বেনো জল ঢুকিয়াছে সোশ্যাল মিডিয়ার অন্দরে। ঢুকিতেছে অবিরত এবং প্রবল গতিতে। অবিলম্বে তাহাকে শোধন করিবার প্রয়োজন। কিন্তু শুধরাইবে কে? গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জানাইয়াছে, শোধনের কাজটি করিবে সমাজমাধ্যম স্বয়ং। তাহারা সমাজমাধ্যম মারফত একটি জনসচেতনতা আন্দোলন শুরু করিয়াছে। উদ্দেশ্য— বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গুজব এবং বিভ্রান্তিকর মিথ্যা সংবাদ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা গড়িয়া তোলা। বস্তুত, উদ্যোগটি শুরু হইয়াছিল নীলোৎপল দাস এবং অভিজিৎ নাথের মৃত্যুর পর হইতেই। সম্প্রতি অসমে এই দুই যুবকের মৃত্যু হইয়াছে জনরোষে। জনরোষের কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা রটিয়াছিল, তাঁহারা ছেলেধরা। এই রটনার বশীভূত হয় উত্তেজিত জনতা, দুই যুবক অসমের কার্বি আংলং জেলায় জলপ্রপাত দেখিয়া ফিরিবার পথে তাঁহাদের উপর হামলা চালায়। পরিণতি, মৃত্যু।
কোনও যুক্তিপ্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ সন্দেহের বশে হামলা এবং প্রাণ লইবার ঘটনা এই দেশে নূতন কিছু নহে। ভুয়া সংবাদকে সত্য বলিয়া মনে করিবার বিচিত্র সব বৃত্তান্ত তৈয়ারি হইয়াছে নানা উপলক্ষে। ইন্টারনেট বাহিত সমাজমাধ্যম নামক বস্তুটির আগমনের বহু পূর্ব হইতেই গুজব এবং বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াইয়া জনতাকে উদ্বেলিত করিবার ধারাটি চলিয়া আসিতেছে। স্মরণে আসিতে পারে, গণেশের দুধ খাইবার ঘটনাটি। অন্ধবিশ্বাসের সামনে বিজ্ঞান অন্তত তখনকার মতো ধুইয়া গিয়াছিল। এখনও প্রত্যন্ত গ্রামে ডাইনি সন্দেহ করিয়া পিটাইয়া মারিবার খবর প্রায়শই নজরে আসে। সেখানে শুধুমাত্র মুখের খবরই স্ফুলিঙ্গের কাজটি সার্থক ভাবে করিয়া থাকে। সমাজমাধ্যম এই আগুন ছড়াইবার গতি অকল্পনীয় ভাবে বাড়াইয়া দিয়াছে। তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণিকেও সেই গুজবের আওতায় লইয়া আসিয়াছে। সুযোগসন্ধানীরা জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে, এমনকি সামাজিক সুস্থিতিকে ভাঙিবার লক্ষ্যে তাহারা অনেক সময়ই অন্যায় ভাবে সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করিতেছে। অর্ধসত্য, অসত্য সংবাদ পরিবেশন এবং মিথ্যা ছবি প্রদর্শনের মধ্য দিয়া গোষ্ঠীসংঘর্ষ বাধাইতেও তাহারা পিছপা হয় না।
এই ধরনের হীন মানসিকতা আটকাইবার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সমস্যা হইল, সমাজমাধ্যমের মধ্যে লুকাইয়া থাকা বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধিবার কাজটি দুঃসাধ্য, কার্যত অসাধ্য। আইন করিয়া কিছুটা হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামাজিক মাধ্যমকে আইন করিয়া বাঁধিবার পথটি অবাঞ্ছিত। এই যুগে বসিয়া সমাজমাধ্যমের অস্তিত্বকে তুচ্ছ করাও সম্ভব নহে। তবে উপায়? গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একটি সুপথ দেখাইয়াছেন। সামাজিক মাধ্যমকেই ব্যবহার করিতে হইবে বেনো জল দূর করিবার কাজে। অশুভ শক্তি যে ভাবে মিথ্যা প্রচার করিয়া জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করিতেছে, একই উপায়ে শুভ শক্তিকে জোটবদ্ধ হইতে হইবে সেই অপপ্রচার ঠেকাইবারই লক্ষ্য লইয়া। ব্যাপক প্রচার চালাইতে হইবে যাহাতে সোশ্যাল মিডিয়ার যে কোনও খবরকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করিবার পরিবর্তে সাধারণ যুক্তি এবং নিজ অভিজ্ঞতাকে মানুষ কাজে লাগাইতে পারে। ইহারই নাম বিষে বিষক্ষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy