সুপ্রিম কোর্ট
ভারতীয় রাজনীতির চলন যে অভিমুখে, তাহাতে গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের উপর মানুষের ভরসা চটিয়াছে। অতি দুঃখজনক, কিন্তু বাস্তব হইল, রাজনৈতিক সমাজের নিকট মানুষ আর নৈতিকতা প্রত্যাশা করে না। শাসনবিভাগের উপরও নহে, কারণ রাজনৈতিক শ্রেণির অঙ্গুলিহেলনে চলাই দেশের আমলাতন্ত্রের নিয়ম হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন, এবং তাঁহারা নিয়মটিকেই আরও স্পষ্ট করিয়া দেন। অতএব, ভরসা বলিতে বিচারবিভাগ। যে কোনও অন্যায়ের প্রতিকার চাহিয়া শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হইলে ন্যায়বিচার মিলিবে, ভারতীয় গণতন্ত্রে এ হেন একটি বিশ্বাস এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। অকারণে নহে। রাষ্ট্রের নিকট যে নিরাপত্তা, সুযোগ নাগরিকের প্রাপ্য, বহু ক্ষেত্রেই তাহা আদায় করিতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ভিন্ন উপায় থাকে না। রাজনৈতিক শ্রেণিকে নাগরিকের প্রতি ন্যায়বিধান করিতে বাধ্য করিয়াছে আদালত, বহু বার। ফলে, সাধারণ মানুষের চক্ষে সুপ্রিম কোর্ট কেবলমাত্র দেশের শীর্ষ আদালত নহে, রাষ্ট্রীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনও লড়াইয়ে মানুষের মোক্ষমতম হাতিয়ার। এমন একটি প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতা যাহাকে দমন করিতে পারে না, কোনও লোভ যাহাকে ন্যায্যতার পথ হইতে সরাইয়া আনিতে পারে না। এমন প্রতিষ্ঠানের উপরই তো নাগরিকের ভরসা। শেষ ভরসা।
এক শত ত্রিশ কোটি মানুষের এই ভরসার ভার বহন করা সহজ নহে। সেই কাজের একটি প্রধান দিক হইল, সাধারণ মানুষের চোখে নিজেদের নৈতিক অবস্থানটিকে কখনও নষ্ট না হইতে দেওয়া। অনস্বীকার্য, ভারতে বিচারপতিরা সেই কাজে বহুলাংশে সফল। তবুও, অবসরগ্রহণের পরে, বিশেষ করিয়া তাহার অব্যবহিত পরেই যদি কোনও বিচারপতি সরকারের দ্বারা কোনও নূতন পদে নিযুক্ত হন, তবে কেহ ভাবিতে পারেন, এই নিযুক্তি সরকারের তরফে কোনও প্রতিদান নহে তো? সরকারের প্রতি নমনীয় অবস্থান গ্রহণের প্রতিদান? অবসরগ্রহণের পরেই বিচারপতি আদর্শকুমার গয়ালের জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের ঘটনায় প্রশ্নগুলি উঠিতেছে। পূর্বেও বিচারপতি পি সদাশিবমের কেরলের রাজ্যপাল হওয়ায় বা বিচারপতি এ কে অগ্রবালের জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ায় এই প্রশ্নগুলির অবকাশ তৈয়ারি হইয়াছিল।
বিচারবিভাগকে বা সংশ্লিষ্ট বিচারকদেরও অনৈতিকতার দায়ে দোষী করিবার প্রশ্নই নাই। অবসরগ্রহণের পর সরকারি পদে নিযুক্ত হওয়ায় কোনও আইনি বাধাও নাই। কিন্তু, নৈতিকতার স্থান আইনের ঊর্ধ্বে। অবসরগ্রহণের পর অন্তত কয়েক বৎসর যদি তাঁহারা কোনও সরকারি পদ গ্রহণে সম্মত না হন, সাধারণ মানুষের চক্ষে তাঁহাদের নৈতিক অবস্থানটি প্রশ্নাতীত থাকে। এই বিষয়ে শুধুমাত্র মহামান্য বিচারপতিদের নৈতিকতার বোধের নিকটই আবেদন জানানো চলে। প্রসঙ্গত, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর জানাইয়া দিয়াছেন, কোনও সরকারি পদ গ্রহণ করিবেন না। বিচারপতি জোসেফ কুরিয়নও অনুরূপ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। নিরপেক্ষতার, নৈতিকতার এই উজ্জ্বল অভিজ্ঞানগুলি আজও তৈয়ারি হয়, তৈয়ারি হইয়া চলিয়াছে। ভরসা বইকি। শেষ ভরসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy