Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কর্কটক্রান্তি

ফেক নিউজ় আর ক্যানসার, উভয়ের চরিত্রে মিল প্রচুর। ছড়াইয়া পড়ার ধরন, ছড়াইবার তীব্রতা, এবং ক্ষতি করিবার ক্ষমতা— সবেতেই ফেক নিউজ় ক্যানসারের তুল্য। ফলে, যুদ্ধের ধরনটিও সমগোত্রীয় হওয়া বিধেয়। তাহার জন্য গোড়ায় বোঝা প্রয়োজন, ফেক নিউজ় কোনও একশৈলিক অস্তিত্ব নহে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৪
Share: Save:

এক জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। অপর জন সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যমের কর্ণধার। একই দিনে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে, হাজার মাইল দূরত্বের দুই শহর দুই জনকে কার্যত এক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাইয়া দিল। প্রশ্নটি এই রূপ: তাঁহারা কি বিজয়ী হইবার পথ জানেন? কলিকাতায় নোবেলজয়ী ক্যানসার গবেষক হ্যারল্ড এলিয়ট ভারমাসকে প্রশ্ন করিয়াছেন এক মৃত্যুপথযাত্রী ক্যানসার রোগী। জানিতে চাহিয়াছেন, এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই কত দূর অগ্রসর হইল? রোগটিকে হারাইবার সামর্থ্য কি অর্জন করিয়াছে বিজ্ঞান? দিল্লিতে টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসির নিকট রাহুল গাঁধী জানিতে চাহিলেন, ফেক নিউজ়-এর বিরুদ্ধে কি যুদ্ধজয় সম্ভব? নিতান্তই কি সমাপতন যে ভারমাস আর ডরসি-র উত্তরও কার্যত একই সুরে বাঁধা— উভয়েই জানাইয়াছেন, বহু চেষ্টা চলিতেছে, বহু ক্ষেত্রে অগ্রসরও হওয়া গিয়াছে, কিন্তু রোগগুলি এখনও অজেয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ, দুই জনেই বলিয়াছেন, এমন একটি কোনও ঔষধ নাই, যাহা প্রয়োগ করিলেই রোগটি সারিয়া যাইবে; এমন একটি কোনও বোতাম নাই, যাহা টিপিলেই সমস্যা উধাও হইবে। ভারমাস জানাইয়াছেন, ক্যানসার কোনও নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হয় না বলিয়াই এক চিকিৎসায় সব গোত্রের ক্যানসার সারে না। ডরসি বলিয়াছেন, ফেক নিউজ়-এর সমস্যাটি ‘মাল্টি ভেরিয়েব্‌ল’— তাহার রূপ একটিমাত্র নহে, বহু। ফলে, এক অস্ত্রে ফেক নিউজ়-জনিত সব সমস্যার সমাধান হইবে না।

সমাপতন নহে। ফেক নিউজ় আর ক্যানসার, উভয়ের চরিত্রে মিল প্রচুর। ছড়াইয়া পড়ার ধরন, ছড়াইবার তীব্রতা, এবং ক্ষতি করিবার ক্ষমতা— সবেতেই ফেক নিউজ় ক্যানসারের তুল্য। ফলে, যুদ্ধের ধরনটিও সমগোত্রীয় হওয়া বিধেয়। তাহার জন্য গোড়ায় বোঝা প্রয়োজন, ফেক নিউজ় কোনও একশৈলিক অস্তিত্ব নহে। তাহার বিবিধ রূপ— রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক/শ্রেণিভিত্তিক, ভাষাকেন্দ্রিক/রাজ্যকেন্দ্রিক, এমন বিবিধ খাপে যেমন তাহাকে ভাঙিয়া লওয়া সম্ভব, তেমনই বিভিন্ন খাপের সংমিশ্রণেও যে ফেক নিউজ় নির্মিত হয়, তাহা বোঝা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা যেমন দেখাইতেছে, দক্ষিণপন্থী উগ্র জাতীয়তাবাদী ফেক নিউজ় ভারতে সর্বাগ্রগণ্য। তাহাকে ভাঙিলে আবার হিন্দি আগ্রাসন, হিন্দু আগ্রাসনের ন্যায় চরিত্রগুলি স্পষ্ট হইবে। এমন বিবিধ চরিত্রের শত্রুর সহিত লড়িবার অস্ত্রও তো এক হইতে পারে না। ফলে, উপযুক্ত অস্ত্রের সন্ধান করিবার জন্য গোড়ায় ফেক নিউজ় সম্বন্ধে বিশদ এবং দ্রুত গবেষণা প্রয়োজন। এক কোষ হইতে অন্য কোষে কী ভাবে ছড়াইয়া পড়ে ক্যানসার, কী ভাবে এক অঙ্গের ক্যানসার অন্য অঙ্গে সঞ্চালিত হয়, জানিতে হইবে বইকি।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানাইয়াছে, গুজবের বিরুদ্ধে লড়িতে প্রতিটি জেলায় বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হইবে। ইহা একটি জরুরি, প্রশাসনিক অস্ত্র। আবার, ফেসবুকের ন্যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কোনও সংবাদের সূত্রটির ইতিবৃত্তান্ত দেখাইবার ব্যবস্থা করিয়াছে। সূত্রটি বিশ্বাসযোগ্য কি না, মানুষ চাহিলেই যাচাই করিয়া লইতে পারিবেন। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ফরওয়ার্ড করিবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি হইয়াছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির তরফে এই উদ্যোগ যথেষ্ট না হইতে পারে, জরুরি বটে। অস্বীকার করা চলিবে না, ফেক নিউজ়ের বাড়বাড়ন্ত যেমন অব্যাহত, মানুষের সচেতনতাও বাড়িতেছে। সোশ্যাল মিডিয়া যে প্রথাগত গণমাধ্যমগুলির বিকল্প হইতে পারে না, এই বিশ্বাসটি, ধীরে হইলেও, তৈরি হইতেছে। প্রকৃত অস্ত্র এই সচেতনতা। ক্যানসারের প্রতিষেধক টিকা নিশ্চয়ই বিজ্ঞানীরা খুঁজিয়া পাইবেন। ফেক নিউজ়ের টিকাটি পাওয়া গিয়াছে— সচেতনতা। এখন গণহারে টিকাকরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fake News Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE