Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

মুদ্রার এক পিঠে উৎসব, অন্য পিঠে বিস্তর লজ্জা

বিদ্যুতের গতি তীব্র, এমনটা বিজ্ঞান বলে। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগার পেশরার গ্রামের বাস্তবতা সে কথা বলছে না। গণতান্ত্রিক ভারত গঠিত হওয়ার পর পেশরার পর্যন্ত পৌঁছতে বিদ্যুৎ ৭০ বছর সময় নিয়ে ফেলেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share: Save:

আনন্দ এবং লজ্জার এমন আষ্টেপৃষ্ঠে অবস্থান বেশ বিরল। ঝাড়খণ্ডের এক গ্রামে উৎসব হল। অকারণে নয়, কোনও এক সুখবরের প্রেক্ষিতে তথা অপেক্ষাকৃত একটা সুসময়কে স্বাগত জানাতেই উৎসব হল। কিন্তু এই সুসময়টার জন্য আজও গোটা একটা গ্রামকে উৎসবে মেতে উঠতে দেখলে প্রশ্ন জাগে, এত দিন তা হলে কতটা দুঃসময়ের মধ্যে দিনযাপন হচ্ছিল?

বিদ্যুতের গতি তীব্র, এমনটা বিজ্ঞান বলে। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগার পেশরার গ্রামের বাস্তবতা সে কথা বলছে না। গণতান্ত্রিক ভারত গঠিত হওয়ার পর পেশরার পর্যন্ত পৌঁছতে বিদ্যুৎ ৭০ বছর সময় নিয়ে ফেলেছে। এর পরে কী ভাবে বলব, বিদ্যুতের গতি তীব্র? পেশরারের বাসিন্দারা অবশ্য বিদ্যুতের গতি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন না এখন। গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছনো অভাবনীয় ছিল, তাই উৎসব না করার কোনও কারণ তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আমরা এই উৎসবে সামিল হব কোন মুখে? স্বাধীনতার পর সাত দশক পেরিয়ে এসেও যখন দেখতে হয়, আধুনিক সভ্যতার এই নিতান্ত বুনিয়াদি চাহিদার পূরণও একদল সহনাগরিকের কাছে অভাবনীয় ছিল, তখন মুখ না লুকনোর কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় কি?

আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৭০ বছর পর বিদ্যুৎ এল গ্রামে, মাদল বাজিয়ে উৎসব

অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রায় এক দশক কাজ চালানোর পর ২০০৪ সালের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। হায়দরাবাদকে হাইটেক শহর করে তোলা চন্দ্রবাবু কী ভাবে হারলেন, সে নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সহমত হয়েছিলেন যে, চন্দ্রবাবু নায়ডু অন্ধ্রের মুখমণ্ডল হায়দরাবাদের পরিচর্যা ভালই করেছিলেন, কিন্তু শরীরের বাকি অংশের খেয়াল রাখেননি। মুখের ঔজ্জ্বল্য বেড়েছিল, কিন্তু শরীরটা রক্তশূন্য হয়ে পড়েছিল। সেই বিশ্লেষণটাকে আজ আবার খুব প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বিপ্লবের লক্ষ্যে সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়েছে যে দেশের সরকার, সেই দেশেরই বহু গ্রামে আজও বিদ্যুৎটা পৌঁছয়নি! ভাবতে অবাক লাগে বই কি?

স্বাধীনতার পর থেকে ৭০ বছর ধরে ভারত শুধু মুখমণ্ডলেরই পরিচর্যা করেছে, বাকি শরীরকে চরম অবহেলায় রেখেছে, এমন কথা অবশ্য বলা যাবে না। নগর-ভারত যে গতিতে এগিয়েছে, ততটা গতিতে না হলেও, গ্রাম-ভারতের অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আরও যত্নশীল হওয়া যে উচিত ছিল, দেশ গড়ার কাজটা যে আরও অনেক নিপুণ ভাবে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল, সে কথাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। অস্বীকার করা যাচ্ছে না বলেই উৎসব আর লজ্জা এমন পিঠোপিঠি অবস্থান করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE