হাফিজ সইদের সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় কূটনীতিক ওয়ালিদ আবু আলি। ছবি: সংগৃহীত।
এই জয়টা ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। ভারতের সম্মান জড়িয়ে গিয়েছিল অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিটার সঙ্গে। প্রবল অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল ঘরে-বাইরে একযোগে। কিন্তু বলিষ্ঠ প্রতিবাদ হল, তৎপর কূটনীতির দেখা মিলল। শেষ দৃশ্যে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের হাসিই চওড়া হল অতএব।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সইদকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান টানাপড়েন খুব সাম্প্রতিক নয়। ২৬/১১ জঙ্গিহানার মূল চক্রী হাফিজ সইদ এবং লস্কর-ই-তৈবা তথা জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ পাকিস্তানকে করতেই হবে— এই অবস্থানে ভারত বরাবরই দৃঢ় থেকেছে। হাফিজ সইদ প্রসঙ্গে ভারত কতটা সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর, গোটা পৃথিবীই সে বিষয়ে অবগত। উপরন্তু, হাফিজের মাথায় ঝুলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা। নয়াদিল্লির মিত্ররা তাই হাফিজ সইদ প্রসঙ্গে ঘোষিত ভাবে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। নিবিড় মৈত্রীর বাইরে নয়াদিল্লির সঙ্গে সাধারণ কূটনৈতিক আদান-প্রদান রয়েছে যে সব দেশের, হাফিজ প্রসঙ্গে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সরব তারাও। ইসলামাবাদের ঋতু নির্বিশেষ মিত্র চিনও হাফিজ সইদের সংস্রব এড়িয়ে চলে সযত্নে।
এ হেন সন্ত্রাসবাদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দিফা-এ-পাকিস্তান কাউন্সিলের সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় কূটনীতিক ওয়ালিদ আবু আলি। জঙ্গি শিরোমণির স্কন্ধলগ্ন হয়ে মঞ্চ আলো করে বসে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ।
কোন প্যালেস্তাইনের কূটনীতিক এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন? কাশ্মীর প্রশ্নে বার বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও যে প্যালেস্তাইন নানা মানবিক এবং কূটনৈতিক সঙ্কটে ভারতকে বরাবর নিজেদের পাশে পেয়েছে। জেরুসালেম বিতর্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে সদ্য হওয়া ভোটাভুটিতে যে প্যালেস্তাইনের পক্ষে ভারত ভোট দিয়েছে আমেরিকা এবং ইজরায়েলের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রের ক্ষোভের পরোয়া না করে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কেন প্যালেস্তাইনের পক্ষে গেল ভারত? কেন জেরুসালেম প্রশ্নে আমেরিকার এবং ইজরায়েলের মতকে সমর্থন করল না ভারত? প্রশ্ন উঠেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের অন্দরমহলে। ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকায়, ইজরায়েলেও।
জেরুসালেম প্রশ্নে এই অবস্থানের কী ব্যাখ্যা দিয়েছে ভারত, সে ব্যাখ্যা আদৌ যৌক্তিক কি না— সে সব নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় কূটনীতিক হাফিজের মঞ্চে হাজির হয়ে ভারতের জন্য কতটা অস্বস্তির আয়োজন সেরে ফেলেছিলেন, প্রাসঙ্গিক এ চর্চায় সেটাই এবং চর্চা খুব স্পষ্ট করেই বলছে, দেশে এবং বিদেশে ভারতের নাক কেটে দেওয়ার উপক্রম করেছিলেন ওয়ালিদ আবু আলি। কিন্তু নয়াদিল্লির তীব্র অসন্তোষের আঁচ পেয়ে কালক্ষেপ করল না রামাল্লা। বিতর্কে জড়িয়ে পড়া কূটনীতিকে ফিরিয়ে নিল পাকিস্তান থেকে। জেরুসালেম প্রসঙ্গে প্যালেস্তাইনের ভাবাবেগকে ভারত যেমন শ্রদ্ধা করে, সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের অবস্থানকেও প্যালেস্তাইন তেমনই সমীহ করে। এই বার্তা স্পষ্ট করেই দিল রামাল্লা। এই বার্তা ভারতের পক্ষে নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক।
আরও পড়ুন
দূত ফেরাচ্ছে প্যালেস্তাইন
প্যালেস্তাইনের এই পদক্ষেপ যে ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যও, সে নিয়ে সংশয় নেই। অস্বস্তি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেনি ভারত। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মোকাবিলা দার্ঢ্যের সঙ্গে করার চেষ্টা করেছে। হাফিজ সইদের মঞ্চে প্যালেস্তিনীয় কূটনীতিকের উপস্থিতি এমন কিছু গুরুতর বিষয় নয়, এমন কোনও ধারণা তৈরি করার চেষ্টা হয়নি। যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর এবং ভারত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে এবং উপযুক্ত মহলে কঠোর প্রতিবাদ নথিবদ্ধ করছে— এই রকমই সরলরৈখিক অবস্থান নিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক। যে তৎপরতার সঙ্গে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল ভারত, প্রশংসনীয় ছিল তাও। সাফল্য সম্ভবত এল এই স্পষ্টভাষণ এবং তৎপরতার গুণেই।
গোটা ঘটনাপ্রবাহে আরও একটা বিষয় খুব উল্লেখযোগ্য। হাফিজ সইদ প্রসঙ্গে তথা পাক সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র আপোস বা সমঝোতার পথে ভারত হাঁটবে না— গোটা বিশ্বের সামনে তা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাবে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ভারত ঠিক কতটা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে তা আন্তর্জাতিক মহলকে আবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া গিয়েছে পাকিস্তানকেও। হাফিজ সইদের মতো নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদীকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে গেলে ফল কী হতে পারে, মিত্রও কী ভাবে পাশ থেকে সরে যেতে পারে, তা পাকিস্তান বুঝতে পেরেছে বলে আশা করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy