Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

এই ধোঁয়াশা বিজেপির ক্ষতিই করবে

গণতন্ত্র কিন্তু বার বার পরীক্ষা নেয়। গণতন্ত্রের রণাঙ্গনটা হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধের জন্য নয়, এ রণাঙ্গনে ধারণার সঙ্গে ধারণার যুদ্ধ হয়।

বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র নিয়ে অভিযোগ দেশের নানা প্রান্ত থেকেই উঠছে।

বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র নিয়ে অভিযোগ দেশের নানা প্রান্ত থেকেই উঠছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

রণাঙ্গনে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকা যে কোনও যোদ্ধার জন্য অত্যন্ত জরুরি। দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং সক্ষমতাকে হাতিয়ার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা— রণনীতি এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের রণাঙ্গনে বিজেপি উল্টোটাই ঘটাল। নির্বাচনের স্বচ্ছতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই নিশানা করছিল বিজেপিকে। ভোট মেটার ৪৮ ঘণ্টা পরে সেই প্রশ্ন আরও জোরদার ভাবে তোলার সুযোগ পেয়ে গেল কংগ্রেস।

ভোট মিটে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে বেশ কিছু ভোটযন্ত্র কালেকশন সেন্টারে পৌঁছল মধ্যপ্রদেশে। কোন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এল ভোটযন্ত্রগুলো? এল রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কেন্দ্র থেকে। যে বাসে করে ভোটযন্ত্রগুলো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছল নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে, সেই বাসে কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল না বলে অভিযোগ উঠল। ভোটযন্ত্র যেখানে থাকার কথা, সেখানকার সিসিটিভি দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল বলেও অভিযোগ উঠল। নির্বাচন কমিশন সে অভিযোগ স্বীকারও করল। আবহটা আদ্যন্ত অস্বচ্ছ হয়ে পড়ল না কি?

বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র নিয়ে অভিযোগ দেশের নানা প্রান্ত থেকেই উঠছে। যন্ত্রে কারচুপি করে বিজেপি নির্বাচন জিতছে বলে একাধিক বিরোধী দল বেশ কিছু দিন ধরে অভিযোগ করছে। ভোটযন্ত্রে আদৌ কারচুপি করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় বিস্তর। ভোটযন্ত্রে কারচুপি করা যায়, এমনটা প্রমাণ করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন দলকে একটি পরীক্ষণ শিবিরে আহ্বানও জানিয়েছিল। কোনও দলই অকাট্য প্রমাণ দিতে পারেনি যে, ভোটযন্ত্রে কারচুপি করে নির্বাচন জেতা সম্ভব। কিন্তু তা সত্ত্বেও অভিযোগটা বার বার তোলা হচ্ছে। কংগ্রেস থেকে সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি থেকে আপ, তৃণমূল থেকে আরজেডি— বিভিন্ন দল বার বার দাবি করছে যে, ভোটযন্ত্রে কারচুপি করা যায়। অতএব ভোটযন্ত্রের বা নির্বাচনের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গটা বিজেপিকে একটু হলেও ব্যাকফুটে ঠেলে দিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হিসেবে দেখা হচ্ছে যে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে, সেই পাঁচ রাজ্যের ভোটে অস্বচ্ছতার কোনও অভিযোগ নিজেদের বিরুদ্ধে উঠতে দেওয়া উচিত ছিল না বিজেপির। প্রশ্নাতীতভাবে স্বচ্ছ এক নির্বাচনের মাপকাঠিতে নিজেদের ওজনটা মেপে দেখিয়ে দেওয়া বিজেপি নেতৃত্বের কর্তব্য ছিল। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ কাঙ্খিত দিশার বিপরীতে গড়াল। স্বচ্ছতার বদলে পাওয়া গেল শুধুই ধোঁয়াশা। ভোট মেটার ৪৮ ঘণ্টা পরে ইভিএম যথাস্থানে পৌঁছনো, রেজিস্ট্রেশন নম্বরবিহীন বাস, সিসিটিভি বন্ধ হয়ে যাওয়া— এ সবে ধোঁয়াশা ছাড়া আ কিছুই তৈরি হয় না।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গণতন্ত্র কিন্তু বার বার পরীক্ষা নেয়। গণতন্ত্রের রণাঙ্গনটা হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধের জন্য নয়, এ রণাঙ্গনে ধারণার সঙ্গে ধারণার যুদ্ধ হয়। মধ্যপ্রদেশে ভোট মিটে যাওয়ার পরে বিজেপির সম্পর্কে কী ধারণা তৈরি হল, তাতে এই ভোটের ফলাফল প্রভাবিত হবে না। কিন্তু আগেই বলেছি, গণতন্ত্র বার বার পরীক্ষা নেয়। অতএব সেমিফাইনালে ধারণাটা খারাপ হয়ে গেলে, ফাইনালে গিয়ে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা বহাল রাখা বা ভোটযন্ত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য, বিজেপির নয়। কিন্তু যে প্রশাসন এবং যে পরিকাঠামো ব্যবহার করে কমিশন নির্বাচন করায়, সেই প্রশাসনে এবং পরিকাঠামোয় শাসক দলের প্রভাব থেকেই যায়। তাই ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার দায় শাসক দলেরও কম নেই। এ সত্য বিজেপি নেতৃত্ব নিশ্চয়ই জানেন। তা সত্ত্বেও নির্বাচনী অস্বচ্ছতার অভিযোগটাকে নিশ্চিহ্ন কর দিতে পারলেন না তাঁরা।

আরও পড়ুন: স্ট্রং রুমে বন্ধ ছিল সিসিটিভি, মানল কমিশন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE