Advertisement
E-Paper

শেষ নাহি?

যদি সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে তাহাই হয়, তবে বলিতেই হইবে, এক জনকে মৃত বলিয়া ধরিয়া লইবার পর কিছু ক্ষণ সে বুঝিতে পারে, চারি পাশের মানুষেরা বলিতেছে যে সে মরিয়া গিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৩১

বি জ্ঞানীরা জানাইলেন, মৃত্যুর পরেও কিছু ক্ষণ চৈতন্য থাকিয়া যায়। বহু রোগী, যাঁহাদের হৃৎস্পন্দন বন্ধ হইয়া গিয়াছিল, কিন্তু কিছু ক্ষণ চেষ্টার পর তাহা ফিরিয়া আসিয়াছিল, তাঁহাদের সহিত কথা বলিয়া জানা গিয়াছে, তাঁহারা চারি পাশের কথাবার্তা শুনিতে পাইতেছিলেন, অনেকে কী ঘটিতেছে তাহা দেখিতেও পাইতেছিলেন। নার্সিং হোমের কর্মী, নার্স ও ডাক্তারদের সহিত কথা বলিয়া জানা গিয়াছে, এই বিবরণগুলি সত্য। কিন্তু হৃৎস্পন্দন থামিয়া গেলে, মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বন্ধ হইয়া যায়, এবং ইহার পর মস্তিষ্ক আর কিছু বুঝিতে বা ভাবিতে পারে বলিয়া সাধারণত বিশ্বাস করা হয় না। আবার ২০১৩ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়াছিল, কিছু ইঁদুরের ক্ষেত্রে, হৎস্পন্দন বন্ধ হইয়া যাইবার পরেই, অর্থাৎ চিকিৎসাবিদ্যার অভিধানে যাহাকে মৃত্যু বলা হইবে তাহার পরমুহূর্তেই, মস্তিষ্কে একটি অতি-সচেতনতার বিস্ফোরণ ঘটিয়া যায়। যদি সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে তাহাই হয়, তবে বলিতেই হইবে, এক জনকে মৃত বলিয়া ধরিয়া লইবার পর কিছু ক্ষণ সে বুঝিতে পারে, চারি পাশের মানুষেরা বলিতেছে যে সে মরিয়া গিয়াছে। হয়তো নার্সেরা দৌড়াদৌড়ি করিতেছে, বা ডাক্তারেরা ঝুঁকিয়া পড়িয়া তাহাকে পরীক্ষা করিতেছে ও হতাশ হইয়া মাথা নাড়িতেছে। বা, মৃত্যু বাড়িতে হইলে, আত্মীয়-পরিজন চিৎকার করিয়া তাহাকে ়ডাকিতেছে, কাঁদিতেছে। কিংবা, কাহারও নিতান্ত দুর্ভাগ্য হইলে, সন্তান বা ভ্রাতা দুই হাত তুলিয়া নাচিতে আরম্ভ করিতেছে ও ‘আপদ গিয়াছে’ মর্মে উল্লাস প্রকাশ করিতেছে। যাহাই হউক, লোকটি বুঝিতেছে, সে মরিয়া গিয়াছে। অর্থাৎ ওই সময়টুকুর জন্য, তাহা কয়েক সেকেন্ড হউক আর এক মিনিট, সে বুঝিতে পারিতেছে, সে ভূত। অতীত। ‘ছিল’ হইয়া গিয়াছে। নিজের মৃত্যু বুঝিতে পারার অধিক ভয়াবহ অনুভূতি আর কী হইতে পারে? মানুষের কি তবে মরিয়াও রক্ষা নাই, সেই বোধটুকুও কড়ায়-গন্ডায় বুঝিয়া ও চরম ধাক্কা খাইয়া, তাহার পরে যাইতে হইবে?

মৃত্যুভয় সকলকেই কখনও না কখনও কাবু করিয়া ফেলে, কেহ বহু বৎসর ধরিয়া প্রায়ই মৃত্যুর কথা ভাবিতে থাকে ও সিঁটাইয়া থাকে। শুনা যায় পাবলো পিকাসো নাকি মৃত্যুকে প্রায় সংক্রামক ভাবিয়া ভয় পাইতেন এবং আত্মীয়বন্ধুর অন্ত্যেষ্টিতেও যাইতে চাহিতেন না। কাহারও ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ইহা চালিকাশক্তির ভূমিকাও পালন করে, অর্থাৎ, মরিয়া যাইবার পূর্বে যত পারি কাজ করিয়া যাই, যাহাতে লোকে আমাকে মনে রাখিতে বাধ্য হয়, এই ভাবিয়াও অনেকে কর্মে ঝাঁপাইয়া পড়ে। অনেকের মতে, মানুষের সকল কাজই মৃত্যুভয়কে ঠেকাইয়া রাখিবার প্রয়াস ব্যতীত আর কিছুই নহে। কিন্তু সাধারণ মানুষ অধিকাংশ সময়েই মনে করেন, মরিতে যখন হইবেই তাহা লইয়া বেশি ভাবিয়া লাভ নাই, কেবল মরিবার সময় শারীরিক কষ্ট না পাইলেই হইল। তাঁহারা হয়তো ভাবেন, মৃত্যু হইলে তাহা তো আমি টের পাইব না, অন্যে পাইবে। কিন্তু এই বার যদি প্রমাণিত হইয়া যায়, আমাদের চৈতন্য মৃত্যুর চেতনাও গিলাইয়া ছাড়িবে, তবে মৃত্যুভয় বহু গুণ বর্ধিত হইল। সাধারণত মৃত্যু হইতে কেহ ফিরিয়া আসিয়া তাহার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেয় না, ভূতেরা কঙ্কালসার হাত বাড়াইয়া ভয় দেখাইতেই ব্যস্ত থাকে, দার্শনিক আলোচনায় অংশ লইবার উৎসাহ তাহাদের মধ্যে লক্ষিত হয় না। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের যে বিবরণগুলি গ্রন্থে থাকে, যেখানে এক সুড়ঙ্গের শেষে নীলাভ আলোকের আখ্যান বর্ণিত হয়, তাহা খুব বিশ্বাস্য নহে। অন্তত বিজ্ঞানীরা তাহাকে আমল দেন না। তাই এত দিন অন্তত বহু মানুষ এইটুকু ভাবিয়া নিশ্চিন্ত ছিলেন, মৃত্যুর পর কিছু নাই, উহা এক বৃহৎ নেতি। কিন্তু অনন্ত নিদ্রা শুরু হইবার পর কিছু ক্ষণ পর্যন্ত প্রবল জাগ্রত ভাব যদি ঠেলিয়া উঠে, ‘এই সারিয়াছে, আমি তবে নিশ্চিত ভাবে মরিলাম’ এবং ‘হায় হায় ডাক্তার যখন বলিতেছে তখন তো আর কোনওই আশা নাই, সমাপ্ত লিখা পরদা পড়িয়া গেল’ চিন্তাগুলির প্লাবন বহিতে থাকে, তাহা হইলে মহা মুশকিল। যদি যুগপৎ মনে হয় ‘যখন সব বুঝিতে পারিতেছি, তখন এই ব্যাটা আমায় মৃত বলিতেছে কী করিয়া? ডাক্তারগুলি কি কিছুই পড়াশুনা করে না? ইহারা কি তবে আমায় জীবন্ত পুড়াইয়া দিবে?’ তবে দুই পরস্পরবিরোধী অনুভূতির ঠোক্কর লাগিয়া সময়টুকু প্রবল দুর্বিষহ। খুব কম মানুষই, ‘আরিব্বাস, মরিয়াও বাঁচিয়া আছি, এ তো মহা রঙ্গ!’ ভাবিয়া মস্তিষ্কে মুচকি চাপিবেন। বিজ্ঞান ক্রমাগত অপ্রিয় সত্যভাষণ হইতে কয় দিন ছুটি লইতে পারে না?

যৎকিঞ্চিৎ

অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চাইতে পারে, কিন্তু বাকি সব মানুষই বোধহয় টেররিস্ট হতে চেয়েছিল। নিদেনপক্ষে ক্লিন্ট ইস্টউড। নইলে প্রকাণ্ড শব্দ করে সক্কলের পিলে চমকে দিলে নিজের মধ্যে নিখাদ বীরত্বের ফোয়ারা উপচে ওঠে কেন? হাজার বারণ সত্ত্বেও শব্দবাজি রমরমিয়ে রাজত্ব করে, কারণ ‘আগুন নিয়ে খেলতে পারি, আমি কি গালিখোর? চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, পটকা যেথা জোর!’ মর্মে তড়িৎ-চার্জ এসে নত-গেরস্থর অহংকে চাঙ্গা করে তোলে। উৎসবের কাজই তো ফ্যান্টাসি-পূরণ।

sensation Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy