স্বল্পভাষীর কথা অধিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর যিনি ভাষণবিলাসী? তাঁহার নীরবতা কানে বাজে। হরিয়ানার রেওয়ারি এবং উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে দুই ছাত্রীর গণধর্ষণের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটিও কথা বলেন নাই। অপরাধের ভয়াবহতায় তিনি কি ভাষা হারাইয়াছেন? না কি ঘটনা দুইটিকে তুচ্ছ ভাবিয়া কথা খরচ করেন নাই? দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি গ্রহণ করা কঠিন। যে কোনও ধর্ষণের ঘটনাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ, কিন্তু উল্লিখিত ঘটনা দুইটি তাহারও অতিরিক্ত সমস্যার সাক্ষ্য দিতেছে। রেওয়ারিতে গণধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ করিতে চাহে নাই পুলিশ, অনেক বিলম্বে তদন্ত শুরু করিয়াছে। বস্তুত সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি লইয়া শোরগোল শুরু না হইলে পলাতক দুই অভিযুক্ত ধরা পড়িত কি না সে সংশয় থাকিয়া যায়। অন্য ঘটনাটিতে আবাসিক স্কুলের এক ছাত্রী সেই স্কুলেরই চার ছাত্রের দ্বারা ধর্ষিতা হইয়াছে, এবং তাহা গোপন করিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকল প্রকার চেষ্টা করিয়াছে। বিষয়টি সংবাদে না আসিলে হয়তো এই ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার অধরা থাকিত। ধর্ষণ ও নির্যাতনকে গোপন করিবার, ধর্ষিতাকে ভয় দেখাইয়া চুপ করাইবার সংস্কৃতিটি পুলিশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রবল ভাবে বিদ্যমান। কাঠুয়া এবং উন্নাওয়ের দুই বালিকার ধর্ষণের পর, সম্ভবত জনমতের চাপে, নীরবতা ভাঙিয়া প্রধানমন্ত্রী বলিয়াছিলেন, ‘‘আমাদের কন্যারা ন্যায়বিচার পাইবে।’’ এখন কিন্তু স্পষ্ট হইল, নাবালিকা ধর্ষণের শাস্তি বাড়াইয়া ন্যায় পাইবার পথ সহজতর হয় নাই।
কেহ বলিতে পারেন, সকল অপরাধের বিরুদ্ধেই বিবৃতি দিবার দায় কি প্রধানমন্ত্রীর আছে? নিশ্চয় নাই। কিন্তু নারী নির্যাতনকে অপরাপর অপরাধের সহিত এক করিলে লঘু করা হয়। ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো অপরাধে সমাজ ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন সমর্থন জড়াইয়া যায়, তাই এই মানসিকতাকে আঘাত করিবার কাজটি শীর্ষ নেতার উপরেই বর্তায়, বিশেষত যখন বর্তমান নেতা সকল বিষয়ে সরকারের সর্বময় নেতৃত্বের স্থানটি নির্দিষ্ট করিয়াছেন নিজের জন্যই। কলেজ ছাত্র হইতে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সকলের সকল সমস্যার সমাধান তিনি নিজে করিয়া থাকেন। ‘বেটি বঁচাও বেটি পঢ়াও’ কিংবা ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার প্রচারেও তাঁহারই মুখ। অথচ যখন মেয়েদের বিপন্নতা সর্বাধিক, তখনই তিনি মৌন। উত্তরপ্রদেশের উন্নাও এবং হরিয়ানার রেওয়ারি ফের দেখাইল, বিচারপ্রার্থী ধর্ষিতার প্রতি পুলিশ আজও কত নিষ্করুণ। কাঠুয়া হইতে দেহরাদূন, সর্বত্রই প্রভাবশালীরা অভিযুক্তকে বাঁচাইতে অতি তৎপর। এই ‘নূতন ভারত’-এ মেয়েদের স্থান কোথায়?
মনমোহন সিংহ স্বভাবমৌনী, তিনি চুপ করিয়া থাকিলে কেহ বিস্মিত হয় না। কিন্তু মোদীর নীরবতা কী বার্তা বহন করে? পুরুষতন্ত্র সততই মেয়েদের বুঝাইতেছে, ধর্ষণের ন্যায় ‘কলঙ্ক’ প্রকাশ করিতে নাই। ধর্ষণের প্রসঙ্গ এড়াইয়া মোদী কি সেই ধারণাকেই পুষ্ট করিতেছেন না? যে পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ লিখিতে অস্বীকার করে, তাহাকে প্রকাশ্যে তিরস্কার না করিলে তাহাকে সমর্থনই করা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত হইবার পরেও মোদী তাঁহার নিন্দা করেন নাই। এমন নিরুচ্চার বার্তাও নেতার ‘মন কি বাত’ বুঝাইয়া দিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy