Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
editorial News

বিষের বিনাশ না হলে ঘর গোছানোর অর্থ কী

গত কয়েক বছরে এই বিদ্বেষ-বিষের বাড়বাড়ন্ত একটু বেশিই হয়েছে। দলিত শ্রেণি বা সামাজিক ভাবে দুর্বলতর শ্রেণির উপরে সবলের অত্যাচার যেন আচমকা বেড়েছে। সরকারি হিসেবেই তার প্রতিফলন মিলছে।

বিস্মিত হতে হয় আমাদের সমাজের দুর্বোধ্য নির্লিপ্তি দেখে।

বিস্মিত হতে হয় আমাদের সমাজের দুর্বোধ্য নির্লিপ্তি দেখে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

ঘরদোর গুছিয়ে রাখা জরুরি। কিন্তু ঘর গোছানোর অর্থটা ঠিক কী, তা বুঝে নেওয়া আরও জরুরি। কক্ষস্থ আসবাব সব যথাস্থানে রাখলেই ঘর গুছিয়ে রাখা হয় না। নিয়মিত ঝাড়পোঁচ দরকার, পরিচ্ছন্ন বাতাবরণ দরকার, যাবতীয় বিষক্রিয়ার নিরসন দরকার। তা হলেই জীবন স্বাস্থ্যকর হয়। এ দেশের প্রশাসন সে কথাটা বুঝতে পারছে কি না, স্পষ্ট নয়।

আবার একটা দলিত নির্যাতনের ঘটনা সামনে এল। মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের ঘটনা। তীব্র দাবদাহ থেকে খানিক রেহাই পেতে কুয়োয় নেমেছিল তিন নাবালক। গ্রামের উচ্চবর্ণীয় মাতব্বররা খবর পেতেই বিপদ ঘনায়। দলিত শ্রেণিভুক্ত ওই তিন নাবালককে কুয়ো থেকে তুলে এনে প্রবল মারধর করা হয়, তার পর নগ্ন করে গোটা গ্রাম ঘোরানো হয়।

কতখানি বিদ্বেষ, কতখানি অসংবেদনশীলতা, কতখানি নিষ্ঠুরতার প্রমাণ দেয় এ ধরনের ঘটনা, তা বার বার বলার প্রয়োজন পড়ে না। বিস্মিত হতে হয় আমাদের সমাজের দুর্বোধ্য নির্লিপ্তি দেখে। জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এত সমালোচনা হচ্ছে, এত নিন্দা হচ্ছে, এত প্রতিবাদ হচ্ছে! তা-ও থামছে না হিংসার স্রোত!

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গত কয়েক বছরে এই বিদ্বেষ-বিষের বাড়বাড়ন্ত একটু বেশিই হয়েছে। দলিত শ্রেণি বা সামাজিক ভাবে দুর্বলতর শ্রেণির উপরে সবলের অত্যাচার যেন আচমকা বেড়েছে। সরকারি হিসেবেই তার প্রতিফলন মিলছে। কিন্তু সরকার কি কোনও উপযুক্ত পদক্ষেপ এখনও করেছে এই সামাজিক হিংসার বিরুদ্ধে? জবাব পাওয়া খুব কঠিন।

দলিত নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার পিছনে রাজনীতির কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সে নিয়ে নানা রকমের চর্চাই হয়। সে বিতর্ক একপাশে যদি সরিয়েও রাখা হয়, তা হলেও কিন্তু রাজনীতিকরা এই ধরনের হিংসার দায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারেন না। কারণ দিনের শেষে হিংসা-বিদ্বেষ প্রতিরোধের দায় সরকারেরই। আর সরকারটা চালান রাজনীতিকরাই।

আরও পড়ুন
কুয়োয় নামার সাজা, দলিত নাবালকদের নগ্ন করে ঘোরানো হল গ্রামে

দেশের শাসক দল ঘরটা গুছিয়ে নিতে চাইছে বলে শোনা যাচ্ছে। শরিকি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যে লাগাম টানা হচ্ছে। সরকারের যে সব পদক্ষেপ জনপরিসরে অসন্তোষ তৈরি করেছে ইতিমধ্যেই, সে সব নিয়ে পুনর্বিবেচনা চলছে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করে শাসক দলের নেতারা সমর্থন ও পরামর্শ চাইছেন। সবই ভাল। কিন্তু শুধুমাত্র এই সব করলেই কিন্তু ঘর গোছানো সারা হবে না। এতে আসবাবগুলো যথাস্থানে থাকবে হয়তো। কিন্তু ঘর বিষমুক্ত হবে না।

শাসকের জন্য ঘর কিন্তু শুধু নিজের দলটা নয়। শাসকের জন্য ঘর গোটা দেশ। দেশকে, দেশের সমাজকে বিষমুক্ত করার দায়িত্ব শাসকেরই সর্বাধিক। সামাজিক বিষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক, দু’রকম প্রতিরোধই জরুরি আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE