কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশ। ফাইল চিত্র।
পঞ্জিকা জানিয়েছিল, দেবীর গমন এ বার চতুর্দোলায়। শাস্ত্রমতে এহেন প্রস্থান খুব শুভ নয়। এই তত্ত্বের সঙ্গে অনেকে হয়তো পঞ্জাবের ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রতীকী সাযুজ্য খোঁজার চেষ্টা করবেন। সে সব নিখাদ ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক চর্চায় যদি নাও যাই, তা হলেও স্বীকার করতেই হবে যে, উত্সবের শেষ প্রহর সুখকর হল না।
রেলওয়ে ট্র্যাকের উপরে দশহরা পালনের জমায়েত এবং সেই জমায়েত ছিন্নভিন্ন করে এক ট্রেনের ছুটে যাওয়া উত্সবের শেষ তারিখে মৃত্যুর মিছিল নামিয়েছে। ভয়াবহ দুর্ঘটনাটার খবর শুনে শিউরে উঠতে হয়েছে। মন ভারাক্রান্ত হয়েছে, গোটা দেশে বিষণ্ণতার ছায়া নেমেছে। কী ভাবে ঘটে গেল এমন মর্মান্তিক কাণ্ড! কোথাও কি চরম অসতর্কতা ছিল? কারও তরফে কি কর্তব্যে সাঙ্ঘাতিক গাফিলতি ছিল? এমন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উত্তর খোঁজার চেষ্টাও চলছে। তবে এই বিষাদের মধ্যেও খানিকটা স্বস্তির প্রদীপ জ্বালাতে পেরেছে কলকাতা পুলিশ। কর্তব্যে গাফিলতির জেরেই পঞ্জাবে এতগুলো প্রাণ চলে গেল বলে একটি তত্ত্ব খাড়া করছেন অনেকে যখন, তখন পুজোর কলকাতায় পুলিশের কর্তব্যপরায়ণতার প্রশংসা করতেই হচ্ছে।
দুর্গোত্সব এবং কলকাতা প্রায় সমার্থক। এই দেবীপক্ষে গোটা দেশেই উত্সব পালিত হয়— কোথাও দুর্গাপুজো হিসেবে, কোথাও নবরাত্রি, কোথাও শুধু দশহরা। কিন্তু উত্সবের সবচেয়ে আকুল চেহারাটার দেখা মেলে এ সময় কলকাতাতেই। দুর্গোত্সবের ভরকেন্দ্র যেন কলকাতা। স্বাভাবিকভাবেই কূলপ্লাবি উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় গোটা শহর, জনপ্লাবন আছড়ে পড়ে মহানগরের প্রান্তে প্রান্তে। এই বিপুল সমারোহকে সুস্থ রাখা, উত্সবকে নির্বিঘ্ন রাখা, পথ রুদ্ধ না করেও জনপ্লাবনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু গত বেশ কয়েকটা বছরের মতো এ বারও কলকাতা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে সামলে রাখল পরিস্থিতি, মোটের উপর নিরাপদেই কাটল উত্সব।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশের দক্ষ পথ-সঞ্চালনা বিশেষ ভাবে সংশাযোগ্য। আয়তন, জনসংখ্যা, যানবাহনের সংখ্যার অনুপাতে রাস্তার সংখ্যা বা পরিমাণ যে কলকাতায় অনেকটাই কম, তা সুবিদিত। ফলে কলকাতার সড়ক পরিবহণকে মসৃণ ভাবে সচল রাখা সারা বছরই বেশ কঠিন কাজ। পুজোর কলকাতায় পরিস্থিতি আরও দুরুহ হয়ে ওঠে। কিন্তু দেবীর বোধন থেকে শুরু করে বিসর্জন (দশমী) পর্যন্ত যে অসামান্য তত্পরতায় ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সামলাল পুলিশ, উত্সবের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে সেটাও একটা।
আরও পড়ুন: বিসর্জনের প্রথমার্ধে পাশ নম্বর দিচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা
আরও পড়ুন: রাবণ-দহনে মগ্ন জনতাকে পিষে দিল ট্রেন, মৃত ৬১, দায় নিল না কেউই!
শহরকে নিরাপদ-নির্বিঘ্ন রাখা, উত্সবে ট্র্যাফিক মসৃণ রাখা তো কলকাতা পুলিশের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। যে কর্তব্যের জন্য ওঁরা বেতন নিয়ে থাকেন, সেই কর্তব্যের জন্যই আবার প্রশংসা প্রাপ্য কেন? কেউ এমন প্রশ্ন তুলতেই পারেন। সে প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়— কর্তব্যে গাফিলতির জন্য যদি সমালোচনা বা নিন্দা কারও প্রাপ্য হয়, তা হলে কর্তব্য সুসম্পন্ন করার জন্য প্রশংসায় ক্ষতি কী? বিশেষত কর্তব্যপরায়ণতা ভুলে গা বাঁচানোর যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়াদের সাগরের মাঝে কলকাতা পুলিশের এই তত্পরতা আলাদা করে চোখে পড়ে বই কি! এ তত্পরতা, এই কর্তব্যপরায়ণতা সাময়িক, না কি স্থায়ী, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু উত্সবের দিনগুলোয় পরিবার-পরিজন, উচ্ছ্বাস-উল্লাস ভুলে উদয়াস্ত যাঁরা মেতে রইলেন কর্তব্যের উত্সবে এবং অন্য সকলের জন্য উত্সবকে আরও সুন্দর করে তুললেন, একটা কুর্নিশ তাঁদের অবশ্যই প্রাপ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy