Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Congress

এই ঘোষণার আগে ইতিহাসটা জেনে নিয়েছেন তো?

ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান বা কর্মসূচি ছিল স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মাইল ফলক। ভারত থেকে দারিদ্র দূরীকরণের কর্মসূচি সেই প্রথম সুস্পষ্ট আকারে ঘোষিত হয়েছিল মূল ধারার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা। গোটা দেশ সেই ঘোষণায় তথা প্রতিশ্রুতিতে আস্থা যে রেখেছিল, ইন্দিরা গাঁধীর বিপুল নির্বাচনী সাফল্যই তা প্রমাণ করে দিয়েছিল।

—ছবি পিটিআই।

—ছবি পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

ইতিহাসের একটা প্রতিচ্ছবি ধরা দিল। ধরা দিল সেই মুহূর্তে, যে মুহূর্তে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী এক প্রকাণ্ড নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করলেন। প্রতিশ্রুতিটা নির্বাচনী মরসুমের জন্যই, নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, সে উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু আর্থিক ভাবে দরিদ্র ভারতীয়দের প্রত্যেকের জন্য ন্যূনতম আয়ের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার যে প্রতিশ্রিুতি রাহুল গাঁধী ঘোষণা করলেন, সেই প্রতিশ্রুতি তাঁকে কোনও এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিল তাঁর পিতামহী তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে।

ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান বা কর্মসূচি ছিল স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মাইল ফলক। ভারত থেকে দারিদ্র দূরীকরণের কর্মসূচি সেই প্রথম সুস্পষ্ট আকারে ঘোষিত হয়েছিল মূল ধারার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা। গোটা দেশ সেই ঘোষণায় তথা প্রতিশ্রুতিতে আস্থা যে রেখেছিল, ইন্দিরা গাঁধীর বিপুল নির্বাচনী সাফল্যই তা প্রমাণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এমন প্রকাণ্ড প্রতিশ্রুতি দেওয়া যতটা কঠিন, এহেন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটানো তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। ইন্দিরা গাঁধী কতটা পেরেছিলেন, কতটা পারেননি, ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করছে। ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ আসলে ‘গরিব হঠাও’ কর্মসূচি— এমন তিক্ত কটাক্ষও পরবর্তী কালে দেশ জু়ড়ে শোনা গিয়েছে। সেই তিক্ত বাক্যবন্ধের নেতিবাচক ফলও ইন্দিরাকে পরবর্তী কোনও নির্বাচনে পেতে হয়েছে। অতএব পূর্বসূরির পথে হেঁটেই রাহুল গাঁধী যখন আরও বেশ কয়েকটা ধাপ অগ্রবর্তী একটা দারিদ্র দূরীকরণ নীতি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে ঘোষণা করলেন, তখন প্রশ্ন ওঠে— যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করে এই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন তো রাহুল?

রাহুল গাঁধী রাজনীতিতে আনকোরা নন। গভীর রাজনৈতিক বাতাবরণে লালিত হয়েছেন তিনি। তার পরে সক্রিয় রাজনীতিতেও অনেকগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। নানা দায়িত্ব, বিভিন্ন ভূমিকা অতিক্রম করে আজ কংগ্রেসের শীর্ষ পদে পৌঁছেছেন। পিতামহীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগান, তার অব্যবহিত ফলাফল এবং তার চূড়ান্ত মূল্যায়ণের ইতিবৃত্ত রাহুল গাঁধীর নিশ্চয়ই জানা। বস্তুত প্রয়াত পিতামহীর দেখানো পথ তথা তাঁর নীতি অনুসরণ করেই যে রাহুল গাঁধী এই নির্বাচনী ঘোষণা দিলেন, তা রাজনৈতিক শিবিরের কাছে বেশ স্পষ্ট। অতএব, ইন্দিরার ‘গরিবি হঠাও’ সম্পর্কে আপাদমস্তক না জেনে নিয়ে রাহুল গাঁধী নিজের ‘গরিবি হঠাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন, এমনটা ভাবলে ভুলই হবে। সুতরাং ভারত কিন্তু ধরে নেবে, পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের নকশা রচনার পরেই রাহুল গাঁধী এই পথে পা বাড়ালেন। প্রত্যাশার বহরটা অতএব আগের চেয়েও বেশি থাকবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কয়েক মাস দূরেই দেশের সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এবং রণকৌশলে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করছে সব পক্ষই। কংগ্রেস সভাপতি কিন্তু পর পর দুটো বড় ঘোষণা করলেন। প্রথমটি হল, প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার ঘোষণা। পরিবারতন্ত্র সংক্রান্ত অভিযোগ, সমালোচনা, নিন্দা, কটাক্ষ, শ্লেষ যতই উড়ে আসুক প্রতিপক্ষের দিক থেকে, এ কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, রাজনীতিতে প্রিয়ঙ্কার অভিষেক ঘটিয়ে গোটা দেশকে চমকে দিয়েছেন রাহুল। সিদ্ধান্ত যে সময়োচিত তা নিয়েও কোনও সংশয় নেই। রাহুলের দ্বিতীয় সুবৃহত্ ঘোষণাটা এল, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির আকারে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের দরিদ্র অংশের জন্য ন্যূনতম উপার্জনের নিশ্চয়তা সরকার দেবে বলে যে অঙ্গীকার রাহুল গাঁধী করলেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তার চেয়েও বড় কোনও প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিতে পারবে বলে মনে হয় না। এর চেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রয়োজনও বোধহয় হয় না। যে অঙ্গীকার রাহুল গাঁধী করলেন সেই অঙ্গীকার যদি দেশবাসীর বিশ্বাস অর্জন করতে পারে, তা হলে রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী অশ্বকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের ‘গরিবি হঠাও’, ক্ষমতায় এলে গরিবদের ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা, ঘোষণা রাহুলের

তবে মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি কিন্তু একটা বা পর পর কয়েকটা নির্বাচনে সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক কয়েকটা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন রাহুল গাঁধী। দারিদ্র দূরীকরণের এক অভূতপূর্ব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনটাতেও তিনি সফল হবেন বলে ধরে নেওয়া যাক। সেই সম্ভাব্য সাফল্যের পরেও কিন্তু শেষ হবে না আখ্যানটা। বরং সেখান থেকেই আখ্যানটা মূল পর্বে প্রবেশ করবে। সেই মূল পর্বে অনেক কিছু প্রমাণ করতে হবে রাহুল গাঁধীকে। যে কটাক্ষ ফিরে এসেছিল ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হঠাও’ স্লোগানের দিকে, সেই একই গোত্রের কটাক্ষ রাহুল গাঁধীর এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির দিকেও ফিরিয়ে দেবে না তো ইতিহাস? তেমন কোনও অবকাশ রাহুল গাঁধী তৈরি করবেন না তো? দেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে একটা বিরল স্বপ্ন দেখালেন কংগ্রেস সভাপতি। স্বপ্ন পূরণ না হলে কিন্তু রুক্ষ্ম রাজনৈতিক আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আশা করব, সবটা জেনে এবং বুঝে নেওয়ার পরেই কংগ্রেস সভাপতি ঘোষণাটা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE