Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসার রাজনীতি

মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া যে নিয়মগুলি প্রণয়ন করিতেছে, সেখানেও সংস্কার প্রয়োজন। যাহাতে মেডিক্যাল শিক্ষা দেশের মানুষের প্রয়োজনের উপযোগী হইতে পারে। সেই কাজটিও মূলত রাজনৈতিক।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

অস্ত্রোপচার সফল, রোগী মৃত— কৌতুকবাক্যটি সুপরিচিত। শল্যচিকিৎসায় নৈপুণ্য প্রমাণে চিকিৎসকরা যতটা আগ্রহী, রোগীর বাঁচা-মরার প্রতি অনুরূপ মনোযোগী কি না, সেই সংশয় হইতে এমন কৌতুক। ভারতের মেডিক্যাল শিক্ষার নিয়মাবলি দেখিলেও এমন সংশয় হয়। নিয়মগুলি বিশেষজ্ঞ তৈরি করিবার উদ্দেশ্যে রচিত হইয়াছে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ রোগীকে কী করিয়া পরিষেবা দেওয়া যাইবে, সেই প্রশ্নটি ভুলিয়াছে। ডাক্তারি শিক্ষার নিয়মগুলি এমনই আঁটিয়া বাঁধা হইয়াছে, যে অতি অল্প প্রতিষ্ঠান তাহার ফাঁক দিয়া গলিতে সক্ষম। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডাক্তার লইয়া দেশ চলিতেছে। আসন বাড়ে নাই, উল্টে কমিতেছে। এ বৎসরই প্রায় দশ হাজার আসন বাতিল হইল। কেন, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু বাতিল হইল বলিয়া চিকিৎসকের ঘাটতি আরও বাড়িবে, এবং তাহা চিকিৎসাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট তৈরি করিবে, সন্দেহ নাই। সঙ্কট আরও বাড়াইয়াছে মেডিক্যাল শিক্ষার নিয়মগুলি। হাউসস্টাফশিপ এখন আবশ্যক নহে, তাই রোগীর পরিষেবার একটি বড় স্তম্ভ কার্যত অপসৃত হইয়াছে। রোগীর চিকিৎসার জন্যই হাসপাতাল, কিন্তু চিকিৎসক বই মুখস্থ করিতেছে, নার্স রেজিস্টার লিখিতেছে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দাবিদাওয়া লইয়া সুপারের ঘরে ভিড় জমাইয়াছে। রোগীর প্রতি কাহারও লক্ষ নাই।

মেডিক্যাল পরিষেবা কাহার সুবিধা দেখিবে, রোগীর না চিকিৎসকের? সেই কঠিন প্রশ্নের সম্মুখে এ বার দাঁড়াইয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছয় বৎসর রাজ্যপাটের পর তাঁহাকে ভাবিতে হইতেছে, কী করিয়া চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হইবে? তাই তিনি প্রশ্ন তুলিতেছেন, কেন ক্লিনিক্যাল বিভাগের চিকিৎসকেরা বহির্বিভাগে রোগী দেখিবেন না? কেন ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসকেরা খাতা লিখিবেন, চিকিৎসা করিবেন না? কেন হাউসস্টাফশিপ ফের আবশ্যক হইবে না? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মিটাইতে, জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর দীর্ঘ প্রতীক্ষা কমাইতে, কেন বেসরকারি চিকিৎসকদের আনা হইবে না সরকারি হাসপাতালে? প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধান তৃণমূল সরকারের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাজকোষের বিপুল অর্থ সরকার খরচ করিয়াছে জেলাগুলিতে উন্নত হাসপাতাল, উত্তম পরিকাঠামো গড়িতে। আধুনিক যন্ত্রপাতিও প্রচুর ক্রয় করা হইয়াছে। চিকিৎসকের অভাবে সে সকলই পড়িয়া থাকিলে জনগণের অর্থ কার্যত নষ্ট হইবে।

রাজ্য সরকার কিছু সংস্কার অবশ্যই করিতে পারে। সরকারি চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়া অধিক সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল করিবার কর্তব্য স্বাস্থ্য দফতরেরই। আক্ষেপ, চিকিৎসকদের সংগঠন এবং কিছু চিকিৎসক-নেতা দীর্ঘ দিন ধরিয়া সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করিতেছেন, যাহা কার্যত রোগীর স্বার্থকে প্রতিহত করিতেছে। যদি সরকার সেই প্রভাব হইতে স্বাস্থ্য দফতরকে মুক্ত করিতে পারে, তাহা এক প্রশংসনীয় কাজ হইবে। কিন্তু সেখানেই কাজ শেষ নহে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া যে নিয়মগুলি প্রণয়ন করিতেছে, সেখানেও সংস্কার প্রয়োজন। যাহাতে মেডিক্যাল শিক্ষা দেশের মানুষের প্রয়োজনের উপযোগী হইতে পারে। সেই কাজটিও মূলত রাজনৈতিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Education Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE