Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

একই বৃন্তে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে যে আগ্রহ সত্যই আন্তরিক, তাঁহার বক্তব্যে তাহা পরিষ্কার। এক বিরাট বাংলাভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কথা তিনি অহঙ্কারের সহিত বলিয়াছেন, তাহাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের বিষয়ে তাঁহার কথায় প্রত্যয় স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে।

শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গুণ সম্ভবত ইহাই যে তাহা অতীতকে ছাপাইয়া ভবিষ্যৎ গড়িবার দিশা জোগায়। ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সামান্য জ্ঞানও বলিয়া দেয় যে, তাহাদের যৌথ ভবিষ্যৎ গড়া কেবল জরুরি নহে, তাহা গড়িবার পথটি বেশ সহজও বটে। যে কোনও দুইটি দেশের মৈত্রীর জন্য কঠিনতম ধাপ: পরস্পরের সংস্কৃতির সহিত পরিচিত হওয়া। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে সেই ধাপটি নূতন করিয়া তৈরির দরকার নাই। জন্মাবধি তাহারা নাড়ির টানে যুক্ত। দুই বাঙালির মধ্যে প্রবহমান ভাষা ও সংস্কৃতির সেই নাড়ির টানটিকে ব্যবহার করিয়া ভারত ও বাংলাদেশ সহজেই যৌথতার পরবর্তী ধাপগুলি গড়িয়া তুলিতে পারে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এতখানি সাযুজ্য থাকিতেও কেন ঢাকা ও দিল্লি/কলকাতার পারস্পরিক আদানপ্রদানের মঞ্চ আরও দৃঢ় হইল না? প্রশ্নের উত্তর: সরকারি ও বেসরকারি সমাজের মধ্যে আগ্রহের অভাব। নানা রকম মৌখিক অঙ্গীকার সত্ত্বেও আগ্রহের অভাবেই বার বার ভারত-বাংলাদেশ যৌথতার নানা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কঠিন হইয়াছে। শান্তিনিকেতনের নূতন বাংলাদেশ ভবন কি সেই বাধা কাটাইয়া পারস্পরিকতার মঞ্চ হইয়া উঠিতে পারিবে? গত সপ্তাহান্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একত্র ভবন উদ্‌যাপন দেখিতে দেখিতে এই সব সংশয় গ্রাস করিতেছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে যে আগ্রহ সত্যই আন্তরিক, তাঁহার বক্তব্যে তাহা পরিষ্কার। এক বিরাট বাংলাভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কথা তিনি অহঙ্কারের সহিত বলিয়াছেন, তাহাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের বিষয়ে তাঁহার কথায় প্রত্যয় স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। আক্ষেপের কথা, লজ্জারও— পশ্চিমবঙ্গে এই প্রত্যয় তুলনায় অনেক বেশি দুষ্প্রাপ্য। দুই দেশে বাংলার প্রতি প্রত্যয়ের এই পার্থক্য ভাবাইয়া তুলিবার মতো। মাতৃভাষাকে যে মাতৃদুগ্ধের সহিত তুলনা করা হয়, তাহা তো এই জন্যই যে মাতৃভাষার প্রকৃত শিক্ষা জাতির জীবনে অপরাপর অর্জনকেও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাইতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে হয়তো গোড়াতেই গলদ। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির সেই প্রকৃত শিক্ষা এ রাজ্যে হইতেছে কি না, কিংবা কত দূর হইতেছে, এই সব প্রশ্নের উত্তর কখনওই যথেষ্ট উৎসাহদায়ী নয়। সেই প্রকৃত শিক্ষা এখানে ডালপালা মেলিয়া বিস্তার পাইলে ভাষাগত টানেই বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ (তথা ভারত) নানা প্রয়াসে স্বাভাবিক ভাবে অংশী হইতে পারিত। দেখিবার বিষয়, এত দিন যাহা হয় নাই, এখন তাহা হয় কি না। নূতন ভবন কেবল অতীতের গৌরব-বিজ্ঞাপক সংগ্রহশালা হইয়া থাকে, না ভবিষ্যৎ গৌরবের ধাত্রীগৃহ হিসাবে পরিচিত হয়।

বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ যে কী ভাবে নিজের ভাষা-সংস্কৃতির আঙিনায় পিছাইয়া আছে, তাহা বুঝিবার জন্য বাংলা শব্দ ও ভাষার চর্চার দিকে তাকানো যাইতে পারে। সীমান্তের পূর্ব পারে যে পরিমাণ উদ্যোগ, নিবেদন ও সঙ্গতির সহিত এই চর্চা ঘটে, পশ্চিম তাহার সহিত তাল রাখিতে পারে কোথায়! অথচ আজও যদি একত্র প্রয়াসে এই কাজগুলি করা সম্ভব হইত, বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিতে তাহা নূতন জোয়ার আনিতে পারিত। নূতন যে কোনও প্রচেষ্টায় যদি এই সব কাজ একটু হইলেও উদ্দীপনা লাভ করে, তাহাতে কেবল দুই বাংলা নহে, দুই দেশও বিরাট ভাবে উপকৃত হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE