Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অসদিচ্ছার পরিণাম 

ঘটনা হইল, পূর্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করিয়াছিল যে বায়ুদূষণ ভারতের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ। এই বৎসরের গোড়াতেও দিল্লি এবং কলকাতাকে বিশেষ ভাবে দূষিত বলিয়া চিহ্নিত করা হইয়াছে।

—ছবি রয়টার্স।

—ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

বায়ুদূষণ এবং তৎসংক্রান্ত জলবায়ু পরিবর্তনের পশ্চাতে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কারণ থাকিতে পারে। কিন্তু ভারতে ইদানীং তাহার মাত্রাছাড়া বৃদ্ধির প্রধান কারণটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। সুতরাং রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত অধিবেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ অনুরোধ করিয়াছেন যে, ভারতে এই বিষয়গুলির মোকাবিলার প্রতিশ্রুতিটি রাজনৈতিক তরফ হইতেই আসুক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব লইয়া তাহার মূল্যায়ন প্রকাশ করিয়াছে। সেখানে বলা হইয়াছে, ভারত অত্যধিক বায়ুদূষণের মোকাবিলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা লইয়াছে ঠিকই। কিন্তু তাহাকে কার্যে পরিণত করিবার গতিটি বহু গুণে বৃদ্ধি করা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাটিকে জোরদার করার সময় আসিয়াছে।

ঘটনা হইল, পূর্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করিয়াছিল যে বায়ুদূষণ ভারতের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ। এই বৎসরের গোড়াতেও দিল্লি এবং কলকাতাকে বিশেষ ভাবে দূষিত বলিয়া চিহ্নিত করা হইয়াছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা দূর করিতে প্রশাসনের তরফ হইতে যে আপৎকালীন দ্রুততায় পদক্ষেপ করিতে হইত, তাহা ঘটে নাই। জলবায়ু পরিবর্তন লইয়া সরকারি বিবৃতি মিলিয়াছে, কিন্তু কাজ অগ্রসর হয় নাই। প্রতি বৎসর শীতের শুরুতে দিল্লি যে দূষণের আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে, তাহাকে স্বয়ং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ‘গ্যাস চেম্বার’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। কিছু পদক্ষেপও করা হইয়াছে। যেমন, পরিবহণ ক্ষেত্রে জোড়-বিজোড় নীতির আমদানি, ধোঁয়াশা-রোধী বন্দুকের ব্যবহার ইত্যাদি। কিন্তু এই সব ব্যবস্থায় যে চমক ছাড়া কার্যকারিতা বিশেষ নাই, তাহা মোটামুটি প্রমাণিত। ইহার মধ্যে নির্বিঘ্নে চলিতেছে— কৃষকদের ফসল কাটিবার পর নাড়া জ্বালাইবার দায় লইয়া দিল্লি এবং হরিয়ানা সরকারের মধ্যে চাপানউতোর।

তবে কিনা, দিল্লি সরকার অন্তত নিয়মিত এই বিষয়ে শব্দ খরচ করিতেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কলিকাতা সেটুকু এখনও করিয়া উঠে নাই। সন্দেহ হয়, বায়ুদূষণ যে এই রাজ্যের গুরুতর দুশ্চিন্তার কারণ, সম্ভবত ইহা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কার্যক্রমে এখনও জায়গা পায় নাই। সুতরাং অবাধে বেআইনি ইটভাটা চলিতেছে, পুলিশের সম্মুখেই ছটপূজায় জলদূষণ হইতেছে, দীপাবলির রাতে বাজি পুড়িতেছে। আদালতের অবমাননার দায়ও সেই আমোদের নিকট গৌণ। নাড়া জ্বালাইবার ক্ষতিকর প্রভাব দিল্লি এবং হরিয়ানা সরকার মর্মে মর্মে উপলব্ধি করিয়াছে, এই দিকে সেই রেওয়াজ পশ্চিমবঙ্গে নূতন ভাবে জনপ্রিয় হইতেছে। এই সবের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা আদৌ অবগত কি না, সন্দেহ। সম্প্রতি চিকিৎসক এবং জলবায়ু বিশারদরা কলিকাতার মানুষকে শীত-প্রারম্ভে প্রাতর্ভ্রমণে নিষেধ করিয়াছেন। কারণ, এই সময়টিতেই দূষণ সর্বাধিক। তবে কিনা, বৃহত্তর দেশেই হউক, আর পশ্চিমবঙ্গেই হউক, দূষণ সৃষ্টির পশ্চাতে যে গোষ্ঠীগুলি দায়ী, তাহাদের লভ্যাংশের এক বৃহৎ অংশ তো রাজনৈতিক দলকে তুষ্ট করিবার কাজেই ব্যয় হয়। সুতরাং পরিবেশ দূষণ লইয়া পদক্ষেপ করা তো দূরস্থান, রাজনৈতিক দলগুলি শব্দ খরচই বা কেন করিবে? সুতরাং স্বাভাবিক বুদ্ধি বলিতেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঠিক জায়গাতে ঢিলটি ছুড়িলেও তাহাতে লাভের আশা শূন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution India Environment Political Will
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE