প্রায় একই রকম একটা ছবি তৈরি হয়েছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হার বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি। আমরা উদ্বেগ এবং আগ্রহ নিয়ে নজর রেখেছিলাম ঘটনাপ্রবাহে। কিন্তু প্রায় একই রকম ঘটনা কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতেও যে ঘটবে, তেমনটা কল্পনার সুদূর পরাহত পরিসরেও আসেনি।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার বরিষ্ঠ বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে অনাস্থা প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতির প্রতি। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পীঠস্থানে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে না, অভিযোগ করলেন তাঁরা। এই ধারা বহাল থাকলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে না দেশে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন চার বিচারপতি।
এই দৃশ্যপট কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধু নজিরবিহীন বললে অবশ্য তাৎপর্যটাই অধরা থেকে যায়। এই দৃশ্যপট আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকও। গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিচার বিভাগ। ভারতীয় বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং কর্তব্যনিষ্ঠাই আইনসভাকে বিপথগামী হতে দেয়নি এ যাবৎ। ভারতীয় বিচার বিভাগের দার্ঢ্য এবং ঋজুতাই প্রশাসনকে আনখশির দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে দেয়নি এখনও। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণের শ্রদ্ধা-সম্ভ্রম তাই অনেকটাই। সেই বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পীঠস্থানকে ঘিরে যে অভূতপূর্ব বিতর্কের মেঘ ঘনাল, তাতে অনেক কিছুই ঝাপসা, অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট হয়ে উঠল। এই সঙ্কট শুধু সুপ্রিম কোর্টের সঙ্কট নয়, এই সঙ্কট শুধু বিচার বিভাগের সঙ্কট, এ হল গোটা জাতির সঙ্কট।