লাঠি হাতে মায়ের উপরে চড়াও ছেলে। (মাঝে) ধরা পড়ার পরে ভুলুপ্রসাদ দেব। (ডান দিকে) ছেলের অত্যাচারের ক্ষতচিহ্ন দেখাচ্ছেন শান্তিপ্রভাদেবী। বৃহস্পতিবার, নিমতায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় ও নিজস্ব চিত্র
ভয়াবহ দৃশ্য। আক্ষরিক অর্থেই হৃদয় বিদীর্ণ করে দেওয়া ছবি। এত নির্মম, এত নিষ্ঠুর হতে পারে কেউ! মানুষ এমন হতে পারে! অনুভূতি, চেতনা, মনুষ্যত্ব— সব কিছু মুছে না গেলে কোনও সন্তান এমন ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালাতে পারেন মায়ের উপরে!
উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা এলাকার ছবি। অশীতিপর মা। সোজা হয়ে হাঁটতেও পারেন না আর। দৃষ্টি যেন ক্ষীণ হয়ে এসেছে। অস্থিচর্মসার দেহ। এমনই অশক্ত মায়ের উপরে দিনের পর দিন নির্যাতন চালাচ্ছেন মধ্যবয়সী ছেলে। অকথ্য দুর্ব্যবহার, প্রায় রোজ মারধর, নির্দয় লাঠিপেটা এবং লাঠির নির্দেশে চালিত হতে বাধ্য করা। অনেকটা যেন সার্কাসের অবাধ্য পশুকে শায়েস্তা করছেন দাপুটে রিং মাস্টার।
নির্মমতা এমনই সীমা ছাড়িয়েছিল এবং এতটাই প্রকাশ্যে চলছিল যে পাড়া-পড়শিও চুপ থাকতে পারেননি। কেউ প্রতিবাদ করেছেন, কেউ থামানোর চেষ্টা করেছেন অন্য ভাবে। কিন্তু কোনও এক দুর্বোধ্য আক্রোশে নির্যাতনে বদ্ধপরিকর থেকেছেন ছেলে। দরজায় তালা দিয়ে অশক্ত মায়ের সঙ্গে পাড়া-পড়শির দেখা-সাক্ষাৎ আটকে দিয়েছেন তিনি।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
প্রতিবেশীর মোবাইলে রেকর্ড হওয়া নির্যাতনের ভিডিয়ো পুলিশের হাতে না পৌঁছলে নির্মমতা কোনও দিন থামত কি না, বলা শক্ত। নির্মমতার কোলেই অশীতিপর শান্তিপ্রভা দেবকে ঢলে পড়তে হত কি না, জানা নেই। কিন্তু নির্যাতনকারী সন্তান কি বদলাবেন গ্রেফতারির পরেও?কোটি টাকার প্রশ্ন সেটাই।
শান্তিপ্রভা দেবের ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, উপযুক্ত দণ্ডই পাবেন তিনি, ভরসা করা যেতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোনও দণ্ড বা কোনও শিক্ষাই কি বদলাতে পারবে এই ছেলেকে? কী মারাত্মক ঘটনা দিনের পর দিন তিনি ঘটিয়ে গিয়েছেন, তা কি কোনও দিন উপলব্ধি করতে পারবেন ওই নির্যাতনকারী?
আরও পড়ুন: বৃদ্ধা মাকে এ ভাবে লাঠি দিয়ে পেটায়! ভিডিয়ো দেখলে চমকে যাবেন
যে অত্যাচার, যে নির্যাতনের ছবি দেখা গিয়েছে, কোনও স্বাভাবিক মানুষ নিজের মায়ের উপরে ওই রকম নির্যাতন করতে পারেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। লক্ষ বছরের মানব সভ্যতা, লক্ষ বছর ধরে ক্রমাগত মনুষ্যত্বের নানা গুণে একটু একটু করে ঋদ্ধ হওয়া। তার পরেও এমন অমানুষের মতো আচরণ! লক্ষ বছর ধরে মনুষ্যত্বের পথে হেঁটে আসার কোনও ছাপই নেই আমাদেরই কোনও সহ-নাগরিকের মধ্যে! তা হলে কি ঋদ্ধ হয়নি সভ্যতাটা? বুনিয়াদি উত্তরণটুকুও কি ঘটানো যায়নি সমাজের অনেক অংশেই? একটা ছবিই যেন লক্ষ বছর পিছিয়ে দেয়। কোনও একজনকে নয়, যেন পিছিয়ে দেয় গোটা সভ্যতাকেই। অথবা যেন লজ্জার কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হয়ে যায় মানবতার অস্তিত্বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy