া হয় উঠেছিল। সর্বাগ্রে নির্বাচন কমিশনকেই যেন সন্ত্রস্ত করে ফেলা হয়েছিল। বিরোধীরা যে দাবিই তুলুন, শাসক দল তথা সরকারের মর্জির বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন যাতে একটা পদক্ষেপও না করে, তা সুনিশ্চিত করে ফেলা হয়েছিল। মাত্র চার ঘণ্টার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়। সেই চার ঘণ্টায় যাতে বিরোধীরা প্রায় কোথাও মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন, সে বন্দোবস্তও পাকা করে ফেলা হয়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

‘অনাকাঙ্খিত’ মনোনয়ন আটকাতে জেলায় জেলায় বোমা-গুলির উৎসব দেখা যায়। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সাধারণ সমর্থক, বিধায়ক, সাংসদ, এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও আক্রান্ত হন। সংবাদমাধ্যমও প্রায় সর্বত্র শাসক দলের কড়া নজরদারির মধ্যে ছিল দিনভর। জেলায় জেলায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত-রক্তাক্ত হয়েছেন।

ভূরি ভূরি অভিযোগ। রাজ্যের নির্বাচন কমিশন যেন আর ভাবিত নয় সে সব নিয়ে। আর শাসক দল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ যথারীতি নস্যাৎ করছে। সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরোপুরি অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র, উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্যই এই ধরণের ‘কুৎসা’— মন্তব্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের। এত সংঘর্ষ, এত রক্তপাত, এমনকী মৃত্যুও ঘটে গেল। সে সব চোখের সামনে দেখেও কী ভাবে কেউ দাবি করতে পারেন নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবাধেই এগোচ্ছে!

অবাধ ও গণতান্ত্রিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা ফলাও করে বলেই থামছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কথাও তুলে ধরছেন তাঁরা সময়-সুযোগ বুঝে। বিরোধীরা বাংলার সংস্কৃতিটা ঠিক জানেন না— এমন কটাক্ষ ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীরা সংস্কৃতি জানলে নির্বাচনে হিংসা হত না— এমন মন্তব্যও শাসকের তরফ থেকে আসছে।

বিরোধীরা ‘অর্বাচীন’ হলেও, শাসক দল ‘সুসংস্কৃত’— এটাই চরম ও পরম ‘সৌভাগ্য’ বাংলার জন্য। কিন্তু তবু ‘অর্বাচীন’রা প্রশ্ন তুলতে ছাড়েন না। যে সংস্কৃতির পরিচয় মনোনয়ন পর্বে তৃণমূল দিল, বাংলার ‘সংস্কৃতি’ সম্পর্কে জানলে কি সেই ভাবে ভোট করাতে হয়? এমনই এক প্রশ্ন বিরোধীরা তুলে দিল। ‘অবোধের মতো’ প্রশ্ন, সংশয় নেই। কলকাতা তথা বাংলা এখনও দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে এবং গর্বে নিজে নিজেই ফুলে ওঠে। ‘অর্বাচীন’ বিরোধী শিবির কি সে কথাও জানে না?

বর্তমান শাসকের অধীনে বাংলা না কি অনেক বিষয়েই ‘এক নম্বর’। ‘সংস্কৃতি’টাও সম্ভবত সেই তালিকায় রয়েছে। ওই ‘তালিকা’টাকে একদম গুরুত্ব দিচ্ছে না বিরোধী শিবির। একে বাংলার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার’ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE