পাঁচ রাজ্যে বিজেপি ধরাশায়ী। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়িলেন উর্জিত পটেল। তাঁহার পরিবর্তে আসিলেন শক্তিকান্ত দাস— নোট বাতিলের সাফল্যে যাঁহার উচ্ছ্বাস এক বৎসর পরেও অম্লান ছিল। তবু সেনসেক্স অদম্য। রাজনৈতিক ময়দানে বিন্দুমাত্র অস্থিরতা দেখিলেই এত দিন যে সূচক মুখ থুবড়াইয়া পড়িত, গত তিন দিন তাহার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত। হইল কী? রাতের আঁধারে কোনও পরি আসিয়া অর্থনীতির হাল শুধরাইয়া দিয়া গেল নাকি? জিডিপি-র পরিসংখ্যান না ভাঁড়াইয়াও নরেন্দ্র মোদীর জমানা আগাইয়া থাকিল? শিল্পক্ষেত্রে মূলধন নির্মাণের হার রাতারাতি বাড়িয়া গেল? কিছুই যখন হয় নাই, পাঁচ রাজ্যে সেই বিজেপির হাঁড়ির হাল হওয়ার পরও তবে সূচক চড়িতেছে কোন সাহসে? কেহ বলিতে পারেন, বাজার আসলে বিজেপির রাজনৈতিক মূলধনের ক্ষয়কে আত্মস্থ করিয়া ফেলিয়াছে। ধরিয়াই লইয়াছে, দিল্লির মসনদে নরেন্দ্র মোদীর দিন হাতে গোনা। এই পর্যবেক্ষণটি কত দূর সত্য, সময় বলিবে। কিন্তু, রাজনীতি ও অর্থনীতির দুনিয়ায় টালমাটালের মধ্যেও সূচকের ঊর্ধ্বগতির তাৎপর্য বিপুল।
দুর্জনে বলিবে, আরও অনেকেই দেওয়াল লিখন পড়িতেছেন। যেমন, উদয় কোটাক। তিনি প্রশ্ন করিয়াছেন, বড় অঙ্কের নোট বাতিল করাই যদি উদ্দেশ্য হইয়া থাকে, তবে ২০০০ টাকার নোট চালু করা হইল কেন? তাঁহার পূর্বে নোট বাতিল লইয়া আপত্তি করিয়াছিলেন বাজাজ অটোর কর্তা রাহুল বাজাজ ও রাজীব বাজাজ। দিনকতক পূর্বেই ডিমনিটাইজ়েশনকে ‘ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত’-এর তকমা দিয়া বোমা ফাটাইয়াছিলেন ভূতপূর্ব মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। সেখানেই থামেন নাই তিনি— ভারতে কৃষির দুরবস্থা হইতে জিডিপি-র গণনা পদ্ধতির অস্বচ্ছতা, বিবিধ প্রশ্নে সরকারের দিকে তির ছুড়িয়াছেন। তাঁহার পূর্বে অরবিন্দ পানাগড়িয়াও ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দর্শাইয়া পাততাড়ি গুটাইয়াছিলেন। ‘মোদীনমিকস’-এর আর এক প্রবক্তা সুরজিৎ ভাল্লাও রওয়ানা দিলেন। অর্থাৎ, কর্পোরেট দুনিয়া হইতে সরকারি দফতর, যে মহলগুলি ডিমনিটাইজ়েশনের কট্টরতম সমর্থক হিসাবে পরিচিত ছিল, সকলই বেসুরে বাজিতেছে। নরেন্দ্র মোদীর পার্শ্বে আছেন শুধু অরুণ জেটলি। শক্তিকান্ত দাসও আছেন নিশ্চয়, তবে তাঁহার এই তো শুরু।
ডিমনিটাইজ়েশন যে আত্মঘাতী, তাহা বুঝিতে এত সময় লাগিল কেন? এমন নহে যে তখন কথাটি কেহ বলেন নাই। মনমোহন সিংহের কথা না হয় বাদই দেওয়া যাউক। কিন্তু, কেনেথ রগফ্? আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ভূতপূর্ব অর্থনীতিবিদ, বড় নোটের প্রবল বিরোধী রগফ্ বলিয়াছিলেন, রাতারাতি প্রচলিত টাকার ৮৫ শতাংশ তুলিয়া লইবার, এবং আরও বড় মূল্যের নোট বাজারে ছাড়িবার মধ্যে অর্থনীতির কাণ্ডজ্ঞান অতি ক্ষীণ। নোবেলজয়ী রিচার্ড থেলার তুমুল বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছিলেন। ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের সিংহভাগও বলিয়াছিলেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনীতির চূড়ান্ত ক্ষতি করিবে। তাঁহাদের কাহারও কথাতেই যে উপলব্ধি হয় নাই, এখন হঠাৎ সেই বোধোদয়ের কারণ কী? দুর্জনে বলিবে, হাওয়া যে ঘুরিতেছে, কর্পোরেট কর্তারা তাহা টের পাইয়াছেন। অতঃপর, তখন যে কথাটি তাঁহারা বলিতে পারেন নাই, এখন বলিতেছেন। বিপদের ঝুঁকি কম বুঝিয়াই। ঘটনা হইল, নরেন্দ্র মোদী যে অর্থনীতির একের পর এক ক্ষতি করিয়া গিয়াছেন— আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মতে, দেউলিয়া বিধি এবং জিএসটি ব্যতীত এই জমানার একটি সিদ্ধান্তও অর্থনীতির পক্ষে লাভজনক হয় নাই— এই কথাটি মুখ ফুটিয়া বলিতে অনেকেরই বাধিয়াছে। দুর্জনে ফের বলিবে, যাহার স্বার্থ যত প্রবল, বাধাও তাহার তত বেশি। অরুণ জেটলি কেন এখনও ভাঙা নৌকায় সওয়ার, তাহা বিশদ ব্যাখ্যা না করিলেও চলিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy