হস্টেলটিতে ছাত্রীদের মাসের পর মাস আটকে রেখে নারকীয় অত্যাচার চালানো হত, যৌন নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগকারিণীরা পুলিশকে জানান।
আগাম সজাগ হতে পারি না আমরা কিছুতেই। বার বার কুকর্ম হয়ে যাওয়ার পরেই সম্বিৎ ফেরে। পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশাসনিক বিভাগগুলির কাজটা তা হলে কি শুধু অভিযোগ পাওয়ার উপরেই নির্ভর করে? পরিস্থিতির প্রতিকূলতা বা ভয়াবহ কাঠিন্য যদি অভিযোগটাকে পৌঁছতে না দেয় পুলিশের দরজায়, তা হলে কী হবে? ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়।
মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে এক ভয়াবহ অভিযোগ সামনে আসছে। সামনে এসেছে নয়, সামনে আসছেই বলতে হচ্ছে। কারণ পেঁয়াজের খোলার মতো পরতে পরতে খুলছে যেন অভিযোগের ঝাঁপি। প্রথমে সবটাই আবদ্ধ ছিল, গোপন ছিল। তার পর এক দিন হিমশৈলের চুড়া উঁকি দিল যেন। দুই মহিলা পর পর দু’দিনে এক বেসরকারি হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করলেন। হস্টেলটিতে ছাত্রীদের মাসের পর মাস আটকে রেখে নারকীয় অত্যাচার চালানো হত, যৌন নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগকারিণীরা পুলিশকে জানালেন।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বেসরকারি ছাত্রী নিবাসটির ডিরেক্টরকে। কিন্তু অভিযোগের স্রোত আসছে এ বার। ডিরেক্টর অশ্বিনী শর্মার গ্রেফতারির পরে একে একে অন্য আবাসিকরাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একে একে পুলিশের কাছে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রত্যেকের অভিযোগই প্রায় একই রকম। মাসের পর মাস ঘরে আটকে রাখা, যৌন নির্যাতন করা, বার বার ধর্ষণ করা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
অভিযোগ সত্য কি না, তা নিশ্চয়ই তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু যে রকম গুরুতর অভিযোগ সামনে আসছে, একের পর এক আবাসিক যে ভাবে মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তাতে এক ভয়াবহ দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এই অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়, তা হলে আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কতটা দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে মাসের পর মাস কেটেছে বেসরকারি ছাত্রী নিবাসটির বসিন্দাদের! ছিঁড়েছুটে বেরিয়ে এসে যদি পুলিশের দরজায় হাজির হতে না পারতেন কোনও আবাসিক, তা হলে এখনও অনর্গলই চলত এই রকম নারকীয় নির্যাতন! ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।
আরও পড়ুন: পর্নোগ্রাফি দেখাতে বাধ্য করে ছ’মাস ধর্ষণ, ভোপাল হস্টেল কাণ্ডে প্রকাশ্যে চতুর্থ মহিলা
যে ভয়াবহতার অভিযোগ উঠছে, তা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে পুলিশ-প্রশাসন কিছুতেই দায় অস্বীকার করতে পারবে না। গোড়ায় তোলা প্রশ্নটাই আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া যাক— পুলিশের কর্তব্য কি শুধুমাত্র অভিযোগ পাওয়ার উপরে নির্ভর করে? সতর্ক নজরদারিটা পুলিশের কাজ নয়? কোথাও কোনও অন্যায় হচ্ছে কি না, আড়ালে-আবডালে, কেউ ভয়াবহ কোনও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কি না, গোপনে কোনও বেআইনি বা অবৈধ বা ভয়াবহ কার্যকলাপ চলছে কি না, তার খোঁজ রাখাও তো পুলিশ-প্রশাসনের কর্তব্য। পুলিশ যদি সক্রিয় থাকত, নজরদারি যদি ঠিকঠাক থাকত, তা হলে কি মাসের পর মাস একটি হস্টেলে মেয়েদের আটকে রেখে এমন বীভৎস নির্যাতন চালাতে পারত দুষ্কৃতীরা? কিছুতেই পারত না। তাই পুলিশকেও এর দায় নিতেই হবে। অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ তৎপর হয়েছে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছে, সে কথা ঠিক। কিন্তু অভিযোগ সামনে আসার আগে পর্যন্ত যে নারকীয়তার মধ্যে দিয়ে যেতে হল এত জনকে, তার দায় পুলিশ-প্রশাসন এড়াবে কী ভাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy