Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

আধিক্যের দোষ

বিশেষজ্ঞরা কেহই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাজে আহ্লাদিত হন নাই, বরং আক্রমণ করিয়াছেন। বাতিল করিবার সুপারিশও আসিয়াছে। বাম আমলে প্রকাশিত প্রতীচীর একটি শিক্ষা রিপোর্ট দেখাইয়াছিল, সংসদের অধিকাংশ সদস্য নির্বাচিত। কিন্তু সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত যাঁহার হাতে, সেই চেয়ারম্যান সরকারের দ্বারা মনোনীত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

ম নুষ্যশরীরে একটি প্রত্যঙ্গ অ্যাপেনডিক্স। বিবর্তনের গতিতে তাহা কার্যহীন, কিন্তু পাকিলে বিস্তর দুর্ভোগ। পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ প্রায় তেমনই। শিক্ষকদের পদের সংখ্যা নির্ধারণ, নিয়োগ, বদলি, পরীক্ষাগ্রহণ প্রভৃতি দায়িত্ব সংসদ কার্যত হারাইয়াছে। অবশিষ্ট কেবল শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দান। তাহা লইয়া দুর্নীতির অভিযোগের সীমা নাই। অতএব সংসদগুলি বাতিল হইবে, এমনই রটিয়াছে শিক্ষা দফতরে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলিয়াছেন, সংসদগুলির কাজের মূল্যায়ন হইবে। তাহার প্রয়োজন আছে কি? স্কুলশিক্ষার সমীক্ষা কম হয় নাই। বিশেষজ্ঞরা কেহই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাজে আহ্লাদিত হন নাই, বরং আক্রমণ করিয়াছেন। বাতিল করিবার সুপারিশও আসিয়াছে। বাম আমলে প্রকাশিত প্রতীচীর একটি শিক্ষা রিপোর্ট দেখাইয়াছিল, সংসদের অধিকাংশ সদস্য নির্বাচিত। কিন্তু সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত যাঁহার হাতে, সেই চেয়ারম্যান সরকারের দ্বারা মনোনীত। ইহাই কি শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ? এই স্ববিরোধিতা ছিল বামফ্রন্টের মজ্জাগত। পঞ্চায়েতে নিয়মিত নির্বাচন করিলেও, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে যথেষ্ট দায়িত্ব, ক্ষমতা কিংবা অর্থ কখনওই দেয় নাই বামফ্রন্ট সরকার। বকলমে শাসন করিয়াছে মহাকরণ। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদও ‘শিক্ষকদের যোগদানে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন’ নীতির একটি প্রতীক হইয়া টিকিয়া ছিল।

আজ সেই ছলটুকুও নাই। নির্বাচনে বিপরীত ফল হইবার ইঙ্গিত মিলিতেই সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে নির্বাচন স্থগিত করিয়াছে। গত সাত বৎসরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতা ক্রমশ সরিয়াছে জেলা প্রশাসনের হাতে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ক্ষমতাও আসিয়াছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদগুলিতে। সরকার-মনোনীত সংসদ চেয়ারম্যানরা রাজনৈতিক অঙ্গুলিহেলনে কাজ করিতেছেন, এই অভিযোগও তীব্র হইয়াছে। অস্যার্থ, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দিন গিয়াছে। তাহাকে বাতিল করিলেই হয়। অপেক্ষা নিষ্প্রয়োজন, কারণ সংসদের ব্যর্থতা নূতন নহে। ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে সংসদ কখনওই পারে নাই। বাম আমলেও শিক্ষক বণ্টনের কৌশলে দরিদ্র গ্রামে স্বল্প শিক্ষক, শহরের স্কুলে অধিক শিক্ষক নিযুক্ত হইয়াছেন, তৃণমূল কংগ্রেস আমলেও তাহাই ঘটিতেছে। বাম আমলেও উৎকোচ লইয়া, রাজনৈতিক প্রভাব দেখাইয়া শিক্ষক নিয়োগ ও বদলির অভিযোগ হইয়াছে, এখনও হইতেছে। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষাবঞ্চনার ধারাও অব্যাহত। ইহার পর আর মূল্যায়ন কেন? সংসদ ব্যর্থ, তাহাতে সংশয় নাই।

কিন্তু সংসদ থাকিবে কি যাইবে, সে প্রশ্নটি গৌণ। শিক্ষার বিস্তার এবং শিক্ষার মানে উন্নতি কী করিয়া হইবে, তাহাই মূল কথা। অধিকাংশ রাজ্যে ‘শিক্ষা সংসদ’ নামে কোনও বস্তুই নাই, আমলারাই শিক্ষাব্যবস্থার নেতা। সেই ব্যবস্থায় বিহার-উত্তরপ্রদেশ মন্দ, উত্তম ফল হিমাচল প্রদেশের। আবার বিকেন্দ্রিত শিক্ষা পশ্চিমবঙ্গে ভাল কাজ না করিলেও, উৎকৃষ্ট শিক্ষা পাইয়াছে কেরল। অতএব প্রশাসনিক কাঠামো যাহাই হউক, শিক্ষাব্যবস্থা হইতে হইবে স্বচ্ছ, দক্ষ এবং দায়বদ্ধ। পড়ুয়ার শিক্ষার মান দিয়াই শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থাকে বিচার করিতে হইবে। তাহার অপেক্ষা বড় মানদণ্ড নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Primary Education Council
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE