Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেট-দুনিয়া ও নির্বাচন 

সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হইল। নির্বাচন কমিশনের সহিত আলোচনা করিয়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি স্বেচ্ছায় বিধি নির্মাণ করিয়াছে।

নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল সাইটগুলির ভূমিকা আদৌ কি সমর্থনযোগ্য? উঠছে প্রশ্ন। ছবি: শাটারস্টক।

নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল সাইটগুলির ভূমিকা আদৌ কি সমর্থনযোগ্য? উঠছে প্রশ্ন। ছবি: শাটারস্টক।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হইল। নির্বাচন কমিশনের সহিত আলোচনা করিয়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি স্বেচ্ছায় বিধি নির্মাণ করিয়াছে। অতঃপর ফেসবুকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিতে চাহিলে পরিচয় দিতে হইবে। হোয়াটসঅ্যাপে এক বারে কত জনকে বার্তা পাঠানো যাইবে, তাহার সীমা বাঁধিয়া দেওয়া হইয়াছে। নির্বাচনের আটচল্লিশ ঘণ্টা পূর্বে রাজনৈতিক প্রচার থামিবে সমাজমাধ্যমেও। বিধি লঙ্ঘন করিলে তিন ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা করিবে সংস্থাগুলি। এই উদ্যোগ সাধু। কিন্তু কেবল বিজ্ঞাপনদাতার পরিচয় তলব করিয়া নেট-দুনিয়া কতটা ‘স্বচ্ছ’ হইবে? সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অজ্ঞাতসারে তাঁহাদের বার্তা প্রাপ্তি ও প্রেরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আছে সমাজমাধ্যমের পরিচালকদের। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া নির্বাচকদের প্রভাবিত করিতেছে কিছু সংস্থা, এমন অভিযোগ বহুশ্রুত। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা যে ভাবে সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া জনমত প্রভাবিত করিবার অভিযোগে অভিযুক্ত, তাহা সারা বিশ্বের ভীতি উৎপাদন করিয়াছে। মার্কিন সেনেট রিপোর্ট বলিতেছে, সমাজমাধ্যম অভিযোগ জানাইবার ও বিবিধ উদ্যোগের সমন্বয় করিবার পরিকাঠামো হইতে নিয়ন্ত্রণের অস্ত্রে পরিণত, গণতন্ত্রে ও স্বৈরতন্ত্রে নেতারা সমান ভাবে তাহা ব্যবহার করিতেছেন।

সকল কৌশলকেই নিশ্চয় অবৈধ, অনৈতিক বলা চলে না। মানুষ স্বভাবতই কৌতুকবিলাসী। তাই বিদ্রুপবাক্য, ব্যঙ্গচিত্র, ‘মিম’ বা ক্ষুদ্র ভিডিয়োচিত্র বেশি ‘স্বীকৃতি’ পায়। ফলে সমাজমাধ্যমে তাহাদের গুরুত্ব বাড়িতে থাকে। অধিক ভোটারের নিকট পৌঁছাইবার তাগিদে নেতারাও ব্যক্তিগত আক্রমণ বাড়াইয়া দেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায় এবং নাগরিক স্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নগুলি ক্রমে লঘু হইয়া পড়ে। আসন্ন নির্বাচন তাহার দৃষ্টান্ত। প্রধান দলগুলি নিজ নিজ শীর্ষ নেতাকে বৃহত্তম ‘তারকা’ করিয়া তুলিতে চাহিতেছে। ইহাই তাহাদের নির্বাচনী কৌশল। তৎসহ বিরোধী নেতাকে ‘খলনায়ক’ করিতে তাহারা সর্বশক্তি ব্যয় করিতেছে। নির্বাচনী বিধি এই অবক্ষয় আটকাইতে পারিবে?

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভারতে সমাজমাধ্যমের ক্ষমতা অনুভূত হয় গত লোকসভা নির্বাচনে। নরেন্দ্র মোদী ‘ন-মো’ হইলেন, দলীয় প্রচার হইল ‘চায়ে পে চর্চা’, আন্দোলন পরিণত হইল ‘হ্যাশট্যাগ’ টুইট-ঝড়ে। রাজনৈতিক কর্মীর স্থান লইল ট্রোল-বাহিনী। তাহারা মেঘনাদের ন্যায় অদৃশ্য থাকিয়া বিদ্বেষ বর্ষণ করিতেছে। মোট নব্বই কোটি ভোটারের অন্তত অর্ধেক নেটসংযুক্ত। তাহার সদর্থক দিক, ছোট-বড় সকল নেতাই নিজের বক্তব্য প্রচার করিতে পারেন সামান্য খরচে। নাগরিকও দাবি জানাইতে পারেন। এই অর্থে সমাজমাধ্যম গণতন্ত্রকে সবল করিতেছে। কিন্তু সমস্যা, সমাজমাধ্যমের কারবারি মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, অনুমোদন-আপত্তির তথ্য ছাঁকিয়া কিছু সংখ্যা নিষ্কাশন করে। অতঃপর সুকৌশলী প্রচারে সেই সকল সংখ্যার হেরফের করিয়া ভোটের সংখ্যা বাড়াইতে চাহে। ভুল তথ্যে আবেগ উস্কাইয়া, ভীতি জাগাইয়া ভোটে পরিবর্তন, আর ভোটদাতার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকাইয়া ভোট আদায়, দুইটি বস্তুত একই গোত্রের অপরাধ। ইহাদের উৎস নাগরিকের প্রতি অশ্রদ্ধায়। সমাজমাধ্যমের এমন অপব্যবহার চলিলে গণতন্ত্র দুর্বল হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Election Indian Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE