Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

প্রশাসন-পরিহাস

মণ্ডল মহাশয়ের শব্দে শালীনতার মাত্রা রাখা কেন যে কঠিন ছিল, সেই যুক্তিও দেওয়া হইয়াছে। তৃণমূলের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলিয়াছেন, বড্ড উত্তেজনা ছিল কিনা, তাই ওই সব কথা।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৩
Share: Save:

যিনি পুলিশকে বোম মারিতে চাহেন, কিংবা বিরোধী নেতাদের হাত-পা ভাঙিয়া দিতে চাহেন, তাঁহার ‘শব্দচয়ন’ লইয়া চিন্তার কারণ তো আছেই। তবে কিনা, আশ্চর্য যে এই মুহূর্তে ইহাই রাজ্যের শাসককুলের কাছে সর্বাপেক্ষা বড় সমস্যা। অনুব্রত মণ্ডলের শব্দের মধ্যে যে অশালীনতা ও বর্বরতা পরতে পরতে পরিস্ফুট, তাহাকে শাস্তি দেওয়ার ন্যূনতম পরিকল্পনা সরকারের নাই। বরং তাঁহাকে হয়তো শব্দচয়নের ক্লাস করিতে পরামর্শ দেওয়া হইবে, মন্ত্রিবর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় তেমনই ইঙ্গিত। মণ্ডল মহাশয়ের শব্দে শালীনতার মাত্রা রাখা কেন যে কঠিন ছিল, সেই যুক্তিও দেওয়া হইয়াছে। তৃণমূলের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলিয়াছেন, বড্ড উত্তেজনা ছিল কিনা, তাই ওই সব কথা। রাজনীতিকদের কাজই যদিও উত্তেজনা তৈরি করা ও উত্তেজনা সামাল দেওয়া, তাহার মধ্যে অশালীনতার অজুহাত থাকিতে পারে না: সে সব অবশ্যই তাঁহাদের দৃষ্টিতে অবান্তর নীতিকথা। পুলিশকে এতখানি হুমকি দিবার পরও এখানে নির্বিকার ভাবে ধরিয়া লওয়া হয় যে পুলিশই চুপচাপ থাকিয়া পরিস্থিতি সামলাইবে। পুলিশকে যিনি হুমকি দিতেছেন, বিরোধী নেতার উপর শারীরিক আক্রমণের ভয় দেখাইতেছেন, তাঁহাকে গ্রেফতার করা দূরস্থান, শাসনও করা হইবে না। পুলিশের ়কর্তারা প্রশাসনের দস্তুর জানেন। তাই তাঁহারা মুখে কুলুপ আঁটিয়া হাত গুটাইয়া থাকেন।

কর্তারা যাহাই বলুন, জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা যে নেতার এই অমার্জিত অশালীন এবং অসাংবিধানিক হুমকিতে অপমানিত এবং রুষ্ট বোধ করিতেছেন, তাহা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। স্বাভাবিক। দিনের পর দিন যে ভাবে পুলিশকে তাহার স্বাভাবিক শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি করিতে দেওয়া হয় না, কেননা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিতেছেন স্বয়ং সরকারি নেতারা— তাহাতে পুলিশ কর্মীদের মনোবল ঠিক থাকা অসম্ভব। জনসমাজে তাঁহারাই সমালোচিত হন, আবার উপর হইতে ‘চাপ’ আসিয়া তাঁহাদেরই হাত-পা বাঁধিয়া ফেলে। পুলিশের বিভিন্ন স্তরে অপ্রসন্নতা যে তীব্র মাত্রায় পৌঁছাইতেছে, তাহার দায় একান্ত ভাবে পুলিশ দফতর এবং সার্বিক প্রশাসনব্যবস্থাকেই লইতে হইবে। পশ্চিমবঙ্গকে তাঁহারা এমন জায়গায় নামাইয়া দিয়াছেন যে এখানে সকলে ভুলিয়া গিয়াছে— সরকারি কর্মীকে তাঁহার নির্দিষ্ট কাজ করিতে বাধা দেওয়া একটি সম্পূর্ণ বেআইনি আচরণ। বে-আইন এখন
এ রাজ্যের প্রাত্যহিক দস্তুর, বাংলার গণতন্ত্রের চাল ও চলন।

অনুব্রত মণ্ডল এখনও কেমন করিয়া গারদের বাহিরে আছেন, পশ্চিমবঙ্গবাসী সেই প্রশ্ন করিতেই পারেন। একের পর এক ক্ষেত্রে একক ভাবে তিনি ভয়াবহ বে-আইনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়া কেবল তৃণমূল সরকারের পরিচয় দিতেছেন না, বাংলার সমাজের নিম্নগামিতার সূচক হিসাবেও উদ্ভাসিত হইতেছেন। বিরোধী নেতাদের চুপ করাইবার জন্য এ রাজ্যে যে কোনও স্তরে নামা যায়, যে কোনও রকম হুমকি দেওয়া যায়, শারীরিক নিগ্রহের ভয় দেখাইয়া ভাঙচুর করিয়া মানুষের জীবন দুর্বিষহ করিয়া দিবার প্রতিজ্ঞা শোনা যায়। জনপ্রতিনিধিরাও যদি এ ভাবে হেনস্তা হন, তবে তো প্রতিনিধিত্বের গণতন্ত্র একটি পরিহাস মাত্র। সরকার কি তাহা বোঝে না? নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়িবার দৃষ্টান্ত এই রাজ্যের শাসকবৃন্দ আগেও দেখাইয়াছেন। এখনও দেখাইতেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal Threat Police democracy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE