ভারতে কোনও দুর্যোগ ঘটলে তা সামলানোর জন্য বিদেশ থেকে টাকা-পয়সা বা সহায়তা নেওয়া যাবে না, এমন কোনও নিদান নেই। ছবি: এএফপি।
এত বড় বিপর্যয় গত প্রায় এক শতাব্দীতে দেখেনি কেরল। শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছে কেরলে ঝাঁপিয়ে পড়া ভয়ঙ্কর জলপ্লাবন। কাম্য ছিল, আমরাও সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ব ত্রাণ-উদ্ধার-পুনর্গঠনে। তার চেষ্টা হয়তো আমরা করলামও। কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা-সদিচ্ছাকে পিছনে ফেলে এ বার আরও প্রাবল্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে রাজনীতি। তেমন কিছু ঘটতে দিলে কিন্তু দুর্ভাগ্যের শেষ থাকবে না।
কেরলের বিপর্যয় দেখে পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সে দেশ। কিন্তু নিজের দেশে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার জন্য আমিরশাহির কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিতে ভারত সরকার অপ্রস্তুত। শুধু আমিরশাহি নয়, কেরলের জন্য কোনও দেশের কাছ থেকেই অর্থসাহায্য নেওয়ার দরকার নেই— সমস্ত ভারতীয় দূতাবাস এবং হাইকমিশনে এই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতে কোনও দুর্যোগ ঘটলে তা সামলানোর জন্য বিদেশ থেকে টাকা-পয়সা বা সহায়তা নেওয়া যাবে না, এমন কোনও নিদান নেই। তবু সহায়তা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার বা এক্তিয়ার ভারত সরকারের রয়েছে। সরকার যদি এ ক্ষেত্রে নীতিগত ভাবে বৈদেশিক সহায়তা নেওয়ার বিরোধী হয়, তা হলে সে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার থাকতে পারে না। নিজের ঘরে ঘটে যাওয়া দুর্যোগ নিজেই সামলাতে পারার সক্ষমতা থাকা ইতিবাচকই। সক্ষমতা যে রয়েছে, তা নিয়েও সংশয় নেই। কিন্তু সদিচ্ছা সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছেন। সেই প্রশ্ন তোলার অবকাশটাও কিন্তু দেওয়া উচিত হবে না কেন্দ্রীয় সরকারের।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যে বিপর্যয়ের সাক্ষী কেরলকে হতে হল, তা যে ভয়াবহ, সে নিয়ে কোনও সংশয় কোনও মহলেরই নেই। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যে বিপুল, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা যে কোটি কোটি, তা-ও সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভারত সরকারের কোষাগার কি বিপর্যয়ের প্রাবল্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কেরলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে? প্রশ্নটা উঠছে সেখানেই।
কেরলের পুনর্গঠনে বিপুল অর্থ প্রয়োজন এখন, এ কথা বোঝার জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানে পারদর্শী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কেরলের সরকার ২৬০০ কোটি টাকা চেয়েছে কেন্দ্রের কাছ থেকে। কেন্দ্র ৬০০ কোটি বরাদ্দ করেছে। অন্যান্য রাজ্যগুলির সরকারও অর্থ বরাদ্দ করেছে কেরলের জন্য। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এসেছে, অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, গোটা দেশ সাধ্য মতো কেরলের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই সব মেলালেও কি ২৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছনো সম্ভব হবে? কেরলের যাবতীয় চাহিদা কি ওতে পূরণ হবে? এই প্রশ্নটা ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অসন্তোষ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী খুব একটা গোপন রাখার চেষ্টা করেননি। আমিরশাহির টাকা কেন্দ্র নেবে না, এ কথা জানার পরে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন— টাকাটা তা হলে আসবে কোথা থেকে? অর্থাৎ দাবি মতো টাকা ভারত সরকার দিচ্ছে না, অন্য কোনও দেশের সরকার দিতে চাইলে ভারত সরকার নিচ্ছে না, তা হলে প্রয়োজনীয় টাকার সংস্থান হবে কী ভাবে? কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নটা এই রকমই। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় কেন্দ্রীয় সরকারেরই।
আরও পড়ুন: বন্যায় বিদেশি সাহায্যে ‘না’ কেন্দ্রের, কেরল বলল টাকা পাব কোথায়
আরও পড়ুন: কেরলের ‘ঋণ’ শুধতে ৭০০ কোটি দিতে চায় আমিরশাহি
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও অবশ্য অনেকে কয়েকটি প্রশ্ন তুলছেন। ক্ষয়ক্ষতি ঠিক কত টাকার হয়েছে, এই মুহূর্তে কোন খাতে কত টাকা প্রয়োজন, পুনর্গঠনের পরিকল্পনা ঠিক কী রকম— সে সব বিশদে জানার আগেই কী ভাবে টাকা বরাদ্দ করবে কেন্দ্র? এমন প্রশ্নই এখন তুলছেন কেউ কেউ।
বোঝা দরকার, সময়টা এখন প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্নের নয়। সময়টা এখন চাপানউতোরের নয়। কোটি কোটি মানুষ তাঁদের জীবনে অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন। সময়টা এখন সবাই মিলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর। রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসেব করার বা রাজনৈতিক ফসল ঘরে তোলার সময় এটা নয়। এ কথা সব শিবিরকেই বুঝতে হবে। না হলে কলঙ্কজনক নজির তৈরি হয়ে থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy