Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

তথ্যের সন্ধানে

মন্ত্রী সান্ত্রি আমলারা জানেন, তাঁহাদের কাজ অন্যের নিকট জবাব তলব করা, আপন কাজ বা অ-কাজের জন্য জবাবদিহি কখনওই তাঁহাদের দায় নহে!

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০০:১৬
Share: Save:

গাছে তুলিয়া মই কাড়িতে রাষ্ট্রের জুড়ি নাই। নাগরিকের নূতন নূতন অধিকার রচনা করে আইনসভা। অচিরে নাগরিক বোঝে, কর্তাদের ঘরে ঢুকিবার জো নাই। তথ্যের অধিকার আইনের ক্ষেত্রে এই নিয়মে ব্যতিক্রম হইবে কেন? হইতে পারে, রাজস্থানের কৃষক-শ্রমিকেরা প্রখর গ্রীষ্মে পথ অবরোধ করিয়া নাগরিকের তথ্য পাইবার অধিকার আদায় করিয়াছে। তাই বলিয়া সরকার কি তাহার ‘ধর্ম’ ভুলিয়াছে? কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজ্যের তথ্য কমিশনে রাশি রাশি পদ শূন্য। তাহা লইয়া নালিশ হইয়াছিল শীর্ষ আদালতে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করিয়াছে, এত শূন্য পদ লইয়া কমিশন কাজ করিবে কী করিয়া? ইহার যথার্থ উত্তর জানে নাগরিক। তাহা এই যে, তথ্য কমিশন নিয়মিত কাজ করিয়া নাগরিককে তথ্য জোগাইবার পথ মসৃণ করুক, তাহা প্রায় কোনও সরকার চাহে না। নির্বাচনে জনসমর্থন পাইবার অর্থ শাসক দলের সকল কাজে প্রশ্নহীন সমর্থন। মন্ত্রী সান্ত্রি আমলারা জানেন, তাঁহাদের কাজ অন্যের নিকট জবাব তলব করা, আপন কাজ বা অ-কাজের জন্য জবাবদিহি কখনওই তাঁহাদের দায় নহে!

তথ্য কমিশনের প্রতি সকল রাজনৈতিক দলের সমান তাচ্ছিল্য। সুপ্রিম কোর্ট যে আটটি রাজ্যের বক্তব্য তলব করিয়াছে, তাহার দুইটি ভারতীয় জনতা পার্টির অধীনে (গুজরাত ও মহারাষ্ট্র)। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অপর ছয়টি রাজ্য বিরোধী নানা দলের অধীনে। প্রতিটি রাজ্যেই কমিশনার না থাকিবার ফলে তথ্যের জন্য আবেদনের পাহাড় জমিতেছে। মহারাষ্ট্রে রাজ্য তথ্য কমিশনে চল্লিশ হাজার আবেদন প্রতীক্ষারত, অথচ চারটি কমিশনারের পদ শূন্য। কর্নাটকে ছয়টি পদ শূন্য, তেত্রিশ হাজার আবেদন জমিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি তথৈবচ। এক জন মাত্র কমিশনার থাকায় মাঝে মাঝেই কমিশনের কাজ স্থগিত হইয়া যায়। একটি সমীক্ষার হিসাব, এমন চলিলে এই রাজ্যে আজ তথ্য না পাইবার অভিযোগ করিলে প্রতিকার মিলিবে তেতাল্লিশ বৎসর পরে। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের নিকট তেইশ হাজারেরও অধিক আবেদন জমিয়াছে। মনে রাখিতে হইবে, বিভাগীয় আধিকারিকের নিকট তথ্যের দাবি প্রত্যাখ্যাত হইলে তবেই রাজ্য কিংবা কেন্দ্রে আবেদন করেন নাগরিক। সেখানে প্রতীক্ষা এত দীর্ঘ হইলে আবেদনই নিরর্থক হইয়া যায়। সর্বোপরি, সরকারি কর্মীদের নিকট এই বার্তা যায় যে, তথ্য না জানাইলে কোনও ক্ষতি নাই। নাগরিকের প্রতি সরকারের অবিচারের প্রতিকার আগেও হয় নাই। আজ নূতন আইন, নূতন অধিকার রচনা করিয়াও তাহা হইবার নয়।

কমিশনারের পদ শূন্য ফেলিয়া রাখা নাগরিকের তথ্য-বঞ্চনার একটি উপায়। অপর পদ্ধতি, শাসক দলের অতি ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন আমলাদের কমিশনার পদে নিয়োগ করা। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগের মতোই ‘উত্তম ফল’ মেলে তাহাতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পর পর তিন প্রাক্তন আমলাকে তথ্য কমিশনের সভাপতি করিয়াছে। নিশ্চিত ইহা কাকতালীয় যে, আজ অবধি তথ্য না দিবার অপরাধে এক জন সরকারি কর্তাকেও জরিমানা করা হয় নাই পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যবাসী অবশ্য ‘সচেতন’। তথ্যের আইন পাশ হইবার পরবর্তী এগারো বৎসরে মহারাষ্ট্রে চুয়ান্ন লক্ষ মানুষ তথ্যের আবেদন করিয়াছিলেন। এই রাজ্যে এক লক্ষ লোকও করেন নাই। তথ্য বটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme court Judgement Information commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE